সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন শাখা নদী-নালা, খাল-বিলসহ গ্রামের ফসলী মাঠে অবৈধ চায়না দুয়ারী বা চায়না জাল ব্যবহার করে মাছ শিকারে মহোৎসবে ব্যস্ত অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা। বর্ষার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে ভয়ংকর চায়না দুয়ারী জালের ব্যবহার। অনেকের কাছে ম্যাজিক জাল নামেও এর পরিচিতি রয়েছে ।
এতে দেশিয় মাছ বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়ছে জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য। খুব সহজে বেশি মাছ ধরার এই জাল ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে দেশি প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন নদী ও বিলে হাজার হাজর চায়না জাল বা চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরা হচ্ছে। শুধু নদীগুলোতেই নয়, খাল ও বিলে একই পন্থায় মাছ ধরা হচ্ছে। মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ংকর চায়না দুয়ারী নামক ফাঁদে দেশিয় প্রজাতির সব মাছ ধরা পড়ছে। সহজেই সব ধরনের মাছ ধরার আশায় বিভিন্ন নদী-নালায় অহরহ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন এ জাল।
উপজেলার মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে উল্লাপাড়া উপজেলার নদ-নদী, খাল- বিলে বোয়াল, শোল, গোজার, শিং, মাগুড়, টাকি, টেংরা, পুটি, গুচি, বাইম, বাতাসী, কাকিলা, চাপিলা, চিংড়িসহ ১৬-১৮ প্রজাতির মাছ উৎপন্ন হয়। যা এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাহিদার প্রেক্ষিতে উচ্চ মূল্যে বিক্রিও হয়ে থাকে। তাতে লাভবান হন উল্লাপাড়াসহ চলনবিল অধ্যাষিত অঞ্চলের জেলেরাসহ অনেকে। মুলত গত ২০২১ সাল থেকে উপজেলার বিশাল জলরাশীতে দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকারে অহরহ ব্যবহার হয়ে আসছে সাম্প্রতিক সময়ের ভয়ংকর চায়না দুযারী জাল বা ফাঁদ। যা উদ্ধেগ বাড়াছে মাছ ও জীব বৈচিত্র্য সংশ্লিটদের।
উপজেলার নদ-নদী ও বিলাঞ্চলের জলাশয়ে সাম্প্রতিক সময়ে হাজার হাজার চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার হয়ে আসছে। যাতে ছেঁকে তোলা হচ্ছে দেশিয় পোনা, মা মাছ ও কাঁকড়া, বাঙ, সাপ, কুচিয়া, শামুকসহ যা সার্বিক পরিবেশের জন্য উপকারী জলজ প্রাণী ও জলজ জীবও বৈচ্যিত্র।
চায়না দুয়ারী কে জাল হিসেবে বর্ণনা করলেও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা আসলে এটিকে মাছ শিকারের একটি ভয়ংকর এক ফাঁদ মনে করেন। এই চায়না দুয়ারী জাল বা ফাঁদ বুননে একটি গিট থেকে আরেকটি গিটের দুরত্ব নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়েও কম হওয়ায় এতে মাছসহ অনান্য জলজ প্রানী ঢুকলে আর বের হতে পারেনা। ফলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়েও চায়না দুয়ারী জাল মাছ, জলজ প্রাণী ও জলজ জীবও বৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও ভয়ংকরও বটে।
তবে বর্তমান সময়ে মাছ শিকারে চায়না দুয়ারী জাল নিয়ে জেলেরা খুশি হলেও বিশেষজ্ঞরা সর্তক করছেন চায়না দুয়ারী জাল বা ফাঁদ ব্যবহার নিয়ে। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায়না বিলপাড়ের জেলেদের। উপজেলার বাঙ্গালা ইউনিয়েনর সোহরাব জানান, আমাদের এ এলাকায় যে ভাবে চায়না জাল দিয়ে জেলেরা মাছ শিকার করছে তাতে আর দেশীয় মাছ পাওয়া যাবে না। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে উধুনিয়া, মোহনপুর, বাঙ্গালা, বড়পাঙ্গাসী, কয়ড়া, দূর্গানগরসহ প্রতিটি ইউনিয়নে এ ভয়ংকর জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে। কারেন্ট, বেড়, চায়না দুয়ারীসহ নানা জালে মাছ শিকার নিষিদ্ধ জেনেও অবাধে শিকার করছে মাছ। মোহনপুর ইউনিয়নের জেলেপাড়ার জেলেদের কাছে এ চায়না দুয়ারী জাল ক্রয় বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা চায়না দুয়ারী জাল শ্যামলীপাড়া ও মোহনপুর বাজারের কতিপয় কয়েকটি দোকান থেকে এ জাল ক্রয় করে থাকি। তারা আরো বলেন, এ জালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় এ জাল বিক্রি করে থাকেন।
এ ভয়ঙ্কর চায়না দুয়ারী জালে দেশী মাছ নিধনের মহোৎসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, খুব দ্রুত অভিযান চালানো হবে, যাদের কাছে এ ভয়ঙ্কর চায়না দুয়ারী জাল পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে চায়না দুয়ারি বন্ধে সর্বাত্নক চেষ্টা চালানো হবে।
মন্তব্য করুন