বিশ্বব্যাংক ও সরকারের অর্থায়নে ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকা ব্যায়ের প্রানিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পে (এলডিডিপি) হরিরলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৫ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসলেও লক্ষ্যমাত্রার ৩৫ শতাংশও অর্জিত হয়নি। প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মৎস ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
তবে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়নি। কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারনে যথাসময়ে ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদন ও মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছে। প্রকল্পটি যে উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছিল তা কতিপয় দুর্র্নীতিবাজ সরকারী অর্থ আত্মসাৎকারী কর্মকর্তাদের কারণে ভুলন্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং বর্তমান সরকারের একটি মহত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসকল অনিয়মের মূল কারিগর প্রকল্পের পিডি মো: আব্দুর রহিম, সিটিসি ডাঃ গোলাম রাব্বানী, ডিপিডি ড. মো: সাকিফ উল আযম, সাবেক ডিপিডি মুস্তানুর এবং সাবেক ডিজি ডাঃ মো: এমদাদুল হক তালুকদার। এ সব কর্মকর্তা নানা কৌশলে প্রকল্পের শত কোটি টাকা আত্মসাত করেও অধরা রয়েছেন।
প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে ২০১৯ সালে ৫ বছর মেয়াদে ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকার এলডিডিপি প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এরমধ্যে আভ্যন্তরীণ উৎস (জিওবি) অর্থায়ন ৩৯৪ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা ও বিশ্বব্যাংক থেকে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭ হাজার টাকা অর্থায়ণ করা হয়। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
দেশের পার্বত্য তিন জেলা ছাড়া সকল জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা প্রকল্পের আওতাভুক্ত। প্রকল্পের বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রানিজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, মার্কেট লিংকেজ ও ভেলু চেইন সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ প্রানিজ খাদ্য উৎপাদন, গবাদি পশুর উৎপাদন ২০ শতাংশ বৃদ্ধি, প্রাণিবীমা চালুকরণসহ নানা কর্মসুচি। প্রকল্পটির মেয়াদ আছে তিন মাসেরও কম। সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে এফএমডি, পিপিআর ভ্যাকসিনক্রয়, স্কুল ফিডিং ও পশুখাদ্য এবং যন্ত্রপাতিক্রয়সহ বেশকিছু ভুয়া কিছু আইটেম সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রাপ্ত নথি থেকে জানা গেছে, গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ বা এফএমডি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা ব্যায়ে অপর একটি প্রকল্প আছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ১০০ কোটি টাকার এফএমডি ভ্যাকসিন ক্রয় করা হয়েছে। আরও ১০০ কোটি টাকার ভ্যাকসিন ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এলডিডিপি প্রকল্পের অধীনে এমএফডি ও ছাগলের পেস্টি ডেস পেটিটস ইন রুমিন্যন্ট বা পিপিআর ভ্যাকসিন কিংবা সংক্রান্ত কোন আইটেন রাখার প্রয়োজন ছিল না। শুধু লুটপাটের উদ্দেশ্যে এমএফডি ও পিপিআর ভ্যাকসিন ক্রয়ের প্যাকেজ রাখা হয়েছে।
