ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিনকে উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংস্থার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক থেকে উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি পেতে গোয়েন্দা সংস্থার গোপনীয় রিপোর্ট প্রয়োজন হয়। কেউ কেউ তথ্য লুকাতে আশ্রয় নেয় অবৈধ লেনদেনের। এমনকি বিভিন্ন ভাবে তদবির করে বাগিয়ে নেন পদোন্নতি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিপক্ষে গেলে অর্থের বিনিময়ে কাঙ্খিত ফলাফল পেতে শুরু করেন প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে তদবির।
সেবা দানকারী সংস্থাটির এমনই এক ভাগ্যবান কর্মকর্তা ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক ছালেহ উদ্দিন। সম্প্রতি পদোন্নতিতে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ছালেহ উদ্দিন ও তার পরিবারের সবাই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে জড়িত। এমন প্রতিবেদন গোপন রেখেই অর্থের বিনিময়ে পদোন্নতি বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছালেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে।এখানেই তিনি থেমে নেই। পদোন্নতি নিয়েই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনের ভাই নুর উদ্দিন আনিসকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে বদলী হন ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে।
এখানে এসেই শুরু করেন বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বাণিজ্য। সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ছালেহ উদ্দিনকে উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) হিসেবে বদলী করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন। তার বদলীর ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব দপ্তরে রয়েছে।পোস্তগোলা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহীন আলমের মাধ্যমে মহাপরিচালকের ভাই নুর উদ্দিন আনিস অর্থের বিনিময়ে এ প্রস্তাব পাঠাতে মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিনকে সুপারিশ করেন বলে জানা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, এক সময়ের বিএনপি’র পরীক্ষিত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মো. ছালেহ উদ্দিন উপ-পরিচালক হিসেবে ঢাকা বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের লাইসেন্স শাখায় দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া বানিয়ে বর্তমান সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি।বিএনপি’র ঘনিষ্ঠজন হিসেবে খ্যাত উপ-পরিচালক সালেহ উদ্দিনের পদোন্নতি পাওয়ার আগেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার বিএনপির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে প্রতিবেদনে তথ্য থাকলেও রহস্যজনকভাবে তিনি পদোন্নতি বাগিয়ে নেন বলে জানা যায়।
আরও জানা যায়, নতুন ফায়ার লাইন্সেস প্রদানের ক্ষেত্রে ১০ হাজার, ফ্লোর সংযোজন বাবদ ৫ হাজার ও ফায়ার রির্পোট বাবদ ৫% কমিশন ধার্য করেছেন তিনি। সালেহ উদ্দিনের পকেটে প্রতি মাসে মাসোহারা না গেলে সিনিয়র এসও ও ডিএডিদের ছুঁটি কেড়ে নেন। তার বিরুদ্ধে নিয়ম বহিভুত ভাবে ৫০ লাখ টাকার কেনাকাটা সম্পন্ন করার অভিযোগ রয়েছে এবং তার অধীনস্থ ইন্সপেক্টরা মাসোহারা না দিলে ফাইল আটক ও ছুঁটি বাতিল করে দেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সিনিয়র এসওদের সাপ্তাহিক ছুঁটি ডিএডিদের নিকট হতে কেড়ে নেওয়ায় তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে যা অপারেশন কাজ ফেইল করার মত ঘটনা ঘটার আশংকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের বিপক্ষে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে এই সেবা প্রদানকারী সংস্থার সুনাম নষ্ট করার পাঁয়তারা করছেন ছালেহ উদ্দিন। তিনি অনেকের কাছেই বলে থাকেন ‘আমাকে বদলি করার ক্ষমতা সচিবালয়ের কর্তাদেরও নেই’।
এ বিষয়ে সালেহ উদ্দিনের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে ও খুদেবার্তা পাঠালেও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য করুন