গণপূর্ত ডিভিশন-৬ এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আলমগীর খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজুমদার ট্রেডিংয়ের সিন্ডিকেটের কাছে হার মেনে গেছে ব্যবস্থা গ্রহনকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। দুটি গাড়ির ৩১ জন ভুয়া ড্রাইভার দেখিয়ে কাগজে কলমে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা বেতন-ভাতা বাবদ হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। এছাড়া প্রকল্পের কাজ না করে এবং ভুয়া নিয়োগ বানিজ্যের অন্তরালে কোটি কোটি টাকা লুটপাট, ঘুষ-দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম বিভাগ-৬ এর অধীনে ঢাকার সাভার স্মৃতিসৌধ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন প্রকল্পের কোন কাজ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করে প্রকৌশলী আলমগীর চক্র। ই/এম বিভাগ-৮ এর অধীনে দুটি গাড়ির বিপরীতে ৩১ জন চালকের পেছনে প্রতি বছরে অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৮৭ লাখ টাকা।অডিট রিপোর্টে এমন ভয়ংকর অনিয়ম ধরা পড়লেও প্রকৌশলী আলমীগর চক্রের একটি চুলও কেউ ছিতে পারছে না। এসব অনিয়মের চিত্র উল্লেখ করে দুদকে অভিযোগ করা হলেও কখনো তা আলোর মুখ দেখবে বলে কেউ আশা করে না।
অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে- ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল (ই/এম) বিভাগ- ৬ ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় ৩টি ১৬ চ্যানেল বিশিষ্ট ডিভিআর, ১২টি পিটিজেড ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, ৩টি ডিসপ্লে মনিটর, ১০টি ডে-নাইট ভিশন ক্যামেরাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মালামাল চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ ও স্থাপনের জন্য পর পর দুদিনে একজন ঠিকাদারকে তিনটি কার্যাদেশ দেয়।
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর পত্র স্মারক নং- ৩৫০২, তারিখ ১৪জুন-২০১৬ এবং স্মারক নং-৩৫০৭ ও ৩৫০৮, তারিখ : ১৫জুন-২০১৬। চুক্তি মোতাবেক ঠিকাদারকে ১ কোটি ১৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা চুড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হলেও কাজগুলো সমাপ্ত করা হয়নি। ওই বছরের ২ অক্টোবর অডিট বিভাগের কর্মকর্তারা সাভার স্মৃতিসৌধে সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখতে পায়।
পরে অডিট কর্মকর্তারা দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে জাহিদ জানান মালামাল গুলো কার্টুনজাত অবস্থায় ষ্টোররুমে রয়েছে। কিন্তু ষ্টোররুমে মালামালের স্টক রেজিষ্টার চাইলে অডিট কর্মকর্তাদের সেই রেজিষ্টারও দেখাতে পারেনি এই দুর্নীতিবাজ চক্রটি।এদিকে ই/এম বিভাগ-৮ এর সরবরাহকৃত জনবলের তালিকা অনুযায়ী ২টি গাড়ির বিপরীতে ৩১ জন চালকের বেতন পরিশোধ করায় ২০১৬/১৭ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৮৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করার চিত্র অডিট রিপোর্টে উঠে আসে।
অডিটে দেখা গেছে, দুটি গাড়িতে দুজন ড্রাইভার কর্মরত থাকার বিধান লঙ্গণ করে আলমগীর চক্র ২৯ জন ভুয়া ড্রাইভারকে বেতন-ভাতা বাবদ ২০১৬/১৭ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৮৭ লাখ টাকা প্রদান করে সরকারি অর্থের চরম অপচয় ঘটিয়েছে।অডিট রিপোর্টের একটি অংশে দেখা গেছে, অর্থবছর শেষ হওয়ার একদিন আগে ঠিকাদারকে কাজের কার্যাদেশ প্রদান করে পরের দিন ৩কোটি ৭৭ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৯ জুন মজুমদার ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করার পরের দিন অর্থাৎ ৩০জুন এই বিল পরিশোধ করা হলেও বাস্তবে কাজের কোনো অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি।
অর্থবছর শেষ হওয়ায় বাজেটের তামাদি এড়াতে তড়িঘড়ি করে এভাবে কার্যাদেশ দেখিয়ে বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে গণপূর্তের কাঠের কারখানা বিভাগে ২০১৬/১৭ অর্থবছরে ১২৯ জনবলের পেছনে বেতন-ভাতা ৪কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও বিপরীতে তারা ১টাকার উৎপাদনও দেখাতে পারেনি। আর উৎপাদন কার্যক্রম না হওয়ায় কারখানার মেশিনারিজ বা যন্ত্রপাতিগুলো দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় অবশেষে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে।
১২৯ জন কারিগরি লোক থাকার পরেও উৎপাদন শূন্য অথচ বিদ্যুৎ বিলও অস্বাভাবিক বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা নিলেও কোনো কাজ করে নাই। তা ছাড়া অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী পর্যাপ্ত জনবল থাকার পরও দৈনিক মজুরি ও চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগ দিয়ে সরকারি অর্থ এভাবেই লুটপাট করা হয়।
গণপূর্ত অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা দাবী করছে, ই/এম ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আলমগীর খান গ্রামের বাড়ীতে তার নিজের ও তার আত্মীয়-স্বজনের নামে শতশত বিঘা জমি কিনেছেন। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থে তিনি ঢাকা শহরে ও তার আশে পাশে একাধিক বাড়ী ও এ্যাপার্টমেন্ট, বাণিজ্যিক প্লট, আবাসিক প্লট ক্রয় করেছেন এবং বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের নামে বিরাট অংকের টাকা এফডিআর করে রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে শত কোটি টাকা পাচার করেছেন যা তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে। যে কোন সময় বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় তাহার বিদেশ যাত্রার উপর জরুরী ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারী করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আলমগীর খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। খুর্দেবার্তা পাঠালে তার ফিরতি জবাব দেয়নি।
এসব নানা অভিযোগের বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার এ সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন