A Great Opportunity To Reduce Air Pollution শীর্ষক শিরোনামে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর উদ্যোগে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় আজ ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়ি মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।
ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে গণপরিবহন ও নিরাপদ হাঁটাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্য নিয়ে ডিটিসিএ কর্তৃপক্ষ আজ সকালে হাতিরঝিলে বাইসাইকেল র্যালি ও হাঁটা, হাতিরঝিল এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, নগরীর একটা রাস্তা এক ঘন্টা ব্যক্তিগত গাড়ি মুক্ত রাখা সহ দুপুরে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ এহছানুল হক, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. আদিল মুহাম্মদ খান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এবং সভাপতিত্ব করেন নীলিমা আখতার, নির্বাহী পরিচালক, ডিটিসিএ।
ড.আদিল মুহাম্মদ খান মূল প্রবন্ধে বলেন, গাড়িভিত্তিক উন্নয়নের দুষ্টু চক্রের ফলে রাস্তা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারের সংখ্যা বেড়েছে, গাড়িও বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে যানজট এবং দূষণ। যানজটের কারণে রাজধানীতে দিনে প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে ‘কার ফ্রি ডে’ অনেক বছর ধরে উদযাপন করা হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নীতি নির্ধারণী মহল থেকে কোন স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করা, ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা, কার ফ্রি স্কুল জোন গড়ে তোলা, পথচারী বান্ধব রাস্তা তৈরি, ব্যক্তিগত গাড়ির প্রণোদনা সীমাবদ্ধ করা; বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের সেবা ও পরিধি বৃদ্ধি, গণপরিবহন তথা বাস, রেল ও নৌপথ এবং হাঁটার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, সর্বোপরি বহুমাধ্যম ভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব বলেন, ঢাকা শহরে চার কোটি ট্রিপের মধ্যে ৩৮% ট্রিপ সংঘটিত হয় পায়ে হেঁটে। এ শহরে দেখা যায় একটি শিশুর জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে। ফলে যানজট বাড়ছে এবং গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়লেও শৃঙ্খলা না থাকায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। একটি সড়ককে যেন সপ্তাহে একদিন গাড়িমুক্ত রাখা যায়, সেজন্য সিটি কর্পোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে আলোচনার মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণে আমরা সচেষ্ট থাকবো। ফুটপাতও এ শহরে অনেক অপ্রশস্ত হয়ে গেছে। পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে।
সভাপতির বক্তৃতায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ঢাকা শহরে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত মোট মোটরযানের মধ্যে গণপরিবহন মাত্র ১০ শতাংশ। ব্যক্তিগত গাড়ির অনুপাতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ছে না। জনবান্ধব নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত করে বহুমাধ্যম ভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। ডিটিসিএ ২০১৬ সাল থেকে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপনের সাথে সম্পৃক্ত। এ বছরও আমরা সাইকেল র্যালী, পদযাত্রা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেছি। নগর যাতায়াত ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সকলের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিতের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনায় আমরা সচেষ্ট থাকবো বলে সভাপতি সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ডিটিসিএ-এর সিনিয়র রোড সেফটি স্পেশালিস্ট মোঃ মামুনুর রহমান, ডিটিসিএ-এর সিনিয়র আরবান প্ল্যানার জনাব মোঃ নাহমাদুল হাসান, ডিটিসিএ-এর সহকারি পরিচালক জনাব কারার শোয়েব, হাতিরঝিল প্রকল্পে কর্মরত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জনাব এ এন এম নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)- এর বোর্ড মেম্বার জনাব মোঃ আবু নাঈম সোহাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও গবেষণা সহকারী জনাব ফারহানা জামান, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব এম এ মান্নান মনির, উইমেন উইথ ডিজ্যাবিলিটিস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট অফিসার জনাব উজ্জ্বল মাহমুদ, তেঁতুলতলা মাঠ-রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক জনাব সৈয়দা রত্না, সাইকেলার্স অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি জনাব সিফাত-ই-কানিজ, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতিনিধি জনাব ইনজামুল হক, ছাত্র প্রতিনিধি তিন্নি, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কমিউনিকেশন অফিসার শানজিদা আক্তারসহ আরো অনেকে।
মন্তব্য করুন