অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী মালবাহী নৌযানে একাধিক রেজিষ্ট্রেশন সনদ পাওয়া যাওয়ায় এমভি সাফিনা ই বাহার -১ ( ২৬৩৪৩) নামের নৌযানের রেজিস্ট্রেশন সনদ বাতিল করা হয়েছে। নৌযানটির রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছিলো চট্টগ্রাম নৌ বন্দরে। এ ব্যাপারে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক কর্তৃক গত ০২ জানুয়ারী রেজিষ্ট্রেশন ও সার্ভে কার্যক্রম বাতিল করে চিঠি জারি করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এমভি সফিনা-ই বাহার-১ নামের নৌযানটি চট্টগ্রামের সী বিচ এলাকায় পরিদর্শন কালে সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ারের সন্দেহ হলে নৌযানটির সার্ভে, রেজিষ্ট্রেশন পরীক্ষা করে দেখা যায় উক্ত নৌযানটির আরেকটি নারায়নগঞ্জ নৌ বন্দরের রেজিষ্ট্রেশন সনদ রয়েছে। নারায়নগঞ্জ নৌ বন্দরের রেজিষ্ট্রেশন সনদের মেয়াদ ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে। নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী নৌযানের বয়স ৪০ বছর পূর্ন হলে নৌযানটিকে স্ক্র্যাপ করে বাতিল ঘোষনা করতে হয়। কিন্তু নৌযান মালিক নৌযানটিকে স্ক্র্যাপ না করে চাতুরাতার মাধ্যমে নৌযানটির নতুন নকশা অনুমোদন করিয়ে আবার রেজিষ্ট্রেশন করে নেন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নৌযানটির মালিক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে, তথ্য গোপন করে নতুন রেজিষ্ট্রেশন করেছেন । এ নৌযানটি পরিদর্শন কালে সন্দেহ হলে আমি অনুসন্ধান করি এবং তদন্ত করে জানতে পারি নৌযানটি পুরনো। তৎক্ষনাৎ আমি ডিজি মহোদয়কে অবগত করি এবং উনার নির্দেশে রেজিষ্ট্রেশন বাতিলের সুপারিশ পত্র প্রেরণ করি।
মালিকের এমন প্রতারনার বিষয়ে জানতে চাইলে, মালিক জানান আমি অল্প শিক্ষিত মানুষ। জাহাজের যে কোন কাজের ব্যাপারে মতিঝিলের আলম নামের এক ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করি। আলম আমাকে বুদ্ধি দেয়, আমি যেনো জাহাজ না কেটে নতুন রেজিষ্ট্রেশন করি। এ ব্যাপারে সে আমাকে সহায়তা করবে। সে আমাকে জানায় তার ব্যক্তিগত ডিজাইন ফার্ম আছে, সেখান থেকে সে আমাকে কাজ করে দেবে। আমি সবকিছু শুনে জাহাজের কগজ করার জন্য তাকে দায়িত্ব দেই। আলম আমাকে সবকিছু করে দিছে। কিভাবে কি করেছে এর বেশি আমি জানি না। এ কাজ করার জন্য আলম আমার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে।
এ প্রতারণার ব্যাপারে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অভিযুক্ত আলম মতিঝিল পাড়ায় গেজিং আলম নামে পরিচিত। সে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারনার মাধ্যমে জাহাজের বিভিন্ন কাজ করে আসছে। মতিঝিলের একটি অফিসে গেজিং অপারেটর হিসেবে কাজ করার সুবাধে সে নৌযান মালিকদের সাথে পরিচিত হয় এবং নৌযানের গেজিং রিপোর্ট ও বুকলেট জালিয়াতি করে সে মালিকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
নৌযানের থিকনেস ভালো না হলেও মালিকদের ভয় ভীতি দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারের স্বাক্ষর জাল করে গেজিং রিপোর্ট প্রদান করতেন। একাধিক প্যানেল সুপারভাইজর এর অজান্তে তাদের স্বাক্ষর জাল করে স্ট্যাবিলিটি বুকলেট তৈরী করে মালিকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। একাধিক প্যানেল সুপারভাইজর আলমের এই সব প্রতারনার কথা স্বীকার করেন। সই জাল করে নকশা বিক্রি করে দেয়া, বেনামে বুকলেট প্রদান ও গেজিং রিপোর্ট জালিয়াতি সর্বত্রই আলমের নাম শুনা যায়।
দ্রত নকশা পাশ করিয়ে দেয়ার নাম করে মালিকদের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা নেয় সে। নকশা কমিটির মেম্বারদের টাকা দিতে হয় এই ভয় দেখিয়ে সে মালিকদের কাছে টাকা দাবি করে। নৌযান সার্ভে ও রেজিষ্ট্রেশন করার সময় সার্ভেয়ারদের নাম করেও সে টাকা আাদায় করে।
নৌযানের গেজিং, বুকলেট, নকশা, সার্ভে, রেজিষ্ট্রেশন জালিয়াতি করে আলম আজ প্রচুর বিত্ত বৈভবের মালিক বনে গেছেন। ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, গ্রামের বাড়ীতে ডুপ্লেক্স বাড়ী ও একাধিক নৌযানের মালিকানা রয়েছে গেজিং আলম নামে পরিচিত এই প্রতারকের। এছাড়াও মতিঝিলে তার মালিকানায় একটি ডিজাইন ফার্ম রয়েছে।
অনুসন্ধানকালে একাধিক নৌযান মালিক, ম্যানেজারদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আলম সকল প্রকার জালিয়াতি করতে পটু। সে কখনো নিজে স্বশরীরে কোন সার্ভে অফিসে যায় না, লোক মারফত তার দুই নম্বরী কাজ করিয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে গেজিং আলমের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
মন্তব্য করুন