গণপূর্ত ক্যাডারের ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. শহিদুল আলম চাকরিজীবনে বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন লিয়েনে (বিনা বেতনে দীর্ঘমেয়াদি ছুটি) বিভিন্ন দাতা সংস্থায় কাজ করে। তিনি লিয়েন নিয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) কর্মরত থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে সরকারি বেতন নেন বলে অভিযোগ করে এডিবির দুর্নীতি প্রতিরোধ শাখা। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি ভুল স্বীকার করে সরকারি অর্থ ফেরত দিয়েছিলেন। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে তিনি হাওয়া ভবনের বিশেষ আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হওযার সুযোগ পেয়েছিলেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ। কিন্তু সব অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে তিনি উল্টো পদোন্নতি বাগিয়েছেন। বর্তমানে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন ও সমন্বয়) এর চলতি দায়িত্বে। এখন নিয়ম লঙ্ঘন করে এবং পদোন্নতির শর্তপূরন ছাড়াই তাকে স্থায়ী ভাবে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য সম্প্রতি সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সংস্লিষ্টরা জানান, এসএসবির পদোন্নতি সংক্রান্ত নীতিমালায় প্রস্তাবিত কর্মকর্তার বিগত ৫ বছরের এসিআর এর সারসংক্ষেপ এবং ফিডার পদে ২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তুুু চলতি দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ২০১৫ সালের ১৬ জুন থেকে ২০২০ সালের ৮ জুন পর্যন্ত সময়ে লিয়েনে থাকায় ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের ৯ জুন পর্যন্ত সময়ের এসিআর নেই বলে এসএসবিতে পাঠানো সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে তার এসিআর রয়েছে মাত্র দুই বছরেরও কম সময়ের। তাছাড়া ফিডার পদ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতার নিয়ম থাকলেও যে সময়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে তখন তার এই পদে দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা পূর্ন হয়নি বলে সংস্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রস্তাবে অন্য তিনজন চলতি দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওম প্রকাশ নন্দী, কাজী ওয়াসিফ আহমেদ এবং কাজী মো. আবু হানিফ এর ৫ বছরের এসিআর রয়েছে এবং তারা তিন জনই ৫ বছরের বেশি সময় ধরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে স্থায়ী হয়েছেন। আর শহিদুল আলম দেশে ফিরে চাকরিতে যোগ দেওয়ার কিছু দিন পরে ২০২১ সালের ২৩ জুন নিয়ম বহির্ভুত ভাবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান বলে অভিযোগ রয়েছে। শহিদুল আলমের তিন বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চাকরি করা শহিদুল আলমকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে স্থায়ী করার জোর তদবির চলছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, লিয়েন কালীন সময়ে গণপূর্ত থেকেও বেতন ভাতা নিয়েছেন আবার বিদেশী কোম্পানীতে চাকুরী করে সেখান থেওে বেতন নিয়েছেন। যা সরকারি চাকুরী বিধির পরিপন্থি। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে ২০১৬ সালে লিয়েনকালীন সময়ে নেওয়া বেতন ভাতা ফেরত দিয়েছেন।
জানা গেছে, দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০২১ সালে বিদেশ থেকে ফিরে এসে তিনি গণপূর্তের প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেন এবং প্রধান প্রকৌশলী মো: শামীম আখতারকে ম্যানেজ করে তার ডান হাত বনে যান। তাকে প্রধান কার্যালয়ের অতি: প্রধান প্রকৌশলী (সমন্বয়) পদে পদায়ন করে দেওয়া হয় অসীম ক্ষমতা। গণপূর্তের প্রকৌশলীদের বদলী সমন্বয়ের দায়িত্ব পান তিনি। এরপর তার করা তালিকা মতই প্রকৌশলীদের বদলী করছেন প্রধান প্রকৌশলী মো: শামীম আখতার।
দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অসাদাচারণের জন্য গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শহীদুল আলমকে অপসারনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছিল গণপূর্ত অধিদফত ঠিকাদার সমিতি। গত ২২ মে সেগুনবাগিচায় পূর্ত ভবনে ঠিকাদার সমিতির একটি অবস্থান কর্মসূচি থেকে তার বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। কর্মসূচি শেষে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয় সমিতির পক্ষ থেকে।
ঠিকাদার সমিতি নেতারা অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চাকরি করা হাওয়া ভবনের লোক মো. শহিদুল আলম সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করছে। নানা প্রকল্প থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা শহীদুল আলম গণপূর্ত অধিদফতরের উন্নয়ন সহযোগী ঠিকাদারদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন। সবগুলো ডিভিশনে নিজস্ব ঠিকাদার নিয়োগ করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করে থাকেন যার সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বা মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশনাও নেই। এমনকি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় ঠিকাদার সমিতিকে পাশ কাটিয়ে নিজের পছন্দসই ঠিকাদারদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
অন্যদিকে সরকারি আদেশ অমান্য করে ২০২১ সালে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্দেশ্যে ১ দিনের বেতন কেটে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়েছিলেন এই কর্মকর্তা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা না থাকার পরও এমন উদ্যোগ নেওয়ার মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। কারন হিসেবে সংস্লিষ্টরা বলেন, এ কার্যক্রমের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো.শহিদুল আলমকে। অভিযোগ রয়েছে জাতীয় শোক দিবসকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
মন্তব্য করুন