উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রিকৃত বণ্টননামার প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করেছেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ভূমি ভবনে ইনোভেশন শোকেসিং ২০২৪ (উদ্ভাবনী প্রদর্শনী ২০২৪) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ভূমিমন্ত্রী সহকারী কমিশনার (ভূমি)দের (এসিল্যান্ড) এই নির্দেশনা দেন। অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত দপ্তর ও সংস্থা এবং মাঠ পর্যায় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত ১০টি ইনোভেশন উদ্যোগ প্রদর্শিত হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইনোভেশন শোকেসিং অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, দেশে বেশিরভাগ পারিবারিক বিরোধের কারণ হচ্ছে ভাই-বোনদের মধ্যে রেজিস্ট্রিকৃত বণ্টননামা ছাড়াই মৌখিকভাবে বা সাধারণ কাগজে লিখে আপোষে সম্পত্তি বণ্টন করা। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে আপোষ ভেঙে গিয়ে কলহ শুরু হয়। তিনি উল্লেখ করেন, খতিয়ানে ভিন্নভিন্ন মালিকানাভিত্তিক দাগ উল্লেখ থাকলে অনেকাংশে বিরোধ এড়ানো সম্ভব।
এসময় এসিল্যান্ডদের মাঠ পর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার ‘কি-পারসন’ (key-person) উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের এ ব্যাপারে নিজ উদ্যোগে কাজ করতে হবে এবং প্রয়োজনে উদ্ভাবনী চিন্তা করতে হবে।
ভূমিমন্ত্রী পারিবারিক সম্পদ বণ্টনে বোনদের অধিকার নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, সরকারি জমি রক্ষার পাশাপাশি নাগরিকদের ন্যায্য জমির মালিকানাও রক্ষা করতে হবে। ভূমি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে যথাযথ কাজ করার আহ্বান জানান। মিথ্যা মামলার প্রতি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে ভূমিমন্ত্রী বলেন, আজকের স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনার পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বিগত দিনের উদ্ভাবনী উদ্যোগের ফলে। আগামীতে আরও অগ্রগতি আমরা লাভ করব বর্তমানের উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য। ভূমিসহ অন্যান্য সেক্টরে কার্যকরী উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তর সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ভূমি অফিসের কর্মকর্তাগণ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ, ল্যান্ড কনসালট্যান্টবৃন্দ এবং ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশন ভেন্ডার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ।
(২০২৩-২৪ পুরস্কার)
এর আগে, সকালে অনুষ্ঠানের শুরুতেই অংশগ্রহণকারীগণ সচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে নিজ নিজ ইনোভেশন শোকেস করেন। এ সময় অতিথিরা বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগের বিষয়ে অবহিত হন। পাঁচ সদস্যের বিচারক প্যানেল তাদের মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং বেশ কিছু মূল্যায়ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।
মূল্যায়নের ভিত্তিতে, শেরপুর ঝিনাইগাতীর এসিল্যান্ড মোঃ আশরাফুল কবীর কর্তৃক প্রস্তাবিত উদ্ভাবন ‘সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ভূমিতে ভূমি উন্নয়ন করের রশিদ প্রদান বন্ধকরণ এবং নামজারি অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারি স্বার্থ যাচাই সহজীকরণ’ ব্যবস্থা প্রথম স্থান লাভ করে।
বরিশাল বানারীপাড়া এসিল্যান্ড মুসতাহসিন তাসমিম রহমান অনিদ্র কর্তৃক প্রস্তাবিত উদ্ভাবন ‘অর্পিত সম্পত্তি ও খাস জমির টপোগ্রাফিক্যাল (Topographical) ডেটাবেইজ’ দ্বিতীয় স্থান এবং পাবনা সাথিয়ার এসিল্যান্ড মোঃ রিফাতুল হক কর্তৃক প্রস্তাবিত উদ্ভাবন ‘রিপোর্ট ট্র্যাকিং অ্যান্ড রিমাইন্ডার সিস্টেম (আরটিআরএস)’ তৃতীয় স্থান লাভ করে।
ভূমিমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ তুলে দেন।
(পূর্বের পুরস্কার)
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে একই সাথে ২০২০-২১ এবং ২০২২-২৩ সালের অর্থবছরের ইনোভেশন শোকেসিং এ স্থান লাভকারীদের পুস্কার দেওয়া হয়। ২০২১-২২ সালে করোনার কারণে ইনোভেশন শোকেসিং হয়নি। এছাড়া, ২০২০-২১ এর পর মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থা পর্যায়ে ইনোভেশন শোকেসিং অনুষ্ঠিত হয়নি। (*নিচে উদ্ভাবনী পুরস্কারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে কিংবা বদলী হয়ে ভিন্ন দপ্তরে কর্মরত আছে; নামের পাশে প্রস্তাবকালীন সময়ের পদবী প্রদর্শিত)
মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থা পর্যায়ে, ২০২০-২১ অর্থবছরের ইনোভেশন শোকেসিং-এ ‘ডিজিটাল রেকর্ড রুম’-এর জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় প্রথম, ‘অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর’-এর জন্য ভূমি সংস্কার বোর্ড দ্বিতীয় এবং ‘প্রশিক্ষণার্থীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন’-এর জন্য ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৃতীয় পুরস্কার পায়।
মাঠ পর্যায়ে, ২০২০-২১ অর্থবছরের ইনোভেশন শোকেসিং-এ মাদারীপুর সদর এসিল্যান্ড হোসনে আরা তান্নি ‘চান্দিনা ভিটি নবায়নে ডিজিটাল রেজিস্টার ব্যবহার এবং ক্যাম্পেইন’ এর জন্য প্রথম, মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানের এসিল্যান্ড ‘আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৭-১০ কর্মদিবসে নামজারী’-এর জন্য দ্বিতীয় এবং ঢাকার সাভারের মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ ‘অনলাইনে চান্দিনা ভিটি ব্যবস্থাপনা’ এর জন্য পুরস্কার পান।
মাঠ পর্যায়ে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ইনোভেশন শোকেসিং-এ চট্টগ্রাম বোয়ালখালী এসিল্যান্ড আলাউদ্দিন ‘ডিজিটাল ম্যাপ’-এর জন্য প্রথম, ফেনী সদরের এসিল্যান্ড লিখন বণিক ‘স্মার্ট রেকর্ড রুম এবং গুগল ক্লাউড ভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থাপনা’-এর জন্য দ্বিতীয় এবং শরীয়তপুর জাজিরার এসিল্যান্ড লাইলাতুল হোসেন ‘তদন্ত প্রতিবেদনসমূহ মনিটরিং করার জন্য অনলাইন রেজিস্টার (গুগলশিট)’-এর জন্য তৃতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত হন। ভূমিমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ তুলে দেন।
মন্তব্য করুন