সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:২২ অপরাহ্ন

প্রথমবারই বাজিমাত চাকরি ছেড়ে ড্রাগন চাষ করে সফল সাদুল্লাপুরের কিবরিয়া

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৪ Time View

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গোলাম কিবরিয়ার (৩৬) বাড়ি গাইবান্ধার আরাজি জামালপুর গ্রামে। স্নাতকোত্তর পাস করেন মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে। ছয়বছর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। চাকরি জীবনে নিয়মের গন্ডিতে চলতে হয়েছে। সংসার চালাতে হয়েছে হিসাবের টাকায়। এসব তাঁর ভাল লাগেনি। তাই চাকরি ছেড়ে দেন। দেড়বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করেন। উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় চার লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ছয় লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেছেন। আরও একলাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। ড্রাগন চাষে প্রথমবারই তিনি বাজিমাত করেন। সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আরাজি জামালপুর গ্রাম। গ্রামেরই এক উচ্চশিক্ষিত যুবক গোলাম কিবরিয়া।
গাইবান্ধা শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দুরে আরাজি জামালপুর গ্রাম। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকৃতিঘেড়া পরিবেশ। নিভৃত ও নির্জন পরিবেশে কিবরিয়ার ড্রাগন ফলের বাগান। জমিজুড়ে মেলেছে ড্রাগন গাছের ডালপালা। ডালের ফাঁকে ফুল আকৃতির ড্রাগন উঁকি দিচ্ছে। শ্রমিকরা জমির পরিচর্যা করছেন। কিবরিয়া নিজেই পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করছেন।
ছবি তোলার সময় হাস্যজ্জল কিবরিয়া বললেন, জমিতে গেলে আনন্দে বুক ভড়ে যায়। শুধু ব্যবসার জন্য নয়, সমম্বিত কৃষির প্রতি আমার যথেষ্ট দুর্বলতা।
গোলাম কিবরিয়া ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। চাকরি ছেড়ে তিনি ওই সালে জৈব পদ্ধতিতে দেড়বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেন। ময়মনসিংহ জেলা থেকে চারা সংগ্রহ করেন। উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় চার লাখ টাকা। তিনবছর পর থেকে ফল পাওয়া শুরু করেন। একবার চারা লাগালে ১৫ থেকে ২০ বছল পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ছয়লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেন। এরমধ্যে গতবছর দুইলাখ এবং চলতি বছর চারলাখ। বাগানে এখন যে পরিমাণ ড্রাগন আছে, তা একলাখ টাকা বিক্রি করা যাবে। স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি ড্রাগন ২৫০-৩০০ বিক্রি করা হচ্ছে। এরমধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ ভোক্তা এবং ৩০ ভাগ পাইকারদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানান, ড্রাগন ফল রক্তশুণ্যতা কমাতে বেশি কাজ করে।
তাঁর সরবরাহ করা ড্রাগন দিয়ে স্থানীয় ফল ব্যবসায়িরা লাভবান হচ্ছেন। গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডের ট্রাফিক মোড় এলাকার ফলবিক্রেতা আবদুল জব্বার বলেন, আগে বিভিন্ন জেলা থেকে ড্রাগন আনতে পরিবহন খরচ বেশি পড়তো। এখন সাদুল্লাপুরে কম টাকায় ড্রাগন পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি ক্রেতারা তাজা ড্রাগন কম দামে পাচ্ছেন। আমরাও লাভবান হচ্ছি।

এদিকে গোলাম কিবরিয়া ড্রাগনের পাশাপাশি দুই বিঘায় মালটা, দুই বিঘায় কমলা, তিন বিঘায় আম এবং ৩০-৪০ বিঘায় কলা চাষ করেছেন। এসবের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে রয়েছে নানা জাতের শাক-সবজি ও নার্সারি।
এ ছাড়া বাগানের পাশেই গড়ে তুলেছেন খামার। তিনি খামারে শতাধিক ভেড়া-ছাগল, মুরগি পালন করছেন। তাঁর বাগানে উৎপাদিত ফল ও গাছের চারা বিক্রির জন্য তিনি জেলা শহরের পলাশপাড়ায় গড়ে তুলেছেন নার্সারি। গোলাম কিবরিয়া চাকরির আয়ের চেয়ে এখন কয়েকগুন বেশি উপার্জন করছেন। তাঁর বাগানে ১৫-১৬ জন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আগে কর্মস্থল থেকে বেতন-ভাতা নিতেন। এখন কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে প্রতিমাসে তিনিই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদান করেন। তার বাগানে কাজ করেন আরাজি জামালপুর গ্রামের শ্রমিক
সিরাজুল ইসলাম (৪৮) বলেন, আগে বছরের বেশিরভাগ সময়ে গ্রামে কাজ ছিল না। কাজ না পাওয়ায় কষ্ট হতো। এখন কর্মের নিশ্চয়তা হয়েছে।বেতনের পাশাপাশি পোশাকসহ চিকিৎসা সুবিধা ও ঈদ বোনাসও পাচ্ছি।
গোলাম কিবরিয়া বলেন, মানুষের মধ্যে ক্রমেই ড্রাগনের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে আমার বাগানেই ড্রাগন কিনতে আসছেন। তিনি বলেন, ড্রাগনের বাগান বড় আকারে করার উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে সমম্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলতে চাই। বর্তমানে কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, একজন বেকার যুবক চাকরির জন্য যে সময় ব্যয় করেন, সেই সময়ে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করলে চাকরির চেয়ে অনেক চাকরির চেয়ে বেশি লাভবান হতে পারবেন। আমি তার প্রমান।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, উপজেলায় ৯৬ বিঘা জমিতে ড্রাগনসহ নানা জাতের ফল ও ফুলের চাষ হয়েছে। ড্রাগন চাষে গোলাম কিবরিয়াকে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

গোলাম কিবরিয়া সাতবোন তিনভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়েছে। বড়ভাই আবদুল কাইয়ুম আইনজীবি, দ্বিতীয় ভাই জাহিদ হাসান ব্যবসায়ী। ২০০৪ সালে এসএসসি, ২০০৬ সালে এইচএসসি, ২০১০ সালে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং ২০১১ সালে মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর বাবা কছির উদ্দিন মন্ডল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি অনেক আগে মারা গেছেন। মা সৈয়দা সামসুনাহার একজন গৃহিনী। স্ত্রী তানজিনা আফরিন গৃহিনী। তাদের দুই মেয়ে। বড়মেয়ে আয়াত বিনতে কিবরিয়া প্লে গ্রুপে এবং ছোটমেয়ে নাজাত বিনতে কিবরিয়ার বয়স দুই। তাঁর স্ত্রী তানজিনা আফরিন বলেন, তিনি তাঁকে ড্রাগনসহ কৃষি কাজের জন্য অনুপ্রেরণা যোগান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category