আর্মড পুলিশ ইন্সপেক্টর বাদল এর নেতৃত্বে চাঁদাবাজি। চরম অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থবাণিজ্য করছে টার্মিনালে নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মী ও কর্মকর্তারা।
বেনাপোল কর্তৃপক্ষ চরম অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার চলছে বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে। ঘুষ, দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি সহ পাসপোর্ট যাত্রীর গায়ে হাত ও হয়রানির নানা অভিযোগ রয়েছে এখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর। আর এই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ এর ইন্সপেক্টর বাদল এর নেতৃত্বে চলছে এসব অনিয়ম ও অর্থ বানিজ্য।
গত এক সপ্তাহ ঈদের ছুটির কারনে এখানে উপচে পড়ে ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীদের ভীড়। রাত তিনটা থেকে ভারত প্রবেশের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রীরা আগে যাওয়ার জন্য। অথচ সকাল সাড়ে ৬ টার সময় স্থল বন্দরের গেট খোলার সাথে শুরু হয়ে যায় ধাক্কা ধাক্কির খেলা। যারা গভীর রাতে এসে লাইনে দাড়িয়ে যেতে চায় তার আগে যেসব লোক লাইন বাদে বিভিন্ন জায়গায় বিশ্রাম নেয় তারা টাকার বিনিময়ে এসব নিরাপত্তার কর্মীদের ম্যানেজ করে আগে প্রবেশ করে। আর যারা নিয়ম মেনে চলে তাদের হতে হয় হয়রানির শিকার। কখনো কখনো এসব নিরীহ যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলে এদের গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। আর এসব যাত্রীদের ভারত প্রবেশ করতে সন্ধ্যাও হয়ে যায়।
রাজধানী ঢাকা সহ দেশের প্রত্যান্তঞ্চল থেকে আসা যাত্রীরা এসব দীর্ঘ লাইনে থেকে যখন অনিয়ম দেখে চিৎকার করে তখন ওসি বাদল এর অনুগত কয়েকটি বাহিনীর সদস্যরা যাত্রীদের অকথ্য ভাষা ব্যবহার সহ গায়ে পর্যন্ত হাত তুলতে বাধ্য হয়। সব থেকে দুঃখের বিষয় হলো বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সেবা দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মাথা প্রতি ৫৫ টাকা। কিন্তু যাত্রীদের কোন সেবা নাই। এখানে যাত্রীরা বাহিরে খোলা আকাশের নীচে দাড়িয়ে থেকে কান্ত হয়ে পড়ে। অনেক যাত্রী আছে ভারতে চিকিৎসা করতে যায় তাদের জন্য ও নেই প্রয়োজনীয় কোন আলাদা কাউন্টার। এরাও সাধারন যাত্রীদের সাথে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকে আরো অসুস্থ হয়ে যায়।
ঢাকা থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রী রানু বালা বলেন আমি একজন ক্যান্সার রোগী। আমি বার বার এখানকার অফিসার বাদলকে বলা সত্বেও সে আমাকে যেতে দেয় না। অথচ সে ব্যাংকের পাশ দিয়ে আমার সামনে তিন চার জন করে করে প্রায় একশত লোকের উপর আগে ভিতরে প্রবেশ করালো। কুমিল্লা থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রী নাজমুন নাহার বলেন, তিনি একজন রোগি। ভারতে চিকিৎসার জন্য তিনি এসেছেন। তিনি বলেন রোগিদের জন্য নেই কোন আলাদা কাউন্টার । সাধারন যাত্রীদের সাথে একই পথে লাইন দিয়ে তাদের প্রবেশ করতে হচ্ছে। এটা চরম অনিয়ম । আমি দেখছি এখানে ছাপা পোশাক পরা পুলিশ সদস্যরা টাকা নিয়ে লোক আগে ঢুকাচ্ছে।
খুলনা থেকে আসা ইকবাল কবির বলেন, বাংলাদেশে এতটা অনিয়ম তা বেনাপোলকে না দেখলে বোঝা দায়। এখানে সরাসরি আগে প্রবেশের জন্য রাস্তার উপর চলছে ঘুষ বানিজ্য। যে যে ভাবে পারছে আগে লোক ঢুকিয়ে নিচ্ছে অর্থ। এছাড়া যাত্রীরা আসে চরম ভোগান্তির মধ্যে। বৃষ্টি আসলে তারা দৌড়ে টার্মিনালের মধ্যে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেয় এসব পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। আমরা তাদের ৫৫ টাকা সেবার নামে চাঁদা দিচ্ছি। তারপর কেন আমাদের সাথে এরকম ব্যবহার। যাত্রী টার্মিনালে সামান্য কয়েকটি চেয়ার রয়েছে যেখানে বসার মত কোন পরিবেশ নাই।
স্থানীয়রা বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে চলছে ঘুষ বানিজ্য । আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছে এপিবিএন পুলিশ এর ইন্সপেক্টর বাদল। সম্প্রতি কয়েকজন সদস্যকে তারা মারধর ও করেছে যা গত এক সপ্তাহর সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলে সব পরিস্কার হয়ে যাবে। এসব পাসপোর্ট যাত্রীদের আগে প্রবেশ করানোর কথা বলে ১ থেকে ২ হাজার পর্যন্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছে এসব যাত্রীরা। গতকাল শনিবার একজন নারী ও তার স্বামীর গায়ে হাত তোলার দৃশ্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে দেখা যাচ্ছে। আর্মড পুলিশ এর সদস্যদের বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য যাত্রীরা হয়রানি হলেও দেখার কেউ নাই। প্রতিদিন বাদল এর নেতৃত্ব থাকা বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা লক্ষ লক্ষ টাকা অর্থ বানিজ্য করে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইতি মধ্যে বাংলার ভোর এর বেনাপোল প্রতিনিধি রাজু আহমেদ এর করা একটি পাসপোর্ট যাত্রী কে মারধর এর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া( ফেসবুক) এ ভাইরাল হলে হুমকি ধামকি দিয়ে তাকে ফেসবুক থেকে ভিডিও টি ডিলেট করতে বাধ্য করেন ইন্সপেক্টর বাদল।
এ বিষয় ইন্সপেক্টর বাদলকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এরকম কোন ঘটনা এখানে ঘটে নাই। তিনি বলেন তাদের সকাল থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতে হয় সেখানে তাদের গায়ে হাত কে দিবে? আর এখানে কোন অর্থ বানিজ্যও হয় না।এবং রাজুর করা ভিডিওর ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো জবাব দেয়নি।
মন্তব্য করুন