উল্টো নিয়মে চলছে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর। সরকারী বিধি মোতাবেক কোন কর্মকমতা বা কর্মচারির বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে সেটি আমলে নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়ার রেওয়াজ বা নিয়ম রয়েছে। একই সাথে অভিযোগকারীকে যথাযথ আইনী সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ আছে।
কিন্তু নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে ঘটছে তার উল্টোটি। সিডিসিধারী একজন সিফেয়ার নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে প্রতিকার চাওয়ায় তাকে আইনী সুরক্ষা ও ন্যায় বিচার না দিয়ে উল্টো তার সিডিসি সনদ স্থগিত করে পেটে লাথি মারা হয়েছে। বিস্ময়কর এই ঘটনায় অবাক হয়েছেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের দেশ প্রেমিক কর্মকর্তা,কর্মচারি ও সচেতন দেশবাসী। গত ৮ জানুয়ারী ২০২৪ ইং তারিখে এক পত্রের মাধ্যমে অভিযোগকারীর সিডিসি নং- টি/৩০৮২৮ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এই অবৈধ আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য লিখিত আবেদন করলেই সেটি আমলে নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পিতা-মৃত মোহাম্মদ আলী মিঞা, পেশা-নাবিক, ঠিকানাঃ- বাসা- ফকির বাড়ী, গ্রাম- ওটরা, ডাকঘর- ওটরা, উজিরপুর-৮২২২, বরিশাল। তিনি সিডিসিধারী একজন সিফেয়ার। বহুবছর ধরে সুনামের সাথে সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত আছেন। তার সিডিসি বা নাবিক বই নং-টি/৩০৮২৮ যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত যার মেয়াদ২৬/১০/২০৩১ সাল পর্যন্ত নির্দ্ধারিত আছে।
তিনি গত ১৭/১২/২০২৩ ইং তারিখে সিনিয়র সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও মহাপরিচালক, নৌপরিবহণ অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করেন সরকারি ও বেসরকারি মেরিটাইম প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থী নাবিক (রেটিং) ভর্তির সমন্বিত পরীক্ষা নীতিমালা-২০২২ এবং সিডিসি প্রদানের নীতিমালা-২০১৮ এর অনুচ্ছেদ ৪ ও ৮ ভঙ্গ করে প্রি-সী স্পেশাল রেটিং র্কোস নামে নৌপরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত কোনও কোর্স না থাকা সত্ত্বেও এবং অনাবাসিক প্রি-সীর স্পেশাল রেটিং কোর্স ২০২৩ চালু করে সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূতভাবে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের করে নির্বাচিত ২০০ জনের প্রশিক্ষণ বন্ধ করা এবং এবং অত্র অনিয়ম ও নীতি বহির্ভূত কার্যক্রমের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন জানান।
জাহাজে চাকুরীর জন্য সিডিসি (নাবিকের সনদ) প্রয়োজন। সিডিসি একটি পাবলিক ডকুমেন্ট এবং বাংলাদেশের সিফেয়ারদের ৯৫ শতাংশ বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে চাকুরি করে থাকেন। তাই আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য স্বচ্ছতা অত্যন্ত জরুরী। বাংলাদেশের সিফেয়ারদের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।
গত ২০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে অনাবাসিক প্রি-সী স্পেশাল রেটিং কোর্স ২০২৩ চালু করে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে অযোগ্য ২০০ জনের প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেন যারা অর্থের বিনিময়ে তালিকায় বিশেষ বিবেচনায় নাম অর্ন্তভুক্ত করে প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন বলে জানা যায়। দেশের স্বার্থে এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও নাবিকের মান বজায় রাখার প্রয়োজনে তিনি সেই আবেদনটি করেন।
কিন্তু নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে তাকে সেই আবেদনটি প্রত্যাহারের জন্য অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেন এবং গত ২০/১২/২০২৩ ইং তারিখে পত্রের মাধ্যমে তাকে উপস্থিত হতে বলা হয়। কিন্তু তিনি কাগজপত্রসহ সশরীরে উপস্থিত হতে চাইলেও তাকে অফিসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় নাই। পরবর্তীতে তিনি বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে বিগত ২৭/১২/২০২৩ ইং তারিখে ডিমান্ড জাস্টিজ প্রদান করেন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করে অনিয়ম বন্ধের আবেদন জানান।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, ডিজি শিপিং উপরোক্ত অনিয়মের বিষয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই গত ০৮/০১/২০২৪ ইং তারিখে স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে অভিযোগকারী নাবিকের সিডিসি কেন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হবে না তার কারন দর্শাতে বলেন। যা সরকারি ডাকযোগে তিনি গত ১৬/১০/২০২৩ইং তারিখে প্রাপ্ত হন।
এই চিঠি প্রাপ্তির পর অনলাইনে চেক করে অভিযোগকারী তার সিডিসি’র বিবরণ খুঁজে পান নাই। অর্থাৎ সময় পার হবার পূর্বেই তার সিডিসি স্থগিত করা হয়েছে। ডিজি শিপিংয়ের এই বেআইনি কর্মকান্ডের ফলে অভিযোগকারী চাকুরীতে যোগদান করতে পারছেন না। অথচ: ডিজি শিপিং সরকারের কাছে নাবিকদের চাকুরীর ক্ষেত্র বৃদ্ধি করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অভিযোগকারী মনে করেন যে, অনিয়মের সাথে যুক্ত কর্মকর্তাদের বাঁচানোর জন্যেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাকে হয়রানি করার জন্য তার সিডিসি বে-আইনীভাবে স্থগিত করা হয়েছে। অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করাই তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগকারী এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, আমার কার্যক্রমের কারনে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সুনাম ক্ষুন্ন হয় নাই বরং সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে প্রকৃত দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিগনের নাম জনসম্মুখে চলে আসবে এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তর দুর্নীতি ও কলঙ্কমুক্ত হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিবাজদের জড়িত থাকারই প্রমান বহন করে।
বিষয়টি তিনি সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিমন্ত্রি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ঢাকা; চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকা; মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ঢাকা; প্রধানমন্ত্রির কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, ঢাকা; সিনিয়র সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ঢাকা; মহাপরিচালক, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, ঢাকা; ও প্রিন্সিপাল, ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, চট্রগ্রা কে অবহিত করেছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে গিয়েও চীফ নটিক্যাল অফিসার বা মহাপরিচালকের সাক্ষাত পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন