বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান কার্যালয়ের সপ্তম তলায় নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল)আশরাফ এর কক্ষে মতিঝিল থানা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ও জাতীয় কমিশন গঠন দাবি বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ন আহবায়ক সোহেল রানাকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর এপিএস আ ন ম আহমাদুল বাশার শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। গত ১৭ই ডিসেম্বর-২৩ইং রবিবার এই ঘটনাটি ঘটে। ছাত্র লীগ নেতা সোহেল রানা এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমি বিআইডব্লিউটিএর একজন তালিকাভুক্ত ঠিকাদার ।
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ বিআইডব্লিউটিএ ভবনে কাজের খোঁজে জনৈক গাজী ভাইকে নিয়ে সপ্তম তলায় নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আশরাফ হোসেনের কক্ষে প্রবেশ করি। স্যারের সাথে কুশলাদি বিনিময় করার কিছুক্ষণ পরেই উক্ত কক্ষে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস আ ন ম আহমাদুল বাসার প্রবেশ করেই আমার কাছে জানতে চান, তুই এখানে কি করিস? তোকে এই ভবনে কে বলছে আসতে? এই কথা বলেই আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুসি লাথি, মারতে থাকে এবং বলে আগামী পাঁচ বছর যেন এই ভবনের তোর ছায়াও না দেখি। এই ভবনের আশেপাশে আজকের পর যদি তোকে দেখি তা হলে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেব। এই বলে মারতে মারতে আশরাফ হোসেনের রুম থেকে টেনে হিঁচড়ে সিড়ির সামনে এনে বলে এই দিক দিয়ে দ্রত নেমে যা, পিছনে ফিরে তাকাবি না”।
তিনি আরও বলেন, এপিএস বাশার আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পর ঘটনাটি আমি তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মহোদয়কে তার মুঠোফোনে অবগত কারার পর তিনি বলেন, বিষয়টি আমি পরে দেখবো। এই বলে মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্র লীগ নেতা রানা বলেন, আমার সাথে এপিএস বাসার এর সাথে কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। আমি নিজেও জানিনা তিনি কি কারণে আমার উপর তিনি হামলা করেছেন। আমি মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও জাতীয় কমিশন গঠন দাবি বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ন আহবায়ক। আমার সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য আমার নেত্রী ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আশরাফ হোসেন মুঠো ফোনে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন রানার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, রানা অত্যন্ত ভদ্র ছেলে, আমাকে দেখলে সব সময় সম্মান করে।
ঘটনার সময় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী গাজী’র মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৮ তারিখ রবিবার বিকাল আনুমানিক সাড়ে চার টার সময় ডিআইডব্লিউটি এর সপ্তম তলায় নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ হোসেনের কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা রানার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সত্য। নৌ প্রতিমন্ত্রী এপিএস বাশার কোন কারণ ছাড়াই কক্ষে প্রবেশ করেই রানাকে এলোপাতাড়ি ভাবে কিল, ঘুসি, লাথি মারতে মারতে টেনে হিচড়ে কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যান।
গাজী আরো বলেন, বাশার হতে পারেন একজন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস কিন্তু তিনি তো আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার পরে রানাকে বলেছি মতিঝিল থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য। আমি রানার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।
এই বিষয়ে জানতে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর এপিএস আ ন ম আহমাদুল বাশার এর মুঠোফোনে বারবার ফোন দিয়ে ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো প্রকার সাড়া পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিএ এর বেশ কয়েকজন ঠিকাদার ও কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এপিএস বাশার সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন বিকাল ৪ ঘটিকার পর তার নিজস্ব ঠিকাদার ও ব্যক্তিগত ক্যাডার বাহিনী নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে প্রবেশ করে বিভিন্ন ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের কক্ষে গিয়ে তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে থাকেন।
এই বিষয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কিন্তু এপিএস বাশার প্রতিনিয়ত ভবনে এসে তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার জন্য বেআইনিভাবে আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করেন। তার এমন আচরণে আমরা বিব্রত। এমনকি তার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে সরকার ও দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে সঠিক নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে স্বচ্ছতার মাধ্যমে দরপত্রের আলোকে কোনো ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হলেও তার বাহিনীর হাতে অপমানিত হতে হয়।
বিআইডব্লিউটিএ ভবনের বেশ কয়েকজন তালিকাভুক্ত ঠিকাদার এর সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০ লক্ষ টাকার উপরে যে কোন কাজে এপিএস বাশারকে কাজের বিপরীতে কমিশনের টাকা না দিলে কাজ পাওয়া যায় না। উক্ত ভবনে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আক্ষেপ করে বলেন, বিগত পাঁচ বছর থেকে টেন্ডার কাজে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে এপিএস বাশার হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক শত কোটি টাকার উপরে। অবৈধপথে উপার্জিত এসব টাকায় তিনি স্ত্রী ও তার আত্মীয় স্মজনের নামে ঢাকা শহরে ৭/৮ টি ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রয় করেছেন। তার এইসব অনিয়ম -দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা কলার জন্য এপিএস বাশার এর সেল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
মন্তব্য করুন