সম্প্রতি, দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে জমা দেয়া এক অভিযোগপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, আফছার উদ্দীন গণপূর্তের ঢাকার মহাখালী ডিভিশনে থাকার সময় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ করেছেন। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ তার নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দিয়ে করানো হয়েছিল।এছাড়া গণপূর্তের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি সব কাজ নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আফছার উদ্দীন সম্পর্কে দুদকে দেয়া অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তিনি ঠিকাদারদের সাথে সিন্ডিকেট করে ১৫ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে কাজ দিয়ে থাকেন। কমিশন না দিলে কোন ঠিকাদারকেই তিনি কাজ দেন না। তার বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির খবর প্রকাশ হওয়ার পর তাকে শাস্তি স্বরুপ নরসিংদী পূর্ত বিভাগে বদলী করে দেওয়া হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, আফসার উদ্দিন গণপূর্তের বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে তার নির্ধারিত বরাদ্দের বাইরে ‘ঘুপচি টেন্ডার’ করে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তিনি ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম ১৫ শতাংশ কমিশনের টাকা নিয়েও তাদের কাজ দেননি তিনি। এমনকি কাজ না করেই ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশও পেয়েছিলেন।
তবে প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি ‘এপিপি’ ও থোক বরাদ্দের প্রকল্প পাশের ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন নিয়ে থাকেন। কমিশন না দিলে ফাইল আটকেও রাখেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভুগী ঠিকাদারেরা।নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ারের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করতেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তিনি অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যেমে প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে আলিশান ফ্ল্যাট কিনেছেন, যেটি মূলত তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া।
এছাড়া, গুলশানে ৮ কাঠার প্লট কিনেছেন তার স্ত্রীর নামে, যার ঠিকানা: রোড-১৭/বি, প্লট-০৮, গুলশান-১,ঢাকা। তার স্ত্রীর নামে বসুন্ধরা সিটি মার্কেটের চতুর্থ তলায় সি ব্লকে দোকান নং-২৭/সি এবং ২৯/সি দুইটি দোকান ক্রয় করেছেন, যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। দোকান দুটি বর্তমানে ভাড়া দিয়েছেন।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, তার সম্পদের মধ্যে আরও রয়েছে মোহাম্মদপুরের ৫৩/১, তাজমহল রোডে ৫ তলা ভবন, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। মিরপুরের পল্লবীতে ৮ নম্বর রোডের ডি ব্লকে দুইটি ৫ কাঠার প্লট, উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরে রয়েছে আলিশান বাড়ি, যার ঠিকানা বাসা নং ৫৭/এ, রোড-৯।
এছাড়া, উত্তরার ১২ নং সেক্টর, রোড নং -৭, বাসা নং ৮৮/১ এর দ্বিতীয় ও চতুর্থ তলায় তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ফ্ল্যাট। স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকা রয়েছে। এর বাইরে কানাডায় তার বন্ধুর কাছে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছনে বলেও দুদকে দেয়া অভিযোগ উল্লেখ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক প্রকৌশলী এ প্রতিবেদককে জানান, তার প্রচুর ক্ষমতা রয়েছে। এজন্যই তিনি এতো টাকা অবৈধভাবে আয় করতে পেরেছেন। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী থাকার সময়ে তিনি কাউকে পাত্তাও দিতো না।
আর এখনও তিনি তার নিজের মত করেই কাজ করেন কারো কথাই তিনি রাখে না। যে একবার অনিয়মের খাতার নিজের নাম লেখায় তিনি কি আর বদলায়, সেটা কখনোই না। এটাই হচ্ছে তার জলন্ত উদাহরণ। নরসিংদীতে বদলী হওয়ার পরও তার সব কিছু হয় ঢাকা থেকে। নিয়মিত অফিস করে না। টাকা ছাড়া কোন ফাইলেই সই করে না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দীনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
মন্তব্য করুন