বগুড়ার সারিয়াকান্দি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিককেন্দ্র জোরপূর্বক ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। মসজিদের নামে জমি না থাকায় এখনও ওয়াকফ হয়নি। জনবহুল এলাকায় মসজিদ নির্মাণ না করায় মুসল্লিরা নামাজ আদায়ে আসেন না। এ ছাড়া দেয়ালে ফাঁটলসহ ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজের প্রমাণ মিলেছে। এলাকার মুসল্লিরা এসব সমস্যার সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরে ১ দশমিক ৮১ একর জমিতে মডেল মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। যে দাগের ওপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে তা পীরপাল দেওয়ানের নামে জিম্মাদার হিসেবে সিএস রেকর্ড রয়েছে। সেই রেকর্ডে আব্বাদ আলী ফকির ও বামতুল্লাহ ফকিরকে দখলদার দেখিয়ে তাদের নামে জমির অংশ বণ্টন করা হয়েছে। পীরপাল দেওয়ানের কোন বংশধর না থাকলেও আব্বাদ আলী ফকির এবং বামতুল্লাহ ফকিরের বংশধর আছে। পীরপাল দেওয়ান এই সম্পত্তিতে প্রতিবছর ওরস আয়োজন করতেন। যার মাজার এখনও নির্মিত মডেল মসজিদের সামনে রয়েছে।
পীরপাল দেওয়ানের মৃত্যুর পর আব্বাদ আলী ফকির ও বামতুল্লাহ ফকির ওরসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। পরে বিশালাকার ফাঁকা জায়গায় এলাকাবাসীর অনুরোধে ঈদের নামাজ আদায় শুরু করা হয়। পরে জায়গাটি ঈদগাহ মাঠ কমিটির দখলে চলে আসে।
গত ২০১৮ সালে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সাবেক এমপি মরহুম আব্দুল মান্নান এখানে মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তফসিল সম্পত্তির স্বত্ব মালিকের পক্ষে পৌর এলাকার ধাপ গ্রামের সোলায়মান আলী গত ২০২১ সালের ১৩ জুন জমিটি অবৈধ দখল ও বিক্রি বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এ সম্পর্কিত দুটি মামলায় সোলায়মান আলীরা তাদের পক্ষে ডিক্রি পায়। ডিক্রি পাওয়া সত্ত্বেও সাবেক এমপির হস্তক্ষেপে ঈদগাহ মাঠের পূর্ব পাশে গণকবর এবং ঈদগাহ মাঠের ভেতরে জোরপূর্বক মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনও সুরাহা তিনি পাননি। তাই মডেল মসজিদের নামে কোনও দলিল পত্রাদিও প্রস্তুত হয়নি। ফলে মডেল মসজিদটি এখনও ওয়াকফ হয়নি।
এদিকে মডেল মসজিদটি জনবহুল বা প্রধান সড়কের পাশে নির্মাণ করা হয়নি। এ ছাড়া ঈদগাহ মাঠের পূর্ব পাশে এমপির ভেঙে দেওয়া যে মসজিদটি ছিল সেটি ছিল মোহাম্মাদি জামাত। কিন্তু মডেল মসজিদে চালু করা হয়েছে হানাফি জামাত। তাই আশপাশের মুসল্লিরা এখানে নামাজ পড়তে আসেন না। তারা এ মসজিদের পাশে ভিন্ন একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। তাই মডেল মসজিদে বেশি মুসল্লি আসেন না।
এদিকে মডেল মসজিদে নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মসজিদের সাউন্ড বক্স, সিসিটিভি ক্যামেরা, জেনারেটর ও ফ্যানের রেগুলেটর নষ্ট। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক লাইনের সমস্যা এবং বাল্ব নষ্ট। ভারী বর্ষণে ছাদের পানি মসজিদের দ্বিতীয় তলায় প্রবেশ করে। মসজিদের বাইরে লোহার নকশায় মরিচা ধরেছে। তৃতীয় তলায় গোলচত্বরে কোনও ফ্যান নেই। ইমাম সাহেবের দাঁড়ানোর জায়গার ওপরে কোনও ফ্যান নেই। গিজারে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই, বাথরুমের ৭টি ফ্ল্যাশ নষ্ট এবং ৭টি বাথরুমে আলোর ব্যবস্থা নেই। একটি এসি নষ্ট এবং দুটি থেকে পানি পড়ে। দেয়ালের প্লাস্টারে লোনা ধরে খসে পড়ছে ও বেশ কিছু দেয়ালে ফাঁটল ধরেছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা নান্টু মিয়া বলেন, ‘মডেল মসজিদটি ওয়াকফ হয়নি। মসজিদে মোহাম্মাদি জামাত করার কথা ছিল কিন্তু পরে তা করা হয়নি। তাই আমরা মডেল মসজিদে নামাজ পড়তে যাই না। ভিন্ন মসজিদ নির্মাণ করে সেখানে নামাজ পড়ি।’
মসজিদের জায়গার মালিক দাবিদার আবুল কাসেম বলেন, ‘মসজিদের জায়গা নিয়ে মামলা হয়েছিল। মামলায় আমরা ডিক্রি পেয়েছি। পরে আপিল মামলার ডিক্রিও আমরাই পেয়েছি। তা সত্ত্বেও সাবেক সাংসদ জোরপূর্বক আমাদের জমিতে মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছেন। মন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দায়ের করেও আমরা কোনও সুরাহা পাইনি। বর্তমান সরকারের মাধ্যমে আমি আমার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চাই।’
ঈদগাহ মাঠ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘জায়গাটি ঈদগাহ মাঠের। সে অনুযায়ী ঈদগাহ মাঠ কমিটি এটির দখলদার। তবে মডেল মসজিদের নামে এখনও জায়গাটির কোনও দলিল করা হয়নি এবং মসজিদটি এখনও হস্তান্তর করা হয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘মসজিদের নিম্নমানের কাজের বিষয়ে ইতোমধ্যেই স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মডেল মসজিদটি ওয়াকফ এবং মসজিদটি হস্তান্তর করা হবে।
মন্তব্য করুন