আজ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখে ‘আপনার রেটিনাকে ভালবাসুন, আপনার চোখ সুরক্ষিত রাখুন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)সহ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাস্পাতাল, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল,ইস্স্পাহানি ইসলামিয়া আই ইন্স্টিউট ও হাস্পাতাল, লায়ন্স আই ইন্স্টিউট ও হাসপাতাল ও অন্যান্য চক্ষু হাস্পাতালে র্যালিসহ নানা আয়োজনে এক যোগে রেটিনা দিবস পালিত হয়। প্রতি বছর রেটিনার রোগ সচেতনতায় সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বিশ্ব রেটিনা দিবস পালিত করা হয়, রেটিনা রোগ ও চিকিৎসা সচেতনতা সৃষ্টির জন্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেটিনা র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন ও বক্তব্য রাখেন চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, কমিউনিটি চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শওকত কবির, বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. তারিক রেজা আলী, বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটির মহাসচিব ডা. শাহনুর হাসান, বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটির পাবলিকেশন সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ আফজাল মাহফুজউল্লাহ প্রমুখ।
বক্তব্যে রেটিনা বিষয় এ রোগ নির্ণয়ে রেটিনোপ্যাথি স্ক্রিনিং এর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়, সেই সাথে সাধারণ জনগোষ্ঠী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেটিনা চিকিৎসার প্রসারের উপর জোর প্রদান করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপট এ রেটিনায় রক্তক্ষরণ ও রেটিনাল ডিট্যাচমেন্ট নিয়ে অনেক রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। আঘাতজনিত রেটিনাল ডিটাচমেন্ট এর বেশির ভাগ রেটিনা গুলির আঘাতপ্রাপ্ত। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচ্য বিষয় হলোÑ কতদিন আগে চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, চোখের কোন অংশে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, কত দূরত্বে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, ঐ মুহূর্তে চোখে চশমা বা সানগ্লাস পরিহিত ছিল কি না, বর্তমান অক্ষি কোটরের কাঠামো স্বাভাবিক আছে কি না, চোখের বর্তমান দৃষ্টিশক্তি কি অবস্থায় আছে, চোখের ইন্ট্রা অকুলার প্রেশার স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি আছে কি না, কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা (যেমন: বি-স্ক্যান আল্ট্রামনোগ্রাম) চোখের অভ্যন্তরে কোন গুলি আছে কি না, এছাড়া এক্সরে এবং সিটি স্ক্যানের মাধ্যমেও গুলির উপস্থিতি ও অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
বক্তারা জানান, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আশার কথা হল সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সবার চোখে এ পর্যন্ত সফল অস্ত্রপচার হয়েছে এবং এ বিষয়ে সার্জারির জন্য বাংলাদেশে যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপত্রের সব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান আছে। অর্থাৎ চোখের ভিট্রিও রেটিনা সার্জারির আধুনিকায়ন পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ও বাংলাদেশ সমানভাবে এগিয়ে চলছে। সব প্রকার আঘাতজনিত রেটিনা ইনজুরি বিষয়ে সচেতন হওয়া ও কোনো প্রকার দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে অতিসত্ত্বর একজন রেটিনা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া ও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা জরুরি।
রেটিনা চোখের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাতলা পর্দা অংশ যা দশটি লেয়ার দ্বারা তৈরি। এটি আলোকে নিউরাল সিগন্যালে রূপান্তরিত করার জন্য দায়ী যা মস্তিষ্কে দৃষ্টি হিসাবে ব্যাখ্যা করে। এটি ক্যামেরার ফিল্মের মতো কাজ করে, ছবি ধারণ করে এবং অপটিক নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়। পৃথিবীতে যেসব কারণে অন্ধত্ব হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি তার অন্যতম কারণ। ডায়াবেটিসে হার্ট, চোখ এবং কিডনির ওপর প্রভাব পড়ে সব থেকে বেশি। ডায়াবেটিসের প্রভাবে অন্ধত্ববরণও করতে পারেন, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। ডায়াবেটিস চোখের সব অংশের তুলনায় রেটিনায় বেশি ক্ষতি করে। হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ এও রেটনার ক্ষতি হয়ে থাকে যা হাইপারটেন্সিভ রেটিনোপ্যাথী নামে পরিচিত। এছাড়াও বয়স জনিত রেটিনার ক্ষয় যা এ আর এম ডি বা এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন নামে পরিচিত, এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি জরুরি।
লেখক:-
ডা.মোহাম্মদ আফজাল মাহফুজউল্লাহ
সহযোগী অধ্যাপক (ভিট্রিও-রেটিনা)
ভিট্রিও-রেটিনা বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন
চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও
পাবলিকেশন সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটি।
মন্তব্য করুন