গত ৮ মে কালারুকা ইউনিয়নের রায়সন্তোষপুর গ্রামের শাহ আব্দুল কাদিরের পুত্র বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিক মোস্তাকিম বিদ্যুৎ অফিসের কাজে জন্য বিদ্যুতের খুটিতে উঠার পরে ৩৩ কেভি লাইনে শক খেয়ে মুস্তাকিমের পুরো শরীর পুড়ে ঝলসে যায়। গত ২৩মে ২০২৪ তারিখে cwn24.com (ক্রাইম ওয়াচ নিউজ),এ প্রকাশিত “ছাতক বিদ্যুৎ (পিডিবি) অফিসের অবহেলায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে ঝলসে গেছে মোস্তাকিমের সারা শরীর” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় প্রত্রিকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। ছাতকে এর আগেও এমন ঘটনায় অনেককেই প্রাণ দিতে হয়েছে। একের পর এক বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিক দূর্ঘটনার শিকার হওয়ায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ীত্বহীনতাকে দায়ি করছেন স্থানীয়রা।
এই দুর্ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করা হলে এবিষয়ে বিভিন্নভাবে টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে সিন্ডিকেট গং।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সুমন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি চলছে। তার অপকর্মের সহযোগী হিসেবে প্রধান ভুমিকা রাখছে লাইন সাহায্যকারী মোস্তাফিজ ও সিন্ডিকেট নামে পরিচিত ছোট জাকির।
নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ আবেদন করলে
প্রতিটি ফাইলে গ্রাহকদের গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা এবং মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়ীতে গিয়ে মিটার চেক করার নাম করে মিটারের বিভিন্ন ক্রুটি দেখিয়ে, যেকোন কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন সহ মিটার সংযোজন বিল প্রক্রিায় ও বকেয়া বিলের কারণে লাইনচ্যুত, ভালো মিটার খারাপ বলে জরিমানা করার ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে কমিশন ও বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেওয়াই উক্ত সিন্ডিকেটের মূল কাজ।
মোস্তাফিজ লাইন সাহায্যকারী পদে চাকুরী করে বেতন পাচছেন, আবার মিটাররিডার পদে ছদ্মনাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবত প্রতি মাসে মাসিক বেতনের টাকা উত্তলন করে আসছেন।
একই ব্যক্তি কিভাবে দু’টি পদে চাকুরি করতে পারে এবিষয়ে স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যথযত ব্যাবস্থা গ্রহণ করে আইনের আওতায় এনে সুবিচারের দাবী জানান।
তাছাড়াও মিটাররিডিং সঠিকভাবে না করে মনগড়া ভুতুরে বিল তৈরী করে গ্রাহকদের হয়রানী করার অভিযোগও রয়েছে এই সিন্ডিকেট গং এর বিরুদ্ধে।
জানা যায় এই অনিয়ম দুর্নীতির মদদ দাতা সহকারী প্রকৌশলী সুমন চৌধুরী।
ছাতক বিদ্যুৎ অফিসের একজন কর্মচারী (নাম না বলার শর্তে) বলেন কতিথ সিন্ডিকেট সদস্য ছোট জাকির ছাতক বিদ্যুৎ অফিসের নির্দিষ্ট কোনো পদে চাকুরী করেন না, সত্যেও প্রতিদিন অফিসের কর্মকর্তাদের চেয়ারে বসে কাজ করেন ও অফিসের কর্মকর্তাদের মতো ডিউটি করেন বলে জানান।
যানাযায় গত কয়েক বছর ধরে এই সিন্ডিকেট গং এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে ছাতক বিদ্যুৎ অফিস।
গত ২০২২ সালের ৮ আগস্ট অনিয়ম, মিটার চুরি, ঘুষসহ নানান দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্মচারী পরিদপ্তরের উপপরিচালক রেহানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই অফিসের তিন কর্মচারীকে বদলি করা হয়। তখন কিছুদিন দুর্নীতি অনিয়ম থেকে বিরত ও নিরব ছিল।
কিছুদিন যাইতে না যাইতেই আবার মাথা নাড়া দিয়ে উটেছে এই সিন্ডিকেট গং। সহকারী প্রকৌশলী সুমন চৌধুরী, লাইন সাহায্যকারী মোস্তাফিজ ও সিন্ডিকেট হোতা ছোট জাকির এর নেতৃত্বে অফিসের সকল অনিয়ম, ঘুষসহ বিভিন্ন দুর্নীতি চলছে এখন ওপেন সিক্রেট।
এদিকে, গত ৮ মে ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিক্রয় বিতরন বিভাগ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিক মোস্তাকিম আহত হয়। তার পুরো শরীর পুড়ে ঝলসে যায়। সে কালারুকা ইউনিয়নের রায়সন্তোষপুর গ্রামের শাহ আব্দুল কাদিরের পুত্র ও মুক্তিযোদ্ধা শাহ আব্দুর রহমানের নাতি। সে বিদ্যুৎ অফিসের কাজে সুফিনগর এলাকায় কালারুকা ফিডারের বিদ্যুতের খুটিতে ১১কেভি লাইনের কাজ করতে গিয়ে ৩৩ কেভি লাইনে শর্ট খেয়ে খুটিতে আটকে যায়। সে খুটিতে কাজ করার আগে ১১ কেভি লাইন বন্ধ করলেও ৩৩কেভি লাইন বন্ধ করেনি অফিস কতৃপক্ষ। প্রায় একই ভুলের কারণে এখানে এর আগেও পৌর শহরের বাগবাড়ি গ্রামের মনু মিয়ার পুত্র মোহন মিয়া। উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বেতুরা গ্রামের শুকুর আলীর পুত্র ফারুক মিয়া। পৌর শহরের বাগবাড়ী- ইটখলা এলাকার মৃত মজর আলীর পুত্র শামীম আহমদ। ইসলামপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর-গনেশপুর গ্রামের আমিন উদ্দিনের পুত্র শাহ জামাল। বিদ্যুৎ শ্রমিক শাহজাহান মিয়া সহ আরোও অনেকেই পঙ্গু হয়েছেন, অনেকে প্রাণে দমারা গেছেন। একের পর এক বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিক দূর্ঘটনার শিকার হওয়ায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ীত্বহীনতাকে দ্বায়ী করছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে পুড়ে ঝলসে যাওয়া মুস্তাকিম এর মামা আলী আহমদ বলেন, নিউজ প্রকাশ করার পর থেকে বিদ্যুৎ অফিস চিকিৎসার খরচ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমি এখন সুদে-ধারে টাকা নিয়ে আমি আমার ভাগিনা (মুস্তাকিম)’র চিকিৎসা চালাচ্ছি।
মুঠো ফোনে কল দিয়ে ছোট জাকিরকে কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনি কোন পদে চাকুরী করেন? তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। তিনি বলেন, স্যারের সাথে কথা বলে কল দিচ্ছি বলে কল কেটে দেন। পরে তিনি আর কোন কল দেন নি।
এ বিষয়ে লাইন সাহায্যকারী মুস্তাফিজকে মুঠো ফোনে বলেন আমি সাহায্যকারী পদে চাকরি করি। সিন্ডকেট বা মিটারডিারের বিষয়ে আমি জানি না।
এ ব্যাপারে জানতে চোয়ে সহকারী প্রকৌশলী সুমন চৌধুরীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কল কেটে দেন।
এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ এর মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।
সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. জারজিসুর রহমান(রনি) বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন