রনি পারভেজ: চট্টগ্রাম।।
৩১ অগাস্ট ২০২৪, ৬:১৮ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

এস আলমের গাড়িকাণ্ডে সুফিয়ান-এনামসহ বিএনপির তিন নেতাকে শোকজ

মধ্যরাতে চট্টগ্রামের শীর্ষ বিএনপি নেতাদের তদারকিতে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি একটি ওয়্যারহাউস থেকে একে একে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির শীর্ষ তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে দলটি।

নোটিশ পাওয়া বিএনপি নেতারা হলেন— চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়া।

যা ঘটেছিল মধ্যরাতে
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে একটি ওয়্যারহাউসের ভেতর থেকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বিলাসবহুল ১৪টি দামি গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে আছে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ ও অডি ব্যান্ডের গাড়িও।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী দৈনিক ঘোষণাকে জানান, অন্তত ১৫ জনের একটি দল এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউসের সামনে আসে। একই সময়ে আরও তিনটি গাড়ি সেখানে পৌঁছায়। সেখান থেকে একে একে নামেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন।

এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ছেলের শ্বশুর মীর গ্রুপের আবদুস সালাম বিএনপি নেতা এনামুল হক এনামের মামাতো ভাই।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একটি গাড়ি থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের ড্রাইভার মনসুরকে নামতে দেখেছেন তিনি। সেই গাড়ির ভেতরে আবু সুফিয়ান বসে ছিলেন বলে তিনি ও উপস্থিত অন্যদের ধারণা। নইলে ওয়্যারহাউসে তার ড্রাইভারের আসার কথা নয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছুক্ষণ পরই আমরা বুঝতে পারি শুরুর দিকে আসা ১৫ জনের পুরো দলটিই ছিল মূলত ড্রাইভার। কারণ তাদের একেকজনকে একেকটি গাড়ির চালকের আসনে বসানো হচ্ছিল। এভাবে আমরা অন্তত ১৪টি গাড়ি নিয়ে যেতে দেখেছি।

রাতে এস আলমের ১৪ বিলাসী গাড়ি গোপনে সরানো হল বিএনপি নেতাদের তদারকিতে

প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিলাসবহুল গাড়িগুলোর সবকটি বের হওয়ার পরই এনামসহ বাকি সব নেতা ওয়্যারহাউসের সামনে থেকে সরে যান।

ঘটনার ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘গাড়ি শুধু নয়, গাড়িগুলোর ভেতরে কিছু একটা ছিল। আমাদের ধারণা, সেখানে বিপুল অংকের টাকা ছিল। শুধু গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সেখানে সশরীরে আসার কথা নয়।’

গাড়িগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারেননি। তবে তারা জেনেছেন, গাড়িগুলো সীতাকুণ্ডের দিকে গেছে। কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় ছিল, সেটা তারা জানতে পারেননি।

সংবাদ সম্মেলন ডেকে পুরনো গীত
এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুর ২টায় দোস্ত বিল্ডিং দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ‘মিথ্যা সংবাদ’ প্রচার করার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনামসহ জেলা নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

লিখিত বক্তব্যে আবু সুফিয়ান দাবি করেন, ‘গত ২৯ আগষ্ট চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে কে বা কারা প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তীতে বিএনপির নাম দিয়ে টাকা চাঁদা দাবি করছে বলে এনামুল হক এনামকে অবহিত করেন। যদি চাঁদা না দেয়, তাহলে মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাবে বলেও হুমকি দেয়। তাই মীর গ্রুপের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করা হয়। বিএনপির নাম দিয়ে ফোন করার ঘটনা অবহিত হওয়ার পর এনামুল হক দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে আমাকে ঘটনার কথা জানান। তারপর আমরা কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে যাই এবং চাঁদাবাজদের হুমকির ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করি। উল্লেখ্য, বিএনপি নামধারী চাঁদাবাজরা সেদিন দুপুর ১টা থেকে ৩টা এবং পরবর্তীতে বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে চাঁদা দিতে হবে বলে ০১৯৭৪৩৪৫৩২৪ নাম্বার মোবাইল ফোন থেকে বারবার হুমকি দিতে থাকে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে বিএনপির নাম ব্যবহার করা চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতেই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিট মত অবস্থান করে মীর গ্রুপের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করি এবং বিএনপি নাম দিয়ে কেউ যদি কোন ধরনের চাঁদা দাবি করে, তাহলে তাদেরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আমরা চলে আসি। মূল ঘটনা হলো এটা। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রচার করেছে আমরা নাকি কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জার টেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়েছিলাম। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজমিরীগঞ্জে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন বিক্রির অপরাধে চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে

পরিত্যক্ত কালভার্ট: চলেনা যানবাহন

হেমন্ত

**শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রচেষ্টা প্রয়োজন**

নওগাঁর মহাদেবপুরে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত

‘অ্যান্টেনা ডিজিটালাইজেশন হোয়াইট পেপার’ প্রকাশ করলো হুয়াওয়ে

প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা

উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল ইসলামের অপসারণ ও পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন

“শেখ হাসিনা যুগের পরবর্তী ৩ মাস “মবের মুল্লুক” মনে হয়েছে”

মওলানা ভাসানীকে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি ..বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস

১০

News :: রিয়েলমি’র ‘আনলিশ ইওর ক্রিয়েটিভিটি-ন্যাশনাল মোবাইল ফটোগ্রাফি কন্টেস্ট ২০২৪’ বিজয়ীদের নাম ঘোষণা

১১

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংস্কার চাই – রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী

১২

ডিমলায় বিএনপির বিশাল জনসমাবেশ।

১৩

নির্বাচন কমিশনার হতে চান স্বাস্থ্যের সেই বিতর্কিত সচিব সিরাজুল হক খান

১৪

বিনিয়োগ ব্যাংকিং চ্যাটবট ‘প্রাইমইনভেস্ট’ চালু করলো প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট

১৫

শাহজাদপুরে সিএনজি চালিত অটো রিক্সা ও ড্রাম ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছে

১৬

উল্লাপাড়ায় সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

১৭

পুরুষের কাজের প্রেরণা তার প্রিয়তমা ..লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

১৮

১৩শ’ সরকারি আইন কর্মকর্তা ১১ দিনে নিয়োগ

১৯

ভন্ডপীর সাঈদ আনোয়ার মোবারকী বাবুর বিরুদ্ধে মানববন্দন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

২০