প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ঢাকা, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় নদী বিধৌদিত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের পিডি নিয়োগে চরম অনিয়ম করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সুত্রমতে প্রকল্পের ডিপিপিতে ৬৫০০০ প্রান্তিক কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা উন্নয়ন করে এদেরকে গাভী,ছাগল-ভেড়া ও হাস-মুরগী বিতরণ করা হবে। প্রশিক্ষণে গবাদি পশু লালন পালনের পাশাপাশি পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে একজন মাঠ পর্যায়ে বা চরাঞ্চলে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভেটেরিনারি ডাক্তার বা পুর্বে কোনো প্রকল্প পরিচালনায় অভিজ্ঞ কর্মকতাকে পিডি নিয়োগ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ডিজি ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার পিডি নিয়োগের প্রস্তাবে নিজস্ব পছন্দের একজন নন ভেটেরিনারিয়ান প্রকল্প পরিচালনায় একদমই অনভিজ্ঞ আইসিটি কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন এবং অপর ২ জন জুনিয়র কর্মকর্তা ১। ডা. মো. আমিনুল হক ও ২। এ কে এম বাহারুল ইসলাম এর নাম প্রস্তাব দিয়েছেন। আর সে মোতাবেকই মন্ত্রণালয় হতে পিডি নিয়োগের লক্ষ্যে সভা আহবান করা হয়েছে। সভা আহবানের বিষয়েও অনিয়ম করা হয়েছে।
গত ৪/১০/২৩ ইং তারিখে চিঠি ইস্যু করে ৫/১০/২৩ তারিখে ১২ ঘটিকার সময় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। যার স্মারক নং ৩৩.০০.০০০০.১৩৯.১৪.০৮১.২০(অংশ-১)-৯২ তারিখ: ০৪/১০/২০২৩ইং। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজি ডা. এমদাদুল হক তালুকদার মোবাইল এর লাইন কেটে দেন।
তড়িঘড়ি করে পিডি নিয়োগের নেপথ্যে কি কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে জানা গেছে, ডিজি ডা. এমদাদ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেনের কাছ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা ঘুস নিয়ে তাকে পিডি নিয়োগ দানের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। সুত্রমতে, ডিজি যখন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সক্ষমতা জোরদারকরণ প্রকল্পের পিডি ছিলেন তখন তার সকল কেনাকাটার মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন এই মো. শামীম হোসেন। উক্ত প্রকল্পের সকল দরপত্র ডিজির পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে কাজ করেছিলেন মো. শামীম হোসেন। আর সেই কাজের পুরস্কার হিসেবে ডিজি তাকে পিডি বানিয়ে দিতে জোর তদবির করে যাচ্ছেন। ডিজি ডা: এমদাদের পিডি থাকা কালীন ঐ প্রকল্পের বিভিন্ন দূর্নীতির তদন্ত হয়েছে। আইইমিডি টিম সরেজমিনে তদন্ত করে তার প্রমাণ পেয়েছে যার কারণে তাকে প্রকল্পের পিডি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু দুর্নীতি পরায়ন এই ডা. এমদাদ ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে এবং গোপালগঞ্জের নেতাদের তদবিরে ডিজির চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।
উল্লেখ্য যে, প্রাণিসম্পদ আধিদপ্তরে বর্তমান ডিজি যোগদানের পর হতে অধিদপ্তরের সকল অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি অধিদপ্তরের আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের জন্য একটি অনভিজ্ঞ ফার্ম এর নিকট হতে ৭৫ লক্ষ টাকা নিয়ে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। এমন কি নিয়মনীতি ভংগ করে কোম্পানী কর্তৃক নিযোগাদেশ না দিয়ে ডিজি ডা. এমদাদ নিজেই নিয়োগাদেশ দিয়েছেন যা সম্পূন্ন অনিয়ম।
একাধিক সুত্র থেকে জানা যায়, বর্তমান চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত ডিজির চাকুরীর মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারি/২০২৪ তারিখে শেষ হচ্ছে। আর এজন্য নিজেকে নিয়মিত করণ এবং চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের আসায় কোটি টাকা নিয়ে এক বিশেষ মিশনে নেমেছেন তিনি। দুদুকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরেও সেখান থেকে একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে এনওসি আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে গোপন সুত্রে খবর পাওয়া গেঁছে। বর্তমানে তিনি মো. শামীম হোসনকে পিডি বানানোর জন্য প্রকল্প অনুমোদনের প্রশাসনিক আদেশ জারী না হলেও ২ জন ৬ষ্ট গ্রেডের জুনিয়র কর্মকর্তার নাম যোগ করে মো. শামীম হোসেনের (৫ম গ্রেডের )নাম প্রস্তাব করেছেন। বিনিময়ে নিয়েছেন মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা। শতাধিক দক্ষ অভিজ্ঞ ৫ম গ্রেডের সিনিয়র কর্মকর্তা এবং সদ্য সমাপ্ত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক থাকার পরেও ৬ষ্ট গ্রেডের ২ জন জুনিয়র কর্মকতার নাম প্রস্তাব করা তারই ইংগিত বহন করছে।
বিষয়টি মন্ত্রণালয় এর মন্ত্রী এবং সচিব বিবেচনায় নিবেন বলে অধিদপ্তরের একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
উল্লেখ্য মো. শামীম হোসেনকে পিডি নিয়োগ এবং ডা. এমদাদুল হককে নিয়মিত ডিজি করার ব্যাপারে সাবেক এক মন্ত্রীর এপিএস অর্থলগ্নি করেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। ঐ এপিএস এখন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারের মোবাইলে একাধিকভার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোন উত্তর দেন নি।
এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নিয়মের বত্যয় ঘটিয়ে পিডি নিয়োগের কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সজাগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন