ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান ও ইন্সট্রাক্টর (সীমেনশীপ ইনস্ট্রাক্টর) মো: মেহেদী হাসান এর বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ও দুদকে জমাপড়া উক্ত লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মেসার্স দাঁরা টেকনোলোজি বিডি লিমিটেড এর নাম করে প্রায় ৪ কোটি, মেসার্স সাদ এন্টারপ্রাইজ এর নাম করে প্রায় ২২ লাখ ও মেসার্স সাদ ফার্নিচার এর নাম ব্যবহার করে প্রায় ১ কোটি সহ এন এম আই মাদারীপুর শাখার জন্য প্রায় সোয়া পাঁচ কোটি টাকার সরঞ্জামাদি সরবরাহের ঠিকাদারি কাজ বেনামে হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে।
একাধিক সুত্রে জানাগেছে, ইন্সট্রাক্টর মো: মেহেদি হাসান নিজেকে এনএমআই মাদারীপুর শাখা প্রজেক্ট ডাইরেক্টর হিসাবে পরিচয় দিয়ে উক্ত তিন কোম্পানির সাথে গত ২৭/১২/২০২১ তারিখ সন্ধ্যায় এন এম আই চট্টগ্রামে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা এই সিদ্ধান্ত নেন যে,
এক. কোম্পানি তিনটির যে কোনো একটির নামে সরঞ্জামাদি সরবরাহ কাজ প্রদান করা হবে।
উক্ত কাজের বিলের চেক কোম্পানির একাউন্টে জমা হওয়ার পূর্বে সমপরিমাণ টাকার একটি চেক নিশ্চয়তা স্বরূপ ইন্সট্রাক্টর মো: মেহেদি হাসানের কাছে জমা প্রদান করতে হবে। উক্ত টাকা জমা হওয়ার পরদিন ইন্সট্রাক্টর মো: মেহেদি হাসান টাকাগুলো উত্তোলন করে নিজের কাছে নিয়ে নিবেন এবং যে কোম্পানির নাম ব্যবহার করা হবে উক্ত কোম্পানিকে বিলের টাকার একটা অংশ প্রদান করা হবে।
দুই. উক্ত কাজ সম্পন্ন হওয়া ও বিল পাওয়ার পূর্বে অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান ও ইন্সট্রাক্টর মো: মেহেদি হাসানের জন্য দুইটি গাড়ি অগ্রিম ক্রয় করে দেয়ার জন্য কোম্পানির স্বত্বাধিকারীদের নির্দেশনা প্রদান করেন। উক্ত গাড়ি দুটির দাম পরে সমন্বয় করা হবে জানালেও বিল হওয়ার পূর্বে গাড়ি প্রদানে অনীহা প্রকাশ করলে তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয় যা পরবর্তীতে প্রকাশ পায়।
ইন্সট্রাক্টর মো: মেহেদি হাসানের ব্যাপারে ইতিপূর্বেও অনেক গুরুতর অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে গাড়ি ঘুষ চাওয়ার মত ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস ইন্সট্রাক্টর মো: মেহেদি হাসান কোত্থেকে পান তা-ই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
আরো জানা গেছে, চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থীদের কাজে লাগিয়ে পুরানো কাঁচামাল ব্যবহার করে এন এম আই মাদারীপুর শাখায় সরবরাহের জন্য কিছু সরঞ্জামাদি তৈরি করেছেন ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম এর ওয়ার্কশপে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণার্থীদের গোপনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। এছাড়াও এন এম আই মাদারীপুর শাখায় সরবরাহের জন্য মেহেদি কর্তৃক ভাটিয়ারী থেকে ক্রয় করা জরাজীর্ণ ও পুরাতন লাইফ বোটটি বর্তমানে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে রয়েছে, পরিদর্শন করে যার সত্যতা পাওয়া যায়।
বর্তমানে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মোঃ গিয়াসউদ্দিনের ৮(আট) কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের টিপসইধারী অবৈধ ২০০ নাবিকের অবৈধ ট্রেনিং যা গত ১৬ অক্টোবর ২০২৩ এ শুরু হয়েছে তাদের পোশাক ও দুপুরের খাবার সরবরাহ ঠিকাদারি চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান ও ইন্সট্রাক্টর মো: মেহেদি হাসান যৌথভাবে করছেন।
এছাড়াও এসব নাবিকদের কাছ থেকে ট্রেনিং বাবদ সরকারি ফি ছাড়াও জনপ্রতি অতিরিক্ত ১ লক্ষ টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাবিকের প্রশিক্ষণ পূর্ণকালীন রেজিমেন্টাল (অর্থাৎ পিট, পারেড, থাকা, খাওয়া, ঘুম, ইবাদত ইত্যাদি সহ প্রশিক্ষণকালীন সবকিছু নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ণ আবাসিক) হলেও নগদ দুই কোটি টাকা এবং খাবার ও কাপড় সাপ্লাইয়ের এই বিজনেসের জন্য তারা দুই জন এই অবৈধ প্রশিক্ষণ আয়োজন করছেন।
এখানে উল্লেখ্য এই প্রশিক্ষণ সিলেবাস নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের কন্ট্রোলার অব মেরিটাইম এডুকেশন দপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান ও ইন্সট্রাক্টর (সীমেনশীপ) মো: মেহেদী হাসান সরকারি চাকুরীতে থাকাকালীন সত্ত্বেও অবৈধভাবে কনট্রাক্টরি করছেন যা সরকারি চাকুরীবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইন্সট্রাক্টর (সীমেনশীপ) মো: মেহেদী হাসানকে তাদের কনট্রাক্টরি পাবার জন্য বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, বরিশাল এবং বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, রংপুরে বহুবার প্রেরণ করেছেন যার টিএ ও ডিএ সরকারি কোষাগার থেকে প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ নৌ-পরিবহন মস্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে জানতে হলে আপনাকে অফিসে এসে সরাসরি কথা বলতে হবে।
মন্তব্য করুন