নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ এপ্রিল ২০২৪, ৮:২৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈশাখী আবাহনে মানবের জয়গান

মোঃ আব্দুল কুদ্দুস,
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি।।

অতীতের সকল ব্যর্থতা, গ্লানি মুছে ফেলার প্রত্যয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে- ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…’।

বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধের ক্ষয় আর মানুষে মানুষে দূরত্ব ঘুচিয়ে সম্প্রীতির সাধনায় বাঙালি মনুষ্যত্বের জয়গান বাজছে শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বছরের প্রথম সকালে। নতুন দিনের প্রত্যয় আর অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার বলিষ্ঠ উচ্চারণে ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।

আজ সকাল সাড়ে দশটায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-৩ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: শাহ্ আজমের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্যভাবে আয়োজন করে মঙ্গল শোভাযাত্রা। একাডেমিক ভবন-৩ থেকে শোভাযাত্রা শাহজাদপুর সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার একাডেমিক ভবন-৩ এ ফিরে আসে। বর্ষবরণের দিনে দ্বিতীয় অংশে ছিল অতিথিবর্গের সাথে রবীন্দ্র উপাচার্য শাহ্ আজমের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন।

এরপর আলোচনা সভায় উদ্বোধক হিসেবে রবীন্দ্র উপাচার্য শাহ্ আজম বলেন, দীর্ঘকাল ধরে নববর্ষ পালনের বাঙালি সংস্কৃতিটি একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসাবে পালিত হয়ে এসেছে। এরপর অশুভ রাজনীতির লক্ষ্য পূরণ করতে আইয়ুব খান এদেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরির জন্য বাঙালির সাংস্কৃতিক আয়োজনকে হিন্দু সংস্কৃতি বলে প্রচার করে দেওয়াল তুলতে চেয়েছিলেন। ভারতবর্ষে উপনিবেশিক শাসনামলেও এই কাজটি অন্যভাবে করার চেষ্টা ছিল ভারতের ব্রিটিশ শাসকেরা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য বিভাজন নীতি প্রয়োগ করে উপনিবেশিক ইংরেজ শাসক। এসব কাজে সমাজে ভাঙন তৈরির জন্য সুবিধালোভী মোল্লা ও পুরোহিতদের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ বাঙালিকে বিভাজিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সরল বাঙালির প্রকৃত ধর্মচর্চার সীমাবদ্ধতাকে পুঁজি করে একদিকে মনস্তাত্ত্বিক ভাঙন তৈরি করা হয়েছে, অন্যদিকে তাদের আচরণে নিজ নিজ ধর্মের সৌন্দর্য কালিমালিপ্ত হয়েছে। পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ছিলেন ইংরেজদের এই উপনিবেশিক মানসিকতার উত্তরাধিকার।

ব্রাহ্ম পরিবারে জন্ম নেওয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পূর্ব পাকিস্তানে পরিত্যাগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এভাবে বাঙালি সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানার আরেক অশুভ চেষ্টা দেখেছিলেন এদেশের সংস্কৃতি কর্মীরা। প্রতিবাদে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ছায়ানট। প্রতিবাদ হিসাবে রবীন্দ্র সংগীত ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সুরমূর্ছনা দিয়ে শুরু হয় বাঙালির নববর্ষ পহেলা বৈশাখ পালনের প্রথম প্রহর।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে পরাজিত শক্তিগুলো হাতগুটিয়ে বসে নেই। যুগ যুগ ধরে বাঙালি হিন্দু-মুসলমান অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে বাঙালি সংস্কৃতি লালন করে এসেছে। এর ভেতর অন্ধকার ছুড়ে দেওয়ার জন্য আইয়ুব খানের প্রেতাত্মারা হঠাৎ অতি ধর্মাশ্রয়ী করতে সচেষ্ট হয়েছে বাংলাদেশের সরল ও প্রকৃত ধার্মিক মানুষদের। ধর্মীয় আলোচনাগুলোতে বাঙালি মুসলমানকে ধার্মিক না করে ধর্মান্ধ করার চেষ্টা ছিল বলে উল্লেখ করেন রবীন্দ্র উপাচার্য প্রফেসর শাহ্ আজম।

উপাচার্য শাহ্ আজম আরও বলেন, বাংলা নববর্ষকে নির্দিষ্ট করতে ভূমিকা রেখেছিলেন অবাঙালি মোগল সম্রাট আকবর। জমিদারদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হতো। সম্রাট আকবরের অর্থমন্ত্রী টোডরমল বাংলার প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করলেন, যা অনেক পরে বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। ফসলের সঙ্গে এ দিনপঞ্জি সম্পর্কিত বলে সূচনায় ফারসি উচ্চারণে বাংলা সনের নাম হয়েছিল ‘ফসলি সন’। ফসলি সনের প্রথম মাসটি ছিল বৈশাখ। তাই সঙ্গত কারণেই পহেলা বৈশাখ হয়ে গেল ফসলি সনের প্রথম দিন অর্থাৎ বাঙালি নববর্ষের প্রথম দিন।

একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের পথ ধরেই নববর্ষ বাঙালি জীবনে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্ম দেয়। নববর্ষে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ‘হালখাতা’র রেওয়াজ শুরু করে। এসব আনুষ্ঠানিকতা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে যুগ যুগ ধরে। এভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে না দেখে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসাবেই মানতে হবে। এখানে বিশেষ কোনো ধর্মসম্প্রদায়ের সংস্কৃতির প্রতিফলন নেই, বরঞ্চ এর পুরোটাই সম্প্রদায় নির্বিশেষে একটি অভিন্ন বাঙালি সংস্কৃতি।

রবীন্দ্র উপাচার্য প্রফেসর শাহ্ আজম উল্লেখ করেন, পহেলা বৈশাখ উৎসবের অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে। মঙ্গল শোভাযাত্রার সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। এটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়েছে। বাঙালি হিসেবে এটি আমাদের জন্য গর্বের এবং পরমানন্দের। সেই আনন্দটি উদযাপিত করছি আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘চাঁদা’ হিসেবে লুঙ্গি দাবি, ওসিকে বদলি!

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচনের হাওয়ায় বইছে আনন্দের আমেজ

যশোরে শার্শায় ৩টি হাতবোমা উদ্ধার

কচু চাষ করে লাভবান শাহজাদপুরে কৃষক।অধিক ফলন ও লাভে কৃষকের মুখে হাসি

সিঙ্গাপুরে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের বিনিয়োগ রোডশো

বগুড়ার শেরপুরে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ ২০২৪ এর উদ্বোধন

বেনাপোল সহ ৪ টি বন্দরে ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীদের অনলাইন সুবিধা চার্জ এর শুভ উদ্বোধন

ডিমলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতবাড়ি ভস্মীভূত

স্কুল ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ,গ্রেপ্তার দুই

জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

১০

বগুড়া শেরপুর পৌরসভার মেয়র জানে আলম খোকা সাময়িকভাবে বরখাস্ত

১১

পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষার উপর জোর দিতে হবে : ভূমিমন্ত্রী

১২

গণমাধ্যম কর্মী আইন নিয়ে সাংবাদিক সংগঠন ও অংশীজদের মতামত নেয়া শুরু – তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

১৩

বগুড়া শেরপুরে আকিজ মোটরসের ডিলার পয়েন্ট ও প্রদর্শনী মেলা শুভ উদ্বোধন

১৪

উপজেলা নির্বাচন সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মুস্তাক আহমেদের মতবিনিময়

১৫

নওগাঁয় র‌্যাবের পৃথক অভিযানে ট্যাপেন্টাডল সহ আটক-৩

১৬

নড়াইলের লোহাগড়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

১৭

এনায়েতপুরে নিখোঁজের একদিন পর দুই শিশুর লাশ উদ্ধার

১৮

পুলিশ গেজেট ভূক্ত সম্পত্তির মামলা তদন্ত করলেন ওয়ারেন্ট যুক্ত আসামিদের নিয়ে

১৯

হযরত একদিল শাহ্ (রাঃ) এর নামে তিন একর সম্পত্তি থাকলেও মাজার সংস্কার কাজে নেই উন্নয়ন।

২০