শেষ বাঁশি বাজতেই উচ্ছ্বাসের জোয়ার বয়ে গেল যেন ইংল্যান্ড দলে। শেষ সময়ের নায়ক অলি ওয়াটকিন্সের কোলে চড়ে বসলেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন। দলের দুই স্কোরার সহসাই হারিয়ে গেলেন সতীর্থদের আলিঙ্গনে। কোচ গ্যারেথ সাউথগেট তো তখন হুঙ্কার ছুড়ে চলেছেন খ্যাপাটে উদযাপনে।
নেদারল্যান্ডস দলের কেউ তখন হতভম্ব, কেউ বিধ্বস্ত। পাথুরে চেহারায় দাঁড়িয়ে কেউ, কেউ বা আবার নুয়ে পড়লেন বেদনায়। বড় আসরের নকআউট ম্যাচ মানেই এরকম বিপরীতমুখি প্রতিক্রিয়ার মঞ্চায়ন। এই ম্যাচ তবু একটু ব্যতিক্রম। অনুভূতিগুলো তখনও টাটকা। একটু আগেও তো এই ধরনের কিছু ভাবার উপায় ছিল না! শাভি সিমন্সের দুর্দান্ত গোলে নেদারল্যান্ডসের এগিয়ে যাওয়ার পর হ্যারি কেইনের পেনাল্টিতে ইংল্যান্ডের ফেরা, এস হয়ে যায় ম্যাচের প্রথম ১৮ মিনিটের মধ্যেই।
এরপর লড়াই চলতে থাকে। প্রথমার্ধে বেশ আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় ইংল্যান্ড। সম্ভবত এবারের আসরে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরে তারা। দ্বিতীয়ার্ধে নেদারল্যান্ডস কৌশলে বদল এনে ম্যাচের রঙও বদলে দেয়। শেষ ২০-২৫ মিনিটে তো তাদের দাপট ছিল স্পষ্ট। কিন্তু গোল আর হচ্ছিল না। ৮০ মিনিটের কেইনকে তুলে নিয়ে ওয়াটকিন্সকে মাঠে নামান সাউথগেট। ইংল্যান্ড কোচের এই সিদ্ধান্তই মিনিট দশেক পরে দলের জয় বয়ে আনে। কোল পালমারের কাছ থেকে বল পেয়ে গোলার মতো এক শটে গোল করেন ওয়াটকিন্স।
ম্যাচের বয়স তখন ৯০ মিনিট পেরিয়ে গেছে। যোগ করা সময়ে আর নাটকীয় কিছু হয়নি। টানা দ্বিতীয়বার ইউরোর ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। নিজেদের সুদীর্ঘ ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবার তারা ফাইনালে পা রাখল দেশের বাইরের কোনো বড় আসরে। “অসাধারণ অর্জন দলের সবাইকে নিয়ে আমি গর্বিত, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিয়ে। আমাদের জন্য খুব কঠিন টুর্নামেন্ট ছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা যা করেছি এবং দেশের বাইরে খেলতে এসে এই অর্জন এটা সত্যিই স্পেশাল।”
“আমরাই শ্রেয়তর দল ছিলাম.. এক গোলে পিছিয়ে থাকার পরও আমরা আতঙ্কিত হইনি, শান্ত থেকে চেষ্টা করে গেছি।” জয়ের নায়ক ওয়াটকিন্স এই টুর্নামেন্টে মাঠে নামার সুযোগ খুব একটা পাননি। সেমি-ফাইনালে ১০ মিনিটের একটু মাঠে থেকেই তিনি নায়ক। গোটা দলের মানসিকতাই এতে ফুটে উঠছে বলে মনে করেন অধিনায়ক কেইন।
“প্রস্তুত থাকা নিয়ে কথা বলেছি আমরা। আমরা বড় দল এবং সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে, যখনই প্রয়োজন লাগুক। সেটা পাঁচ মিনিট হতে পারে, এক মিনিট হতে পারে। এইটুকুতেও পার্থক্য গড়া যায়, দলকে শিরোপা জেতানো যায়।”
“অলি আজকে এটাই দেখিয়েছে। সে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে যাচ্ছিল এবং যা করেছে আজকে, তা অসাধারণ। কী দুর্দান্তভাবে কাজটা শেষ করেছে! তার জন্য আমি খুবই খুশি, এটা তার প্রাপ্য।” এই উচ্ছ্বাস ও প্রাপ্তির পরিধি আরও বাড়াতে মরিয়া কেইন। রোববারের ফাইনালে তিনি তাকিয়ে আছেন আশাভরে। “এরকম একটা অনুভূতি আমাদের আছে যে, একটা কিছু এখনও বাকি আছে এবং সেই একটি আমাদের করতে হবে রোববার।” কেইন যেমন স্বপ্নের আকাশে উড়ছেন, তেমনি আচমকা থাবায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ভার্জিল ফন ডাইকের স্বপ্ন।
“প্রতিক্রিয়া জানানোর ভাষা আমার নেই। এতটা শেষ সময়ে গোল হজম করে ম্যাচ হারা এটা ভয়ঙ্কর অনুভূতি এত বেশি কষ্ট লাগছে! সবকিছু উজাড় করে দেওয়ার পরও হেরে গেলে অসহ্য লাগে।” “দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের পায়েই বল বেশি ছিল এবং ছোট ছোট মুহূর্তগুলি কাজে লাগাতে হয়। মনে হচ্ছিল, যে কোনো সময় আমরা গোল পেয়ে যাব, ২-১ হয়ে যাবে। কিন্তু হলো না এখন আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি খালি হাতে।”
মন্তব্য করুন