সংশ্লিস্ট নথি বলছে, প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ার মূল কারণ যথাযথ পরিকল্পনা হাতে না নেওয়া। যাদেরকে এ্ই প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ দেওযা হয়েছে তাদের অধিকাংশই গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন না। প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. আব্দুর রহিম প্রশাসন ক্যাডারের লোক। তাকে ভুল বুঝিয়ে প্রকল্পের মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেন চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রব্বানী। তার সঙ্গে আছেন ড. এবিএম মুস্তানুর রহমানসহ একাধিক দুর্নীতিবাজ ডিপিডি। প্রকল্পের টাকায় চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রব্বানী ৪ বার ইউরোপ সফর করেছেন। স্থানীয় প্রশিক্ষনের নামে ব্যয় করা হয়েছে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা। বাস্তবে এসব প্রশিক্ষণ কোন কাজে আসেনি। প্রশিক্ষণার্থীদেরও ৮০ শতাংশ টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রব্বানীর বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় উপজেলা, জেলা, খামার বা বিভাগীয় দপ্তরে আনুসঙ্গিক ঘাসচাষ, জ্বালানী ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কোটি কোটি টাকা অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ ওইসব খাতে রাজস্ব বাজেট থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এলডিডিপির মাধ্যমে ঘাষ চাষের প্রমাণও পাওয়া যায় না। এলডিডিপির অসাধু কর্মকর্তাদের একটি অংশ চুক্তি করেই পঞ্চাশ শতাংশ নিয়ে আসে। স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে প্রকল্পে একজন প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ চার বছরে তাকে কোন কমিটিতে রাখা হয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে দেওয়া দরপত্রের কয়েকটির নমুনা থেকে বিপুল অনিয়ম ও হরির লুটের প্রমাণ পাওয়া যায়। ডিজি-৫২ নং প্যাকেজে এফএমডি ভ্যাকসিনেশন পোগ্রাম বাস্তাবায়নের জন্য সিরিঞ্জ, নিডেল, কুলবক্স ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ২০২১ সালৈর ৭ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৫ জন ঠিকাদার দরপত্র ক্রয় করে ২ জন দাখিল করে। সেখানে পূর্বনির্ধারিত একজনকে রেসপন্সিভ করা হয়। প্যাকেজ জি ৬৬-২ এর মাধ্যমে ২৪১ মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের জন্য ছোট ফ্রিজ ও সার্জিক্যাল কিটে ক্রয়ের দরপত্রে ৬ জন অংশ নিলেও একজনকে রেসপন্সিভ করে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়। ৫০ লিটারের ফ্রিজ নেওয়ার আদেশ হলেও সরবরাহ করা হয় ৪৫ লিটারের। যেসব সার্জিক্যাল কিট নেওয়া হয় সেগুলোও ছিল নিম্নমানের।
প্যাকেজ জি ২৮-২৯ এ ফিড কমপ্লিমেন্টারি ক্রয়ের জন্য ৬ জন দরপত্র কিনে ৪ জন অংশ নেয়। পছন্দের একটি প্রতিষ্ঠানকে রেসপন্সিভ করে প্রায় ৫ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্যাকেজ জি-১১৪ এর প্যাকেজ ফিড, মেডিসিন ও ভ্যাকনিস ক্রয়ের জন্য দরপত্রে ৪ প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। পছন্দের ঠিকাদারকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এই প্যাকেজেও নিম্নমানের পণ্য সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে।
প্যাকেজ জি ১২১ এ সিঙ্গেল ইউনিট মিল্কিং মেশিন ক্রয়ের দরপত্রে ৫ প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও গোলাম রাব্বানীর আত্মীয়কে প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তাকে প্রকল্প মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত পণ্য সরবাহের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্যাকেজ জি-৭০-এ কনজুমাবেলস আইটেম ক্রয়ে দরপত্র দাখিল করা দুই জনের মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত একজনকে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
জি-৮০-৮১তে ৪৬ ইউনিট লিকুইড সেপারেটর বা গ্যাস জেনারেটর ক্রয়ের জন্যও একইভাবে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গত ২ আগস্ট মালামাল সরবরাহের মেয়াদ থাকলেও গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাটি মালামাল সরবাহ করেনি। প্যাকেজ জি-৪২ এ ল্যাবরেটরির জন্য কনজুমাবলস আইটেম ক্রয়ের দরপত্র দেওয়া হয়। মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান সেখানে অংশ নেয়। তাদেরকে প্রায় এক কোটি ৬৭ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্যাকেজ ডি-৬২ তে ৬ প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
পছেন্দর প্রতিষ্ঠানকে রেসপন্সিভ দেখিয়ে প্রায় ১২ কোটি টাকার পণ্য সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানকে ৩ মাসের পরিবর্তে ৫ মাস সময় দেওয়া হয়।প্যাকেজ জি-১৫-এর দরপত্রে অংশ নেওয়া দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটিকে রেসপন্সিভ দেখিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদার জনৈক ডিপিডির আত্মীয়। তাকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৫ দিন পরে পর্যন্ত পণ্য সরবরাহের সময় সীমা দেওয়া হয়। যা বিধি সম্মত নয়।
নথি থেকে জানা যায়, ডিপিপির ব্যর্থয় ঘটিয়ে ক্রয় কমিটির অনুমোদন না নেওয়ার কৌশল হিসেবে একই আইটেমের জন্য ৩টি প্যাকেজ করা হয়েছে। প্যাকজ নং ৯৮, ৯৮-এ ও ৯৯; যা আর্থিক বিধির সুষ্পষ্টলংঘন। প্রতিটি প্যাকেরজ মূল্য ৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা করে ৩ প্যাকেজে ১১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার কাজ দেওয়া হয়। অথচ এই পরিমান কার্যাদেশের জন্য মন্ত্রী পরিষদের ক্রয় কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। প্যাকেজ জি-৬২ এ উপজেলা মিনি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ল্যাবের জন্য কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ের আদেশ দেওয়া হয়। গত এপ্রিলে আহ্বান করা দরপত্রে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। কয়েকটি বাদে অধিকাংশ ল্যাব ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় কোটি কোটি টাকার দরপত্র বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। প্যাকেজ ৬৬ (২)-এর মাধ্যমে যেসব কার্যাদেশ দেওয়া হয় সেখান সংগ্রহ করার পণ্য স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হয়নি। প্রায় ২০ কোটি টাকার মিল্ক সেফারেটর মেশিন ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন ক্রয় ও সরবরাহ করা করা হয়েছে। মেশিনগুলো ব্যবহারের অনুপোযোগী। স্টিকার মারা মেশিনগুলো খুবই নিম্নমানের। গোলাম রব্বানী গংরা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ আদায় করেছন। প্রকল্পের প্রতিটি কাজেই ওভার স্টেমেট করা হয়েছে। কোন ধরনের সুপারভিশন ছাড়াই কোন ক্ষেত্রে নির্মাণ কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, চিফ ট্যাকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রব্বানীসহ সংশ্লিষ্টর প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে ‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ’ হয়েছে। তাদের অনেকেই নামে বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাদের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব নিলেই বিষয়গুলোর প্রমাণ পাওয়া যাবে।
দুদকে অভিযোগ: এই প্রকল্পের টাকা লুটপাটের বিষয়ে তদন্ত চেয়ে গত ০৭/০৩/২০২৪ ইং তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন জনৈক ব্যাক্তি। তিনি তার লিখিত অভিযোগে দাবী করেছেন যে, সরকারী আর্থিক বিধি লংঘন করে স্পিলিটআপ এর মাধ্যমে ১,৪৯,৬৬,০০,০০০/- টাকার একই মালামাল সরকারের ক্রয় কমিটির অনুমোদন গ্রহন এড়ানোর লক্ষ্যে “স্পিলিটআপের” মাধ্যমে ৫টি প্যাকেজে ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আর্থিক বিধি লংঘনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন ও মালামাল গ্রহন ব্যতিরেকে বিল পরিশোধ দেখাইয়া সরকারের কোটি-কোটি টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
অভিযোগে তিনি জানান, আপনার সদয় অবগতি ও ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জানাচ্ছি যে, বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যপুষ্ঠ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িতব্য এলডিডিপি প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে মোট ৫,৩৮৯৯২,৪৫/- টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি যে উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছিল তা কতিপয় দুর্র্নীতিবাজ সরকারী অর্থ আত্মসাৎকারী কর্মকর্তাদের কারণে ভুলন্টিত হতে যাচ্ছে এবং সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসকল অনিয়মের মূল কারিগর প্রকল্পের পিডি মো: আব্দুর রহিম, সিটিসি ডাঃ গোলাম রাব্বানী, ডিপিডি ড. মো: সাকিফ উল আযম , সাবেক ডিপিডি মুস্তানুর এবং সাবেক ডিজি ডাঃ মো: এমদাদুল হক তালুকদার। এরা একে অপরের যোগসাজগে এ প্রকল্পটাকে হরিলুট করার কাজে লিপ্ত আছেন ও ছিলেন।
নিম্নে কয়েকটি উদাহরন প্রদান করা হলো—
( ক ) প্রকল্পের আওতায় ( প্রকিউরমেন্ট অব হাইজেনিক ক্লিনিং টুলস ক্যান্স পাইলস) শিরোনামে মোট ২২৭ কোটি ১৯ লক্ষ ১২ হাজার টাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একই স্পেসিফিকেশনের একই ন্যাচারের একই আইটেম হওয়া সত্ত্বেও সিটিসি ও ডিপিডি এবং হোপ ডিজি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এড়ানোর জন্য ৫টি প্যাকেজে ক্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছেন। যা সরকারের আর্থিক ক্রয়বিধির পরিপন্থী।
প্রকল্পের ডিপিপি-তে জি ৯৮, ৯৮ এ প্রকল্পের ১ম বছর, জি-৯৯ প্রকল্পের ২য় বছর, জি-৯৭ প্রকল্পের ৩য় বছর, জি- ১০০ প্রকল্পের ৪র্থ বছরে ক্রয় করার বিধান রেখে ডিপিপি প্রনয়ন করা হয়েছিল। প্রকল্পের ৫ বছরে কোন মালামালই ক্রয় করা হয়নি। বর্তমানে চলছে প্রকল্পের বর্ধিত সময়।
জি-৯৮,৯৮এ ও ৯৯ পৃথক ঠিকাদারের সাথে দরপত্র আহব্বানের পূর্বে চুক্তি হওয়ায় ৯৮এ- ৩৫ কোটি টাকা আবার জি ৯৯- একই মালামাল ৩১ কোটি টাকায় কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও অদ্য পর্যন্ত কোন মালামাল সরবরাহ নেয়া হয়নি। অন্যদিকে পুনরায় জি-৯৭ এর জন্য ৫৭৩৪,৫৬ লক্ষ টাকা এবং জি-১০০ এর জন্য ঐ একই মালামাল ক্রয়ের জন্য ৫৭৩৪,৫৬ লক্ষ টাকার দরপত্র আহব্বান করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হল মালামাল না নিয়ে ঠিকাদারের সাথে অর্থ ভাগাভাগি করা। পূর্বে কার্যাদেশ প্রদানকৃত ২টি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালামাল সরবরাহ না করলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কারণ এদের নিকট হতে সিটিসি ও ডিপিডিরা আর্থিক সুবিধা গ্রহন করেছেন।
( খ ) প্যাকেজ নং জি-৩৯ এর মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বর্তমান ল্যবরেটরীর জন্য ২০ কোটি টাকা ইকুইপমেন্ট ক্রয় দেখালেও কোন যন্ত্রপাতি সরবরাহ নেয়া হয়নি। এভাবে জি-৪০-জি-৪১ ও জি-৪২ এর মাধ্যমে গবেষনাগার সমূহের জন্য মোট ৫ কোটি ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার কনজুমাবল আইটেম ক্রয়ের বিল পরিশোধ করা হলেও কোন ল্যাবরেটরীতে এ সকল মালামাল সরবরাহ করা হয়নি।
