পেশায় তিনি একজন প্রাইভেট ড্রাইভার। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের ব্যক্তিগত গাড়ীতে ডিউটি করে সর্বসাকুল্যে বেতন পান ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকায় ঢাকা শহরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন পশ্চিম আগারগাঁও এর মত অভিজাত এলাকার ২৫ শত স্কয়ার ফিটের আলীশান ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাট ভাড়াই দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। সংসার খরচে ব্যয় হয় আরো ৫০ হাজার টাকা।
সন্তানদের লেখাপড়া এবং চিকিতসায় ব্যয় হয় আরো ১৫/২০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তিনি প্রতিমাসে খরচ করেন লাখ টাকার কম নয়। অথচ: বেতন পান ২৫ হাজার টাকা। তাহলে বাকী ৭৫ হাজার টাকা তিনি কোথায় পান? কিভাবে তিনি রাজকীয় জীবন যাপন করেন? তার আয়ের কি অন্য কোন উতস আছে? নাকি তিনি ভয়ংকর কোন কালো অপরাধের সাথে জড়িত? এ প্রশ্ন আজ গোটা তুলাগ্রাম ফরিদপুরবাসীর। এখানেই শেষ নয়। সামান্য ড্রাইভারের চাকরী করে তিনি ঢাকার ফ্ল্যাটে কোটি টাকার আসবাবপত্র ক্রয় বরেছেন। ফরিদপুরে নিজ এলাকায় জমি কিনে ২য় তলা বাড়ী নির্মাণ করেছেন।
স্থাপন করেছেন একটি ডেইরী ফার্ম। যেটা তার বাবা ও ছোট ভাই পরিচালনা করেন। তুলাগ্রামে অবস্থিত ইমরান ডেইরী মিল্ক নামের এই ডেইরী ফার্মে শতাধিক গাভী রয়েছে। যার মুল্য কোটি টাকা। অপরদিকে তিনি তার স্ত্রী রেহানা বেগমের নামে ঢাকার বসিলা ভেড়িবাধ এলাকায় যৌথ মালিকানায় ১০ তলা ফ্ল্যাট বাড়ী নির্মাণ করছেন। এখানেও তিনি কোটি টাকা ইনভেষ্ট করেছেন। এ ছাড়াও আছে ২ খানা হায়েস মাইক্রোবাস। আছে লেটেষ্ট মডেলের মোটর সাইকেল।
তার সন্তানদের জন্মদিন পালিত হয় ঢাকা শহরের ফাইভ স্টার বা থ্রিষ্টার হোটেলে। স্ত্রী রেহানা বেগমকে ১০/১৫ ভরি স্বর্ণালংকার কিনে দিয়েছেন। যখন তখন তিনি এমপির গাড়ী নিয়ে নিজ এলাকায় চলে যান। ব্যবহার করেন এমপির ওয়াকিটকি ও লাইসেন্স করা পিস্তল। এমপির ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে এলাকার থানা-পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে । দখল করেন যার তার জমি।
তুলাগ্রমে ডেইরী ফার্ম স্থাপনের সময় তিনি প্রতিবেশী জাহাংগীর এর পুকুর দখল করে নিয়ে মাটি ভরাট করেছেন। পুকুরের মালিক আজো তার জমির মুল্য পান নি। ফরিদপুরে মুক্তি পানি কোম্পানীর ডিলারশীপও নিয়েছেন তার নামে। তার ছেলে রিপন শেখের নামে ফরিদপুর হেলিপ্যাড মার্কেটে ২ টি দোকান ক্রয় করেছেন। আক্কাছের মোড়ে ২ টি দোকান ক্রয় করেছেন। বাহার মোড়ে ৩ টি দোকান ও একটি বাড়ী নির্মাণ করেছেন। যার মুল্য কোটি টাকার কম নয়।
এ ছাড়া মাগুরা স্টেডিয়াম মাকের্টে তার মেয়ে ও ছেলের নামে ২ টি দোকানের পজেশন ক্রয় করেছেন। মাগুরায় বাড়ী করার জন্য স্টেডিয়ামপাড়ায় ১০ শতাংশ জমিও কিনেছেন বলে শোনা যায়। এলজিইডিতে চাকরী করাকালে একখানা সরকারী মটর সাইকেল চুরি করে তার শ্যালককে প্রদান করেন। যার রেজি: নং ঢাকা মেট্রো ল-২৫-৯১৪৪। এটি এখন তার শ্যালক মুন্সীগঞ্জে ব্যবহার করেন। আরো একখানা চোরাই মটর সাইকেল তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
এই ড্রাইভারের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে এলাকাবাসীর ভাষ্যে জানা যায়, তার বাবা এই এলাকার তুলাগ্রামের আদী বাসিন্দা নন। শ^শুর বাড়ী এলাকায় এসে জমি কিনে বাড়ী নির্মাণ করেছেন। পিতার বাড়ী এলাকায় তাদের কোন বাড়ী ঘর বা নিজেস্ব জমা জমি ছিল না। ড্রাইভার ইমরানের বাবার নাম ইসাহাক শেখ । তিনি প্রথম প্রথম রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর নদী বা বিল বাওড় থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তার তিন টি ছেলে সন্তান রয়েছে । যাদের মধ্যে সবার বড় ড্রাইভার ইমরান। ছোট ছেলের নাম মোহাম্মদ শেখ এই ছোট ছেলেই ড্রাইভার ইমরানের সব ব্যবসা পরিচালনা ও সম্পত্তি রক্ষণা বেক্ষণ করেন।
আরো জানা যায় ,ড্রাইভার ইমরান যখন বেকার তখন তার একটা সরকারী চাকুরীর জন্য তার বাবা ফরিদপুর এলাকার সাবেক মন্ত্রী মো: মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই বিএনপি নেতা বাবর মিয়ার বাড়ীর কাজের মেয়ে রেহানার সাথে ইমরানের বিয়ে দেন। এই মোশাররফ হোসেনের পরিবারের সাথে তাদের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এরপর সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের তদবীরে এলজিইডির একটি প্রকল্পে মাষ্টাররোলে ড্রাইভার পদে চাকুরী পান ইমরান। অর্থ্যাত মন্ত্রীর ভাইয়ের বাসার কাজের মেয়ে রেহানাকে বিয়ে করার বদৌলতে চাকুরী জোটে ইমরানের ভাগ্যে।
এরপর সে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চাকুরী নেওয়ার জন্য ফরিদপুরের সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের মাধ্যমে তদবীর করে ড্রাইভার পদে চাকুরী পেয়ে যান। তখন তিনি প্রধান মন্ত্রীর এপিএস-২ সাইফুজ্জামান শিখরের ডিউটি করার সুযোগ পান। সেই থেকে তিনি শিখরের ডান বাম হাত হয়ে কাজ শুরু করেন। প্রধান মন্ত্রীর এপিএসের ড্রাইভার হওয়ার সুয়োগে শিখরের তদবীরে তার ছোট ভাই মোহাম্মদ শেখকে কৃষি ব্যাংকে চাকুরীও দিতে সক্ষম হন। কিন্তু সে অফিস না করেই বেতন ভাতা নিচ্ছেন। শিখর যে ১০ বছর প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস-২ ছিলেন ওই সময়ে ড্রাইভার ইমরান প্রথমে লাখপতি পরবর্তীতে কোটিপতি বনে যান। তিনি এলাকায় (তুলাগ্রামে) বড় বড় গরু কুরবানী দিতে থাকেন।
এলাকার মানুষের মধ্যে শাড়ী,লুঙ্গী ও কম্বল বিতরণ করে নিজেকে শিল্পপতি হিসাবে প্রচার করেন। এলাকার মানুষ তাজ্জব বনে যায় তার এসব কর্মকান্ড দেখে। প্রশ্ন ওঠে, তার এতো ধন সম্পদের আয়ের উতস কি? অবৈধ অর্থ সম্পদের গরমে তিনি এ পর্যন্ত ৩ টি বিয়ে করেছেন বলে তথ্য পাওয়াগেছে। ২ টি স্ত্রীকে এখনো লুকিয়ে রেখেছেন। একটি স্ত্রী ৩ সন্তানসহ ঢাকায় মানবেতর জীবর যাপন করছেন। তাদের তিনি ভোরণ পোষণ দেননা।
অকথ্য নির্যাতন করেন বলে জানাগেছে। এই স্ত্রী একবার ৩ সন্তানসহ ফরিদপুরের তুলা গ্রামের বাড়ীতে এলে ড্রাইভার ইমরান তার স্ত্রী রেহানা,তার ছোট ভাই মোহাম্মদ শেখ কার কারা ও মা মিলে নির্যাতন করে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দেন। এ সময় সেখানে এলাকার সাবেক মেম্বার হায়দার উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান,ঘটনাটি সত্য। সেই স্ত্রীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাগুরা শহরের ্এ্যানি বেকারীর পাশে রানী নামে তার একজন স্ত্রী ও আছে বলে শোনা যায়। সে নাকি ছাত্র লীগ নেত্রী ছিল। তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীর বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
(আগামী পর্বে পড়ুন বাকী অংশ)।
মন্তব্য করুন