নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘন করে টাকার বিনিময়ে অদক্ষ ব্যক্তিদেরকে সিডিসি প্রদান করার ঘটনায় নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো.গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও তার সহযোগি চট্টগ্রাম সরকারি শিপিং অফিসের শিপিং মাষ্টার জাকির হোসেনর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট রীট পিটিশন দায়ের করা হয়। মন্ত্রণালয়ের সিডিসি প্রদানের নীতিমালা-২০১৮ এর অনুচ্ছেদ ৪ ও ৮ ভঙ্গ করে প্রি-সী স্পেশাল রেটিং কোর্স নামে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত কোনও কোর্স না থাকা স্বত্ত্বেও এবং অনাবাসিক প্রি-সীর স্পেশাল রেটিং কোর্স ২০২৩ চালু করে সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূতভাবে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ২০০ জন অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে প্রত্যেক প্রার্থীর কাছে থেকে ৭ লাখ টাকা করে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ তোলা হয়। এ বিষয়ে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোটের একটি বেঞ্চ।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ডি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেন এর দৈতবেঞ্চ থেকে এই আদেশ দিয়েছেন। সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন, তার একান্ত সহযোগী চট্টগ্রাম সরকারি শিপিং অফিসের শিপিং মাষ্টার জাকির হোসেনর বিরুদ্ধে এই রীট পিটিশন দায়ের করেন। যার নম্বর ৪৭৭/২০২৪ ইং। রীটটির শুনানী শেষে ওইরুপ আদেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন ঘটনাটি যাতে তদন্ত করতে না পারে সেজন্য হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে লীভ টু আপীল দায়ের করেছেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এম মাকসুদ আলম। গত ০৫/০২/২০২৪ তারিখে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ডি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেন এর দৈতবেঞ্চ থেকে যে আদেশ দিয়েছেন ওই আদেশের কার্যকরিতা স্থগিতের জন্য এই লীভ টু আপীল দায়ের করা হয়েছে।
নিজে সংক্ষুব্ধ ব্যাক্তি না হয়েও ১৪ কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত থামিয়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টাকে নিন্দা জানিয়েছেন টিআইবির একজন গবেষণা কর্মকর্তা। তিনি জানান, দুদক বিষয়টি তদন্ত করলে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হতো এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হতো। অপরদিকে হাইকোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবি জানান, কোন দুর্নীতির তদন্ত থামিয়ে দিতে এ ধরনের লীভ টু আপীল দায়েরের অর্থই হলো ওই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির চর্চা নিবিঘ্ন করা। প্রতিষ্ঠান প্রধান হয়ে মহাপরিচালক কাজটি ঠিক করেন নি। তার এই কর্মকান্ডে প্রমাণিত হয় যে, তিনি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান না এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দিতে চান।
এমন মনোভাপন্ন কোন কর্মকর্তাকে সেবামূলক কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদে রাখা উচিত নয় বলেও তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে সরকার প্রধান ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে ফোন করলে জানান হয় যে, মহাপরিচালক স্যার অফিসের বাইরে আছেন। আপনি পরে ফোন করেন।
মন্তব্য করুন