বর্তমান সময়ে এক গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আমরা নিমজ্জিত হচ্ছি। দেশপ্রেম, যা একসময় মানুষের হৃদয়ে জ্বলন্ত শিখার মতো প্রজ্জ্বলিত ছিল, আজ তা ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে। এর স্থানে জন্ম নিচ্ছে আদর্শহীনতার এক অন্ধকারময় অবস্থা।
একটি সমাজ তখনই উন্নতির শিখরে পৌঁছায় যখন সেই সমাজের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম এবং দেশীয় মূল্যবোধ গভীরভাবে প্রোথিত থাকে। কিন্তু আজকের বিশ্বায়নের যুগে, প্রযুক্তি আর ভোগবাদিতার চাপে দেশের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা কমে গেছে। ব্যক্তিগত লাভ-লোকসান, ক্ষমতা আর সুবিধার পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ দেশপ্রেমকে যেন উপেক্ষা করছে। এর ফলে, সমাজে নৈতিক অবক্ষয় এবং দায়িত্বহীনতার প্রসার ঘটছে।
দেশপ্রেমের অভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের আদর্শিক কাঠামো। আদর্শহীনতা হচ্ছে নীতি, মূল্যবোধ, এবং নৈতিকতার অভাব। যারা কোনো নৈতিক আদর্শ বা মূল্যবোধকে অনুসরণ করে না, তারা কেবল নিজেদের সুবিধা অর্জন করতে আগ্রহী। তারা দেশের উন্নয়ন বা জনগণের কল্যাণের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়।
রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সামাজিক স্তরে পর্যন্ত, আদর্শহীন লোকজনের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা সুযোগ সন্ধানী, দুর্নীতি প্রবণ, এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে অন্যের ক্ষতি করতেও দ্বিধা করে না। এই মানুষগুলো নিজেদের অপরাধ আড়াল করার জন্য সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেদের অবস্থানও পরিবর্তন করে ফেলে।
একটি দেশের জনগণ যখন আদর্শহীনতার পথে হাঁটতে শুরু করে, তখন সেই দেশ দ্রুত অধঃপতনের দিকে চলে যায়। দেশপ্রেমহীন ও আদর্শহীন মানুষরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে অনৈতিকতা ছড়িয়ে দেয়, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে ভেঙে দেয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আইন ব্যবস্থা—সবকিছুতেই দুর্নীতি আর দায়িত্বহীনতা বাড়তে থাকে।
একই সাথে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই আদর্শহীনতার সংস্কৃতি অনুসরণ করে, ফলে তারা দেশের জন্য কোনো দায়িত্ববোধ অনুভব করে না। তাদের কাছে নৈতিক মূল্যবোধ কিংবা দেশের কল্যাণের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থই বড় হয়ে দাঁড়ায়।
এই সংকট মোকাবেলা করতে হলে প্রয়োজন একটি আদর্শিক পুনর্জাগরণ। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা, সততা, এবং নৈতিকতার শিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় দেশপ্রেম এবং নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে তারা আদর্শিক নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজে দায়িত্বশীল এবং নৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যারা নিজেদের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।
দেশপ্রেমহীনতা এবং আদর্শহীন মানুষের আধিক্য সমাজের জন্য ভয়াবহ সংকট। এর থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করা, নতুন প্রজন্মকে সঠিক শিক্ষায় গড়ে তোলা, এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা। আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি উন্নত, আদর্শিক এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা।
মন্তব্য করুন