গণপূর্ত অধিদপ্তরের চলতি দায়িত্বের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার ব্যক্তিগতভাবে পীর এবং সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত থাকলেও তার এই সততার সুযোগের পুরোটাই কাজে লাগাচ্ছেন গণপূর্ত ঢাকা মেট্রোপলিটান জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নাছিম খান। সংস্থাপনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীও শহীদুল আলমও স্বচ্ছ মানুষ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নাছিম খান সিন্ডিকেটের সামনে অসহায় এই দুই কর্মকর্তা। গণপূর্তের বদলি বাণিজ্য সিন্ডিকেটের পুরো নেতৃত্ব দিচ্ছে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।
বিসিএস ১৫ ব্যাচের মধ্যে গ্রেডেশন তালিকায় সবচে’ নিচে অবস্থান করা মো. নাছিম খান এখন স্বপ্ন দেখছেন চলতি দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ শামীম আখতারকে সরিয়ে নিজেই ওই চেয়ারে বসতে। নিজের সাঙ্গপাঙ্গদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, সাত নম্বরের শামীম চিফ ইঞ্জিনিয়ারের চলতি দায়িত্বে থাকতে পারেলে ১২ নম্বরে থাকা আমি কেনো থাকতে পারবো না। উপরের কাউকে ডিঙ্গিয়ে তো শামীম রেগুলার হতে পারবে না। আমিও রেগুলার হবো না। সমস্যা কোথায়। তোমরা টাকা দেও। আমি ব্যবস্থা করছি।
পোস্টিং নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর বদলি ক্ষমতা সিজ করেছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন পরে তা ফিরিয়ে দেয়ার পর গণপূর্তে নিয়মিত পোস্টিং শুরু হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই বাণিজ্য পেতে বসেছেন নাছিম খান। বর্তমানে বাংলাদেশ গণপূর্ত ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি বা বাপিডিপ্রকৌস খুব শক্তিশালী সংগঠন ও নেতৃত্ব থাকায় তারা বিভিন্ন পোস্টিংয়ে নিজেদের চয়েজ দিয়ে থাকে। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে একটা ঠান্ডা লড়াই রয়েছে।
সম্প্রতি নাছিম খান বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে বিকল্প নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার একটি পরামর্শ দেন। এতে প্রধান প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর (সংস্থাপ ও সমন্বয়) সায় থাকলেও এর নেপথ্যে ব্যবসা ফেদে বসেন নাসিম খান। বাংলাদেশ গণপূর্ত ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি বা বাপিডিপ্রকৌস এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর সরকারকে নিয়ে বিকল্প সমিতি একটিভ করার অংশ হিসেবে সম্প্রতি যে অর্ডারগুলো হয়েছে তাতে নাছিম খানের লিস্টগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রধান প্রকৌশলী বদলির ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর ৬৯জন প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯০ ভাগ প্রকৌশলী কোন না কোনভাবে টাকা খরচ করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ প্রধান প্রকৌশলী এসব ঘুষের টাকা ধরেন না। পুরোটাই যায় নাছিম খানের পেটে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী সহকারী প্রকৌশলী পদে বদলির জন্য নাসিম খানঢাকা গণপূর্ত মো. সেলিম হোসেন, মো. আবুল কাশেম চৌধুরী, মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও মো. সেকান্দার জোবায়েদ আলীর কাছ থেকে। এর মধ্যে মো. সেলিম হোসেনকে ঢাকা গণপূর্ত মেট্রো জোন, মো. আবুল কাশেম চৌধুরীকে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩. মো. আনোয়ারুল ইসলামকে ঢাকা গণপূর্ত মেট্রো জোন ও মো. সেকান্দার জোবায়েদ আলীকে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-২ এ বদলি করা হয়েছে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ গণপূর্ত ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি বা বাপিডিপ্রকৌস নেতারা প্রধান প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেছেন। তারা হাতে নাতে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরলেও নির্বিকার প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার। নিজের কনফার্ম না হওয়া এবং ব্যাচমেটদের মধ্যে নাছিম খানকে তার আজ্ঞাবহ মনে হওয়ায় তিনিও এসব পরোক্ষ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।
কর্মকর্তারা জানান, নাছিম খানের এসব দুর্নীতির বিষয়ে মোহাম্মদ শামীম আখতার ও শহীদুল আলম অবহিত থাকলেও নিজেদের প্রভাব বলয় ধরে রাখার জন্য নিশ্চুপ রয়েছেন। ১৭ ব্যাচের গ্রেডেশনে শহীদুল আলম সবার উপরে থাকায় তার প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি কোন বিরোধে জড়িয়ে সে সম্ভাবনা নষ্ট করতে চাইছেন না।
একজন উপ-সহকারি প্রকৌশলীর পদোন্নতির প্রস্তাব মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর পর পদোন্নতি হওয়ার আগেই তার কর্মস্থলে অন্য একজন কর্মকর্তাকে বদলী করার ঘটনার নায়ক ছিল এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। গত বছরের ৪ জুলাই কুমিল্লা গনপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ হোসেনকে ঢাকার গণপূর্ত ই/এম সার্কেল-২ এর উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ এর স্থলে বদলী করা হয়। বদলী আদেশে বলা হয়েছে পদোন্নতি হওয়া সাপেক্ষে মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ এর পদ শূন্য হওয়ার পর বদলী আদেশটি কার্যকর হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠানোর পর তা অনুমোদন হওয়ার আগেই ঐ পদে আরেকজনকে বদলী করার পেছনো মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। তা না হলে ঢাকার বাইরে থেকে কেন হঠাৎ একজনকে বদলী করা হলো যে পদে এখনো পদোন্নতি হয়নি। সে সময়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন ও সমন্বয়) মো. নাছিম খান এবং গণপূর্তের বদলী বানিজ্যের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট আরও বেশ কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলী করেন। অভিযোগ রয়েছে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নাসিম খান নিজে মেট্রোপলিটন জোনে বদলী হওয়ার খরচ তোলার জন্য উপ-সহকারি শেখ মোহাম্মদ হোসেনকে এবং অন্য আরও তিন জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে সুবিধাজনক কর্মস্থলে বদলীর ব্যবস্থা করেন। প্রধান প্রকৌশলী একই ব্যাচের এবং ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ায় তিনি এই সুযোগ নিয়েছেন। সে সময়ে নাছিম খান এবিষয়ে বলেছিলেন, বদলীর ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম বা আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়। পদ শূন্য হওয়ার আগে এধরনের বদলীর রেওয়াজ আগেও রয়েছে।
এ ব্যাপারে নাছিম খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বদলির অর্ডারের পর থেকে আর ফোন ধরছেন না। এমনকি নিজ অফিসেও বসছেন না।
মন্তব্য করুন