সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১৩ অপরাহ্ন

কর্মকর্তারা থাকেন ভাড়া বাসায় সরকারি কোয়াটারে মাদক ব্যবসা ও মাদকসেবীদের আড্ডা

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২৬ Time View

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা: গাইবান্ধা শহরের বাংলাবাজার এলাকায় সরকারি কোয়াটার রয়েছে। এখানে রয়েছে চারটি দ্বিতল ও তিনতলা ভবন। মনোরম পরিবেশে বির্স্তীণ খেলার মাঠ। শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিরাপদ বাসস্থান। এমন পরিবেশেও এখানে কোন সরকারি কর্মকর্তা থাকেন না। ফলে ২৮ বছর ধরে ভবনগুলো পরিত্যক্ত হয়ে আছে। এ সুযোগে রাতে ভবনের ভিতরে মাদকব্যবসা, সেবন, জুয়াখেলা ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। গণপুর্ত বিভাগ বলছে, কোয়াটারে থাকলে কর্মকর্তাদের শতকরা ৪০ ভাগ বেতন কর্তন হয়। এরচেয়ে কম টাকায় বাইরে বাসা ভাড়া মিলে। তাই তারা কোয়াটারে থাকতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, কোয়াটারের তিনদিকে মজবুত সীমানা প্রাচীর। একদিকে প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলেছে দূবৃর্ত্তরা। ভিতরে দাঁড়িয়ে চারটি দ্বিত ও তিনতলা ভবন। মাঝখানে বিশাল খেলার মাঠ। ভবনগুলোতে কোন সরকারি কর্মকর্তা বসবাস করেন না। তারা থাকেন ভাড়া বাসায়। পরিত্যক্ত থাকায় জানালা-দরজা, আসবাবপত্র, লোহার জানালার রড চুরি গেছে। কক্ষের ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মলমুত্র, ময়লা-আর্বজনা। কোন কোন কক্ষে ফেন্সিডিলের বোতল পড়ে আছে। দুর্গন্ধে ভিতরে তেষ্ঠা দায়।

গাইবান্ধা গনপুর্ত বিভাগ সুত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে চার একর জমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের বসবাসে শহরের বাংলাবাজার এলাকায় এসব ভবন নির্মিত হয়। এখানে ললিতা, নন্দিতা, উত্তরা নামে তিনটি দ্বিতল ও সবিতা নামে একটি তিনতলা ভবন রয়েছে। এতে ব্যয় হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। একসময় এসব ভবনে বিভিন্ন বিভাগে চাকরিরত কর্মকর্তার আঠারটি পরিবার বসবাস করছিলেন। ১৯৯৫ সাল থেকে এখানে কর্মকর্তারা বসবাস করছেন না। ফলে র্দীঘ ২৮ বছর ধরে কোয়ার্টারগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।
এলাকাবাসি জানালেন, কোয়াটারগুলো এখন অপরাধিদের আস্তানা। রাতে ভবনের ভিতরে মাদকব্যবসা, সেবন, জুয়াখেলা ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। বাংলাবাজার এলাকার শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, একসময় কোয়ার্টারগুলোতে কর্মকর্তারা বসবাস করায় এলাকার পরিবেশ রমরমা ছিল। তাদের কারণে আশপাশে বসবাসকারিরা নিরাপদে ছিলেন। এখন রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ভবনের দরজা, জানালা, গ্রিল, লোহার পাইপসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি গেছে। পরিত্যক্ত থাকায় ভবনের ভিতর মাদকব্যবসা চলছে। অপরাধিদের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ায় কোয়াটারটি এখন এলাকাবাসির কাছে ভীতির সৃষ্টি করছে। এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা গণপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমি যোগদানের আগে থেকেই এখানকার মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি গেছে। বর্তমানে কোয়ার্টারে নৈশ প্রহরি রাখা হয়েছে।
বাংলাবাজার এলাকার অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবি মোহাম্মদ আলী বলেন, কোয়ার্টারের পূর্ব প্রান্তে সদর উপজেলা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, উত্তরে গণপূর্ত কার্যালয়, দক্ষিণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় এবং পশ্চিমে গাইবান্ধা আদর্শ কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে আবাসিক এলাকা। এরকম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত কোয়ার্টারে কর্মকর্তারা থাকেন না। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ দায়িত্বপ্রাপ্তরা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এবিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, সরকারি কোয়াটারে কর্মকর্তাদের থাকার জন্য জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার কর্মকর্তাদের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কাজ হচ্ছে না।
শহরের উপজেলা রোডের ব্যবসায়ী তামজিদুর মিয়া বলেন, প্রশাসনের গাফলাতির কারণে ফাঁকা ভবনে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে মাদকদ্রব্য বেচাকেনা চলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এখানে মাদকদ্রব্য সেবন করছেন। অসামাজিক কাজও চলছে। স্থানীয় উঠতি বয়সের যুবকরা বিপথগামি হচ্ছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে।

 

গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটি রয়েছে। পদাধিকারবলে কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এবং সদস্যসচিব গণপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। কমিটি কোয়ার্টারগুলো রক্ষণাবেক্ষনে কোন তদারকি করছে না। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, যেহেতু কোয়াটারে লোক থাকে না, সে কারণে আমরা রক্ষণাবেক্ষণও করছি না। এটা এখন ব্যবহারের অনোপুযোগী।

কোয়াটারটি এভাবেই পড়ে থাকবে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, কোয়াটারের উত্তর পাশে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় বিনোদন পার্ক করার প্রস্তাব অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে ওই অংশ পার্ক নির্মাণ করা হবে। বাকী অংশ আবাসিকের জন্য থাকবে। সেখানে কর্মকর্তাদের কোয়াটারে বসবাসে চাহিদা থাকলে এ বিষয়ে পরবর্তীতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
কোয়াটারে কেন থাকেন না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কোয়াটারে থাকলে মাসিক মুল বেতন স্কেলের শতকরা ৪০ ভাগ টাকা কর্তন করা হয়। এ হিসেবে একজন কর্মকর্তার বেতন স্কেল ৪০ হাজার হলে বাসাভাড়া কর্তন হবে ১৬ হাজার টাকা। পক্ষান্তরে গাইবান্ধায় চার থেকে ছয় হাজার টাকা হলেই উন্নতমানের বাসা ভাড়া পাওয়া যায়। এতে আমাদের টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এজন্য ভাড়া বাসায় বসবাস করছি।
কোয়াটারটি কাজে লাগানো প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, কর্মকর্তাদের বাসা নির্দিষ্ট থাকলে তারা থাক বা না থাক, বেতন থেকে তাদের ভাড়া কাটা হয়ে থাকে। যেমন জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের সরকারি বাসায় থাকা বাধ্যতামুলক। তারা না থাকলেও সরকার ভাড়া কেটে নেয়। ওই রকম সিষ্টেমে না গেলে কর্মকর্তারা কোয়াটারে থাকবেন না। তখন এটি কাজে লাগবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category