গণপূর্ত অধিদপ্তরে তিনি ডিপ্লোমা মাহাবুব নামে পরিচিত। কিন্তু কাজে তাঁর পেছনে ছোটেন গণপূর্তের চলতি দায়িত্বে প্রধান প্রকৌশলী কথিত পীর শামীম আখতারও। আলাদিনের যাদুর মতো হঠাৎই প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পাওয়া শামীম একদমই দেখতে পারতেনা এই মাহাবুবকে। ডাকতো ‘ডিপ্লোমা’ বলে। পাবলিক লাইব্রেরী, হাইকোর্টসহ কয়েকটি কাজের টেণ্ডার শামীম আখতারের পছন্দের লোককে দিয়ে তিনিই এখন প্রিয়জন হয়ে উঠেছেন এই শামীমের।
ঢাকা ডিভিশন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব এসএসসি পাসের পর পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। পরে ডুয়েট থেকে বিএসসি পাস করে ২২তম বিসিএস-এ যোগ দেয়। যোগদানের পর থেকে নানা অপকর্মের এই হোতা মাহাবুব বেশিরভাগ সময়ই ঢাকাতে চাকুরি করছেন। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ নগর গণপূর্ত বিভাগ, শেরেবাংলানগর-১ মেডিকেল সাব ডিভিশন, নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ, মেডিকেল গণপূর্ত বিভাগ এবং এলাকার বিচারে সবচে’ বড়ো ডিভিশন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে শতকোটি টাকা কামিয়ে এখন গণপূর্ত মেট্রো জোনের স্টাফ অফিসার হিসেবে ছড়ি ঘুরাচ্ছেন সর্বত্র।
চলতি দায়িত্বেও প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে বড় অংকের লেনদেন। গণপূর্তের ঢাকা বিভাগ-৪ এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছে নগদ টাকার বিনিময়ে। মোহাম্মদ শামীম আখতারের সময়ে বরাদ্দ হওয়া এই টাকা কোথায় খরচ করা হয়েছে তার হিসাব দিতে পারবেন না নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব। বিষয়টি তদন্ত করলে ভুয়া বিল-ভাউচারের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যাবে। আর এ কারনেই তিনি নিজেকে সেইফ পোস্টিংয়ে রেখে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। নিজের ভায়রা নামে গণপূর্তের লাইসেন্স করে কামিয়ে দিচ্ছেন শত শত কোটি টাকা।
মাহাবুবের এমন ভুয়া বিল-ভাউচার আর টেন্ডারের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক প্রশ্ন তুললে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে সতীনাথের অফিস ডেকোরেশন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে কোনঠাসা কওে রেখেছিলেন। অথচ গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারসহ গণপূর্তে একডজন অফিসারের অফিস ডেকোরেশন করেছেন এই দুর্নীতিবাজ মাহাবুব। শামীম আখতারের আস্কারা পেয়েই মাহাবুব একের পর এক দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। শামীমের ঘণিষ্ঠ কিংডম বিল্ডার্সের নুসরতকে কাজ দেয়ার জন্য প্রায় ভেঙ্গে পড়তে যাওয়া র্পূর্ত ভবনে অপ্রয়োজনীয় ডেকোরেশন করে কোটি কোটি টাকার অপচয় করেছেন।
মেট্রো জোনে পোস্টিংয়ের আগে মাহাবুব পাবলিক লাইব্রেরী ভবনের সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার টেণ্ডার করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী আগ্রহী দরপত্রদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ শতাংশ কম দরপত্র দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। এই কাজ সাড়ে আট শতাংশ বেশি দরে কাজ দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে সাড়ে ১৮ শতাংশের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সরকারের। নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এনডিই নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। যাতে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির এই সময়ে এতো বেশি টাকা কার্যাদেশ দিয়ে সংশ্লিষ্টরা অতিরিক্ত দরের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
এই প্রকল্প থেকে কথিত পীর শামীম আখতার তার সহযোগী কিংডম বিল্ডার্সের নুসরতের মাধ্যমে সাত কোটি টাকা নিয়েছেন। যার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এই মাহাবুব। এরপর থেকেই সকাল বিকাল মাহাবুবকে দেখা যায় প্রধান প্রকৌশলীর আশেপাশে। প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার মাহফুজ আর মাহাবুব মিলেই চালান প্রধান প্রকৌশলীর অফিস।
এসব বিষয়ে মাহাবুবের মন্তব্য জানতে তাকে গত এক সপ্তাহ ধরে ফোন দিলেও তিনি ধরছেন না। এ বিষয়ে ৪ নম্বর ডিভিশনের স্টাফ অফিসার মো. তাজুল ইসলাম বলেন, স্যার অপরিচিত নাম্বারের ফোন ধরেন না। আপনার নাম্বার হয়তো স্যারের মোবাইলে সেভ করা নেই। তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন, পাবলিক লাইব্রেরীর টেন্ডারে সাড়ে আট শতাংশ বেশি দরে দেয়া হয়েছে। স্টাফ অফিসার হিসেবে তাকেই এসবের কাগজপত্র ঠিক-ঠাক করতে হয়।
বর্তমানে চার নম্বর ডিভিশনের দায়িত্বে রয়েছেন বহুল আলোচিত নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু। তিনিও মাহাবুবের পথেই হাটছেন এবং পূর্ত ভবনের অপ্রয়োজনীয় নির্মাণ কাজের বিল দিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন