নওগাঁয় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে সালাউদ্দিন ওরফে টনি (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড রায় দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। সোমবার ২২ এপ্রিল দুপুরে নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ এই রায় দেন।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত সালাউদ্দিন নওগাঁ জেলার পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল খালেক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালত ও মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ধানসা গ্রামের আবু কালামের মেয়ে তুকাজ্জেবার (২৪) সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের সালাউদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সালাউদ্দিন তুকাজ্জেবার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। ২০২০ সালের ২৯ জুন তুকাজ্জেবা স্বামী সালাউদ্দিনকে নিয়ে বাবার বাড়ি নিয়ামতপুরের ধানসা গ্রামে বেড়াতে আসেন। পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুড় বাড়িতে থাকা অবস্থায় ১জুলাই সালাউদ্দিন তার স্ত্রী তুকাজ্জেবার গলায় কাঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুত্বরভাবে জখম করে। ওই দিন সকাল সাড়ে ৫টার দিকে তুকাজ্জেবা ও সালাউদ্দিনের ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ পেয়ে তুকাজ্জেবার বাবা ও মা বাইরে থেকে ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে প্রতিবেশি রবিউল ইসলাম লাথি মেরে দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তুকাজ্জেবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় সালাউদ্দিনের হাতে কাপড় কাটার কাঁচি দেখতে পায় তারা। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তুকাজ্জেবাকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্ত্রীকে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন সালাউদ্দিন কে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় নিহত তুকাজ্জেবার বাবা আবু কালাম বাদীয় হয়ে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়ামতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ২০২২ সালের ২২ জুন আদালতে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৮জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্র ও আসামী পক্ষের দীর্ঘ সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ আসামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারী কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুল খালেক এবং আসামী পক্ষে মামলাটি শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আতিকুর রহমান। সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল খালেক বলেন, সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামীকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করেছেন। রায়ে হাইকোর্ট বিভাগে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা সাপেক্ষে আসামী সালাউদ্দিনকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। এ রায় হত্যা মামলার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।
মন্তব্য করুন