প্যাকেজ নং- জি ৫১,৫২,৫৩,৫৪ ও ৫৫ এর মাধ্যমে এফএমডি ভ্যাকসিন পুশ করার জন্য মোট ১২৪৬ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকার সিরিজ, নিডিল ও কুল বক্স ক্রয় করার বিল পরিশোধ করা হয়েছে এবং কিছু বাকী আছে। কিন্তু এখানেও আংশিক মালামাল নিয়ে বাকী টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন যা সরোজমিনে তদন্ত করলে প্রমানিত হবে। উল্লেখ্য যে, এফএমডি ভ্যাকসিন ক্রয় ও পুশ করার জন্য পৃথক প্রকল্প রয়েছে এবং মহাখালী ও কুমিল্লা অফিস হতে এফএমডি ভ্যকসিন উৎপাদন এবং এ সকল সিরিজ, নিডিল ক্রয় করা হয়।
( ঘ ) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে মিনি ডাইগনেষ্টিক সেন্টার নামে উপজেলা পর্যায়ে কোন ল্যব না থাকলেও ঐ নামে প্যাকেজ নং জি- ৬৪ ও জি-৬৫ এর মাধ্যমে ৩ কোটি ২ লক্ষ টাকার এবং ৩ কোটি ৩ লক্ষ টাকার কনজুমাবলস আইটেম ক্রয় দেখাইয়া মালামাল না নিয়ে সমূদয় টাকা আত্মসাৎ করেছে। যা সরোজমিনে তদন্ত করলে প্রমানিত হবে। একই ভাবে জি-৬৮, জি-৬৯ ও জি-৭০ এর মাধ্যমে মোট ১৭৪৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার ঊসবৎমবহপু ফৎঁমং, গবফরপরহবং, ধহঃরংবঢ়ঃরপ হ ফরংরহভবপঃধহঃ ক্রয় দেখালেও বাস্তবে ৫০% মালামাল সরবরাহ নেয়া হয়নি।
(৩) প্যাকেজ নং- জি-৬০এ ও জি-৬১ এর মাধ্যমে মোট ৩,১৪০ কোটি টাকার উধরৎু ঈধঃঃষব বধৎষু ঢ়ৎবমহধহপু ফরধমহড়ংরং ঃড়ড়ষং ক্রয়ের বিল পরিশোধ করা হলেও মেশিন গুলি অদ্য পর্যন্ত খোলা হয়নি বা ব্যবহার করা হয়নি। আর প্রত্যেকটি মেশিনারীজ নিম্নমানের ও স্টিকার লাগানো।(চায়নার মেশিনে ইউরোপিয় স্টিকার লাগানো হয়েছে।) এখানে সরকারের ন্যূনতম ১৫ শত কোটি টাকার দূর্নীতি করা হয়েছে বা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
( চ ) প্যাকেজ নং- জি-১২,জি-১৩ ও জি-১৪ এর মাধ্যমে ৪০০,৫০০,৬০০ সংখ্যক মিল্ক ক্রিম সেপারেটর মেশিন ক্রয় করা হয়েছে এবং ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হয়েছে মোট ৭ কোটি ৬৫ লক্ষ ২৯ হাজার টাকায় ক্রয় করা হলেও এ পর্যন্ত কোন মেশিনই কাজে আসেনি বা ব্যবহার করা যায়নি। কারন মেশিনগুলি নিম্নমানের ও চায়নার মেশিনে ভারতের স্টিকার লাগানো।
( ছ ) এভাবে জি-৭৪, জি-৭৫,জি-৭৫(১), জি-৭৮ এর মালামাল ক্রয়ের বিল পরিশোধ করা হলেও বাস্তবে কোন মালামাল খুজে পাওয়া যাবে না। এখানেও প্রায় ৬ কোটি ৮৭ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর বাইরেও কয়েকশত কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে । জনগনের ট্যাক্সের টাকায় পরিশোধিতব্য সুদের টাকায় গৃহীত এ প্রকল্পের টাকা মুষ্টিমেয় কয়েকজন লুটপাট করে খাচ্ছে বলে দাবী করেছেন তিনি।
এলডিডিপি প্রকল্পের উল্লেখিত দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এই প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়নি। করোনার লকডাউনজনিত কারনে ক্রয় সম্পাদক ও মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যম ৫ হাজার ২৯৩টি খামারি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৬ লাখ খামারিকে ৬৯৮ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। ৩৬০টি মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক বা এমভিসি ক্রয় করা হয়েছে। ২৩৮ উপজেলায় প্রশিক্ষণ কক্ষ নির্মাণ ও ৬টি সরকারি খামার সংস্কার করা হয়েছে। ২০২২ এর হিসেবে প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ছিল ৩০ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও বর্তমানে তা ৬৫ শতাংশর মতো।
মন্তব্য করুন