সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতিতে আখড়ায় পরিনত

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।
  • Update Time : রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৫২ Time View

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস যেন দুর্নীতির আতুর ঘর। টাকা ছাড়া হচ্ছে না জমির দলিল। আর উৎস করের নামে টাকা আদায় করে, তা চলে যাচ্ছে অফিসের একটি চক্রের হাতে। ভুক্তভোগী একজন আইন মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ দিলে বিষয়টি সম্মুখে আসে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ জমির মূল্য অনুযায়ী পে-অর্ডার করলেও, দলিলে লেখা হয় কম।

আর তাতেই সন্দেহ হয় তার। আর সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায় ব্যাংকের হিসাবে পে-অর্ডার নগদায়ন করার সংখ্যাও অনেক। রায়গঞ্জ সাব রেজিষ্টার জানান, জাল জালিয়াতি চক্র এমনটা করতে পারে। তব তিনি এর সাথে জড়িত নন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জেলা রেজিষ্টারের।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানাযায়, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ক্ষিরতলা গ্রামের হাজী আসরাইল হোসেনের ছেলে মো: জাকির হোসেন জাকিরুল্লাহ তারা ৬ ভাই বোন। ওয়ারিশান সুত্রে পরিবারের ৬ জন জমিজমার মালিক হন তারা। সেটিই নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নিতেই দ্বারস্থ্য হন রায়গঞ্জ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে। কথা বলেন সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দৈনিক ৬০ টাকায় হাজিরার পিয়ন শাহাদতের সাথে। তিনিই দলিল লেখার জন্য নিয়ে যান দলিল লেখক রিজওয়ান রশিদের কাছে। রিজওয়ান রশিদ এই বন্টন নামা দলিলের জন্য সব মিলিয়ে জমির মূল্য দাড়ায় ৩ কোটি ১৪ লক্ষ ছেষট্টি হাজার টাকা।

সাব রেজিষ্টার সাগর দাস, অফিস পিয়ন শাহাদৎ ও দলিল লেখক রিজওয়ানের পরামর্শে তৃতীয় পক্ষ আব্দুল মান্নানের মাধ্যমে সরকারী ফি বাবদ সোনালী ব্যাংক থেকে পে অর্ডার করেন ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৬শ ৩০ টাকার। সে মোতাবেক দলিল সম্পাদনও হয়। কিন্তু বিপত্তি বাধে দলিলের নকল তোলার পর। সেখানে উৎস করে জায়গায় ৩১৫৩০ টাকা লেখা থাকায় সন্দেহ করেন জাকির হোসেনের।

পরের দিন জাকির হোসেন সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে গেলে কোন পাত্তা পায়না শাহাদৎ ও রেজওয়ানের কাছে। পরে সাংবাদিকদের সহযোগীতায় ব্যাংক স্টেস্টম্যান তুলে দেখাযায় তার পে-অডারের পুরো টাকা ক্যাশ করে তুলে নেয়া হয়েছে। সরকারের কোশাগারে জমা পরেনি একটি টাকাও। তখন তার পে-অডারের টাকার হদিস পাবার জন্য সহযো্গীতা চান সংবাদ কর্মীদের কাছে। আর অভিযোগ করেন আইন ও বিচার বিভাগ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিবের কাছেও। সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আইন অনুযায়ী ওয়ারিশায়ন বন্টন, দানপত্র দলিলে কোন উৎস করই দিতে হয়না। অথচো এই অফিসে সকল দলিলে নেয়া হয় উৎস কর। তাই সোনালী ব্যাংক থেকে গত এক মাসে সাব রেজিষ্ট্র অফিসের নামে ওয়ারিশায়ন বন্টন এবং দানপত্র দলিলে কোন উৎস করের পে অর্ডার ক্যাশ হয়েছে ১৬টি। যার মোট টাকার পরিমান ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৮৭০ টাকা। আর এভাবেই প্রতি মাসে এই অফিস থেকে ওয়ারিশায়ন বন্টন এবং দানপত্র দলিলের নামে নেয়া উৎস করের টাকা উত্তোলন করে বন্টন করে নেন এই চক্রটি।

আরেক ভুক্তভোগী মতিউর রাহমান জানান, ওয়ারিশ বন্টন নামায় ফি প্রয়োজন নেই এমন তথ্য আমাদের জানানেই। আমাদের কাছ থেকে প্রতারনা করে টাকা আত্মসাৎ করেছে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের একটি চক্রটি। আর এমন ঘটনা এখানে ঘটছে অহরহ। আমার পরিবারের ভাই বোনদের সাথে জমিজমা বন্টন দলিলে নেয়া হয়েছে উৎস কর অথেচো আজ জানতে পারলাম এই দলিলে কোন উৎস কর দিতে হয়না। আমি আমার পে-অর্ডারের টাকা ফেরৎ চাই।

