ম্যানিলা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় ও আনন্দমুখর পরিবেশে বাংলাদেশ দূতাবাস, ম্যানিলার আয়োজনে ফিলিপাইনে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ম্যানিলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অভিজাত একটি পাঁচ তারকা হোটেলের বলরুমে এক জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারী জেসাস ডমিঙ্গো। সিনেটর ফ্রান্সিস টলেন্টিনো, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাতেমা ইয়াসমিন, কূটনৈতিক কোর প্রধান চার্লস ব্রাউনসহ ৪০টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন সিটি মেয়র, বিভিন্ন আন্র্Íজাতিক সংস্থার প্রধান, ফিলিপিনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি বিভাগসমূহের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সদস্যবৃন্দ এবং আন্র্Íজাতিক ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীসহ তিন শতাধিক অতিথি এই অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। অতঃপর রাষ্ট্রদূত এফ. এম. বোরহান উদ্দিন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মা-বোনদের চরম আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ফিলিপাইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশে পরিনত হয়েছে এবং ২০৩৮ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ পর্যায়ের অংশগ্রহণ এবং মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক দশ লাখেরও বেশি বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত করেছে। তিনি বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণভাবে যতদ্রুত সম্ভব স্বদেশে প্রেরণের জন্য আসিয়ানভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতা কামনা করেন। এ মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের ফরেন সার্ভিস একাডেমীর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুথদেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্র্পক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আন্ডারসেক্রেটারী জেসাস ডমিঙ্গো বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশের সাথে ফিলিপাইনের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে কৃষি, বাণিজ্য, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিবিধ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সেই সাথে তিনি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রদূত বিশেষ অতিথিদের সাথে নিয়ে কেক কাটেন। অতঃপর এক জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। মনোজ্ঞ এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফিলিপিনো নৃত্য শিল্পীদের দ্বারা নজরুল সঙ্গীত ও লালন গীতির সাথে চমৎকার নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
অভ্যর্থনা হলের প্রবেশদ্বারে বাংলাদেশের কৃষি, গার্মেন্টস, পাট, চামড়াসহ অন্যান্য সম্ভাবনা খাতসহ পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের স্থির চিত্র সম্বলিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে দূতাবাস। সেই সাথে অভ্যর্থনা হলটি ফুল আর রঙিন ব্যানারে বর্নিল সাজে সজ্জিত করা হয়। অনুষ্ঠানের নেপথ্যে যন্ত্রসঙ্গীতের সাথে সাথে বাংলাদেশের পর্যটন, উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বিষয়ক বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
এছাড়া, সকালে বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং দূতালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কতর্ৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ, মহান স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য বিষয়ে আলোচনা এবং বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
ফিলিপাইনের বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক ‘ফিলিপাইন স্টারথ- এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ০৩ পৃষ্ঠাব্যাপী বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়।
মন্তব্য করুন