টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ‘মিশন গ্রিন বাংলাদেশ’ অর্জন করেছে আকিজ বশির গ্রুপের সৌজন্যে বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভ, বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম ও সাসটেইনেবল ব্র্যান্ড ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত ‘এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড ২০২৪। সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সংগঠনটি বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস, বায়ু দূষণ প্রতিরোধ, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার কারণেই এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। প্রধান অতিথি পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আজকের এই পুরস্কারগুলো শুধুমাত্র অর্জনের উদাহরণ নয়; এগুলো হলো কীভাবে সহযোগিতা, নেতৃত্ব এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তব জীবনের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, তার উদাহরণ। আমরা যখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন আমাদের বেসরকারি ও সরকারি খাত, এনজিও এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। একসাথে আমরা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারব এবং এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব, যা নিয়ে আমরা সকলেই গর্বিত হতে পারি।”
জানা গেছে, পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিশন গ্রিন বাংলাদেশ দেশে পরিবেশগত সচেতনতা বাড়ানো এবং বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সংগঠনটি স্বাধীনতার ৫৩ বছর উপলক্ষ্যে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একযোগে দেশের ৫৩ টি স্থানে বৃক্ষরোপণ ও সচেতননতা কার্যক্রম পরিচালনা করায় তাদেরকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়৷ এই কার্যক্রম ছাড়াও সংগঠনটি ৬৪ জেলায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী, সারাদেশে অনলাইন গ্রিন ভলিন্টিয়ার নেটওয়ার্ক তৈরি, ফ্রি ট্রি ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে ১০ সহস্রাধিক বিনামূল্যে চারা বিতরণ, বৃক্ষরোপণে সচেতনতা বাড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুতুল নাট্যের আয়োজন, সবুজের জন্য মানববন্ধন, সবুজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রজেক্ট , গ্রিন ভলেন্টিয়ার স্কলারশীপ প্রোগ্রাম, ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে বৃক্ষরোপণ, বন্যায় ইমার্জেন্সী রেসপন্স ও দীর্ঘমেয়াদী কমিউনিটি রিবিল্ডিং ফান্ড, কমিউনিটি সোলার এনার্জি প্রোজেক্ট, প্লাস্টিক রিসাইকেল প্ল্যান্ট ও প্ল্যাস্টিকের বিকল্প তৈরী প্রকল্প, প্রকৃতির পাঠশালা ক্যাম্পসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সবুজ আন্দোলন পরিচালনা করে যাচ্ছে।
পুরস্কার গ্রহণের পর অনুভূতি জানতে চাইলে, মিশন গ্রিন বাংলাদেশের আহ্বায়ক আহসান রনি বলেন, “এই পুরস্কার আমাদের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা। আমরা যখন এই উদ্যোগ শুরু করি, তখন আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল দেশকে একটি সবুজ ও বাসযোগ্য পরিবেশ উপহার দেওয়া। আজকের এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে যে আমরা সঠিক পথে আছি। আমরা আরও বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের প্রতিটি সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আজ আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। এই অর্জনটি নতুন বাংলাদেশ তৈরীর জন্য যারা জীবন দিয়েছেন সেই শহীদদের প্রতি উৎসর্গ করছি এবং দেশকে সবুজ করে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা দিয়ে কাজ করে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করছি।”
মিশন গ্রিন বাংলাদেশের প্রজেক্ট ডিরেক্টর কৃষিবিদ আবুল বাশার মিরাজ বলেন, “প্রতিটি গাছ আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নেয়। আমরা বিশ্বাস করি, পরিবেশকে রক্ষা করা মানেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও নিরাপদ পৃথিবী তৈরি করা। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের সাফল্য শুধুমাত্র আমাদের একার নয়, পুরো জাতির অর্জন। এই পুরস্কার আমাদের আরও উৎসাহ দেবে আরও অনেক বেশি গাছ লাগানোর এবং পরিবেশ সুরক্ষায় নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করার। সারা বাংলাদেশে আমাদের সকল পার্টনার ও সহস্রাধিক ভলান্টিয়াররাও এই অ্যাওয়ার্ডের সমান ভাগীদার।”
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যান্ড ফোরাম আয়োজিত এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষস্থানীয় টেকসই ব্র্যান্ড এবং উদ্যোগগুলোর উপস্থিতি ছিল। অনুষ্ঠানে বক্তারা পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মিশন গ্রিন বাংলাদেশসহ অন্যান্য উদ্যোগের সফলতা নিয়ে আলোচনা করেন। এই সম্মাননা দেশের টেকসই উদ্যোগগুলোকে সম্মানিত করে ভবিষ্যতে আরও পরিবেশবান্ধব ও সাসটেইনেবল ব্র্যান্ড গড়ে তোলার প্রতি উৎসাহ যোগাবে বলে মনে করেন আয়োজকরা।
উল্লেখ্য, আকিজ বশির গ্রুপের সৌজন্যে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংস্করণের এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডে ৩৯টি টেকসই ব্র্যান্ড উদ্যোগকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৬টি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং ২৩টি উদ্যোগ সম্মানসূচক উল্লেখ পেয়েছে। বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের উদ্যোগে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ও ব্র্যান্ডগুলোকে সম্মাননা দেওয়া, যারা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অসামান্য অবদান রেখেছে।
মন্তব্য করুন