এই চক্রের সদস্য রায়গঞ্জ রেজিষ্ট্রি অফিসের নকল নবিশ সিয়াম হোসেন বলেন, ভূল করে আমি উৎস করের বিষয়টি এই দলিলে উল্লেখ করেছি। আসলে ওয়ারিশায়ন বন্টন এবং দানপত্র দলিলের পে-অডারের কথা লিখতে হয়না। কারণ এই দলিলে কোন উৎস কর নেয়ার বিধান নেই।

আর পে অর্ডারকারী মান্নান বলেন, আমি পে অর্ডার তৈরী করলেও টাকা আমি নগদায়ন করেননি। আমাকে অফিসের পিয়ন শাহাদৎ আর দলিল লেখক রিজওয়ান যে ভাবে বলেছে সেই ভাবেই কাজ করেছি। টাকা উত্তোলন করে শাহাদতের কাছে দেয়া হয়েছে। এরপর কি হয়েছে আমি জানিনা।

আর দলিল লেখক রিজওয়ান রশিদ সাব রেজিষ্টারের সামনেই জানালেন, সাব রেজিষ্ট্রারের নির্দেশেরই তিনি উৎস করের পে অর্ডার করতে দলিল গ্রহিতাদের বলেছেন। দলিল শেষে পে-অর্ডার নগদায়ন করে সাব রেজিষ্টারকে দেয়া হয়েছে পরবির্তিতে এই টাকা কি হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে এই অফিসে উৎস কর ছাড়া কোন দলিল হয়না।

এই চক্রের মুলহোতা অফিস পিয়ন শাহাদৎ বলেন, পে অর্ডারের পেছনে সাব রেজিষ্ট্রারের আর পে-অর্ডার কারীর স্বাক্ষর থাকে আমি এ সবের কিছুই জানিনা। আমাকে স্যার যে ভাবে বলে আমি সেই ভাবেই কাজ করি। এখানে অনেক কিছুই হয় সব কিছু আপনাদের বলতে পারবো না।

রায়গঞ্জের সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, মুলত রেজিষ্ট্রি অফিসের হাতেগোনা কয়েকজন এই পে অর্ডারগুলো করেন। কখনো পে অর্ডার নগদায়নের প্রয়োজন হলে উনারাই আবেদন করে নিয়ে এসে নগদায়ন করেন। যদিও এই টাকা নগদায়ন করার বিধান কোন কাগজে নই। তবে সাবরেজিষ্টারের সাথে মৌখিক চুক্তিতে এগুলো করা হয়।

রায়গঞ্জ সাব রেজিষ্টার সাগর দাস বলেন, সপ্তাহে আমি দুদিন এখানে অফিস করার কারনে অফিস স্টাফদের উপরে আমার ভরসা করতে হয়। সে কারনে এখানে কোন চক্রও গড়ে উঠতে পারে। সেটি আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবো। আর ওয়ারিশায়ন বন্টন এবং দানপত্র দলিলের জন্য কখনই আমি উৎস কর নিতে বলিনি। কারন এই কর নেয়ার কোন বিধান নেই। কিভাবে পে-অর্ডার নগদায়ন করা হয় তা আমার জানানেই। আমি এই চক্রের সাথে জরিত না।

সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিষ্টার মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কদিন আগে এমন একটি অভিযোগের অনুলিপি আমি পেয়েছি। রায়গঞ্জ অফিসে ওয়ারিশায়ন বন্টন এবং দানপত্র দলিলের জন্য এক ভাগ উৎস কর নেয়া হয়। আসলে কোন ভাবেই এই কর নেয়ার বিধান নেই। আর সরকারী কোষাগারের জন্য পে-অর্ডার নগদায়ন কিভাবে করে আমার জানানেই। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জমির দলিল করতে আসা অল্প শিক্ষিত মানুষদের আইনের নানা দিক দেখিয়ে এমন করেই প্রতারনা চলছে জেলার অন্যান্য সাব রেজিষ্ট্রি অফিসগুলোতেও। এ থেকে পরিত্রাণ চান সাধারণ মানুষ। আর দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী ভূক্তভোগীদের।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category