সম্প্রতি একজন সাহসী কর্মকর্তার বদৌলতে দালাল চক্রের এক সদস্য মতিঝিল থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। বর্তমান সে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে আটক রয়েছে। একজন দালাল গ্রেফতার হওয়ায় সিন্ডিকেটের পালের গোদাসহ অন্যান্য সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে।
সুত্র মতে এই চক্রের মূল হোতা মাদারীপুরের সাগর এবং গোপালগঞ্জের তুষার। তারা আজ প্রায় দশ বছর ধরে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও চীফ নটিক্যাল অফিসারসহ কয়েকজন ক্যাপ্টেন ও শীপ সার্ভেয়ার (পরীক্ষক) দের সাথে ঘুসের চুক্তিতে অবৈধ পাশ বাণিজ্য চালিয়ে আসছিলো। তারা পরীক্ষার্থীদের সাথে মোবাইল ফোন মাধ্যমে যোগাযোগ করে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেবার শর্তে জনপ্রতি ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা আদায় করতো। প্রতি মাষ্টারশীপ, ড্রাইভারশীপ ও ডেক অফিসার পরীক্ষায় তারা ৩০ থেকে ৫০ জন প্রার্থীকে চুক্তিতে পাশ করিয়ে সেই টাকা অফিসাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতো। এভাবে দুনম্বরী পথে অর্থ উপার্জন করে তারা ঢাকা শহরে বাড়ী,গাড়ীসহ আলীশান ফ্ল্যাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বনেগেছে।
এই চক্রে ২০/৩০ জন সদস্য রয়েছে। তাদেরই একজন গত ১০/১২/২০২৩ইং তারিখে মতিঝিল থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া দালালের নাম: দীপঙ্কর মন্ডল (৪৫)। তার পিতার নাম: দুলাল মন্ডল। গ্রামের বাড়ী: নোয়াপাড়া,থানা: অভয়নগর,জেলা: যশোর।
মামলার বর্ণনায় জানাগেছে, গত ৩১/১০/২০২৩ইং তারিখে বেলা ১১-৩০ টার সময় মতিঝিলস্থ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের কার্যালয়ে প্রথম শ্রেণীর ডেক অফিসার পদে মৌখিক পরীক্ষা দিতে আসে পরীক্ষার্থী মো: তৈয়মুর পাশা।
মৌখিক পরীক্ষায় সে কোন প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে না পারায় তাকে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। তখনই তাকে পাশ করিয়ে দেবার জন্য সরকারী একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে পরীক্ষক ক্যাপ্টেন কাজী মুহাম্মদ আহসানের মোবাইল নম্বরে কল করে দালাল দীপঙ্কর মন্ডল।
ঘটনাটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানো হলে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রসিকিউটিং অফিসার (অতি: দায়িত্ব) শফিকুর রহমান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১১ তাং ১০/১২/২০২৩ইং। ধারা-৪১৯/৫০৬ দ: বি: আইন। এই মামলায় তদবীর করতে এলে আসামী দীপঙ্কর মন্ডলকে গ্রেফতার করে মতিঝিল থানা পুলিশ।
এ দিকে বিকেলেই আসামীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে তদবীর করেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। আসামী দীপঙ্কর মন্ডল যেন কোন কর্মকর্তার নাম ফাঁস না করে তজন্যও তদবীর করা হয়।
এ বিষয়ে মতিঝিল থানার ওসি তদন্তের সাথে কথা বললে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। আসামীকে রিমান্ডে এনে তার গডফাদার ও সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যদের কেন আইডেন্টিফাই করে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি প্রক্রিয়াধীন আছে।
এ দিকে অধিদপ্তরের দেশপ্রেমিক সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারির দাবী, অতিসত্তর সাগর-তুষার চক্রের সকল সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
অধিদপ্তরের যে সব কর্মকর্তা এই চক্রের সাথে জড়িত তাদেরকেও গ্রেফতার করে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরকে কলংকমুক্ত করা হোক।
মন্তব্য করুন