প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এলডিডিপি প্রকল্পের অর্থ হরিলুট চলছে। বিশ্বব্যাংক ও সরকারের অর্থায়নে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৫ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসলেও লক্ষ্যমাত্রার ৩৫ শতাংশও অর্জিত হয়নি। প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মৎস ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। তবে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়নি। কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারনে যথাসময়ে ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদন ও মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছে। প্রকল্পটি যে উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল তা কতিপয় দুর্র্নীতিবাজ সরকারী অর্থ আত্মসাৎকারী কর্মকর্তাদের কারণে ভুলন্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং বর্তমান সরকারের একটি মহত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসকল অনিয়মের মূল কারিগর প্রকল্পের পিডি মো: আব্দুর রহিম, সিটিসি ডাঃ গোলাম রাব্বানী, ডিপিডি ড. মো: সাকিফ উল আযম, সাবেক ডিপিডি মুস্তানুর এবং সাবেক ডিজি ডাঃ মো: এমদাদুল হক তালুকদার। এ সব কর্মকর্তা নানা কৌশলে প্রকল্পের শতশত কোটি টাকা আত্মসাত করেও অধরা রয়েছেন।
সম্প্রতি এই প্রকল্পের জন্য ১১৫ টি পিকআপ গাড়ি ক্রয়ের দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্রে বেশ কয়েকটি কোম্পানী অংশ গ্রহন করে। দরপত্রে স্টিমেটে প্রতিটি পিকআপ গাড়ীর মূল্য ৮০ লক্ষ করে ১১৫ টার জন্য ৯২ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে।
যদিও একই মানের পিকআপের বর্তমান বাজার মুল্য ৫৫ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা প্রতিটি। এখানে প্রতিটি পিকআপ গাড়ি ক্রয়ে ২০ লক্ষ টাকা বেশি ধার্য করা হয়েছে। ফলে ১১৫ টি পিকআপ গাড়ির জন্য সরকারের অতিরিক্ত ২৩ কোটি গচ্চা যাবে। আবার এই ১১৫ টা পিকআপ গাড়ির জন্য ইকুইপমেন্ট বা ইন্স্ট্রুমেন্ট কেনার জন্য বরাদ্দ রয়েছে মোট ৬ কোটি ৬১ লাখ ৫১ হাজার টাকা। অথচ এই ইন্স্ট্রুমেন্টগুলো উন্মুক্ত বাজারে মাত্র ৩ কোটি টাকায় ক্রয় করা সম্ভব।
একটি বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, দেশের সুনামধন্য এসিআই মটরস লি: কোম্পানী থেকে পিকআপ গাড়িগুলো না কিনে মিতসুবিশু কোম্পানীর কাছ থেকে উচ্চমূল্যে পিকআপগুলো ক্রয় করা হচ্ছে। আর এর পেছনে রয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পিডি আব্দুর রহিম ও সিটিসি ডাঃ গোলাম রাব্বানী এই কমিশন বাণিজ্যের হোতা বলে শোনা যাচ্ছে। মিতসুবিশু কোম্পানী দরপত্রের সমুদয় শর্ত পালন না করলেও তাদেরকেই ক্রয় আদেশ দেওয়ার জন্য পেপার ওয়ার্ক চলছে। দরপত্র মূল্যায়ণ কমিটির এই সিদ্ধান্তই কার্যকর করা হবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।
এ ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ফিড, ট্রলি,বেলচা, ও ফ্লোরম্যাট ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য মোট ৩টি প্যাকেজে (জি-২২এ, জি-২৩, জি-৩১) মোট ১৮৬ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকল্পের ৫ বছরে মালামালগুলি ক্রয় করা হয়নি। এখন প্রকল্পের শেষ বছরে হরিলুট করার জন্য ৩ টি প্যাকেজে দরপত্র আহবান করা হয়েছে।
সরকারী আর্থিক বিধি অনুযায়ী উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এড়ানোর জন্য স্পিল্টআপ করা যাবে না। কিন্তু আলোচ্য ক্রয়ে একই মালামাল একই কাজের জন্য একত্রে ক্রয় না করে পৃথকভাবে ক্রয় করা হচ্ছে। কারণ একত্রে ক্রয় করলে সরকারের ক্রয় কমিটির অনুমোদন লাগবে এবং বিষযটা জানাজানি হয়ে যাবে। এখন ১ টি প্যাকেজের মালামাল নিয়ে বাকী ২ টি প্যাকেজ এর টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হবে। কারণ প্রকল্পের শেষ সময়ে সমুদয় মালামালের ক্রয়ের কোন প্রয়োজন নেই।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রকল্প পরিচালক মো: আব্দুর রহিমকে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
মন্তব্য করুন