জাতির ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার, যা দেশ ও জাতির আত্মপরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশ, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ, যার ৫৩ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জাতির জন্য অমূল্য সম্পদ। তবে দুঃখজনকভাবে, এ ইতিহাসকে বিকৃত করার এবং মুছে ফেলার এক ধরনের চেষ্টা ক্রমাগত চলে আসছে। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতির এই ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হতে পারবে না।
প্রথমত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনো কল্পকাহিনি নয় বরং এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রতিফলন। এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২ লক্ষাধিক নারীকে অত্যাচারিত হতে হয়েছে এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ যখন পুনর্গঠনের পথে হাঁটছিল, তখনই একাধিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা থেকে বিচ্যুত করা এবং একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করা।
দ্বিতীয়ত, ইতিহাস বিকৃতির অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কিছু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দল নিজেদের মতাদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের নায়কদের খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করেছে এবং পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের হিরো হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এইসব গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক থেকে সঠিক ইতিহাস বাদ দেওয়ার এবং বিকৃত তথ্য সংযোজনের অপচেষ্টা করেছে।
তবে, ইতিহাসের সত্য বিকৃত করা সহজ নয়। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের সত্যতা জানার আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য এখন মানুষের হাতের মুঠোয়, যার ফলে মিথ্যা ও বিকৃতির উপর দাঁড়িয়ে থাকা কোনো প্রচার বেশি দিন টিকতে পারে না। স্বাধীনতার চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও গর্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
এর পাশাপাশি, সরকার ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষার কাজ চলছে। বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ, জাদুঘর এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইতিহাসের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ ও ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে। এটি শুধু একটি প্রতিরোধ নয়, বরং জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি নির্মাণের চেষ্টা।
অতএব, ইতিহাস বিকৃতির যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা কখনো সফল হবে না। বাংলাদেশের ইতিহাস হলো এর জাতীয় পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা দেশপ্রেমিক মানুষের হৃদয়ে অম্লান হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, সত্যিকারের ইতিহাসকে রক্ষা করবে এবং বিকৃতির যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করবে। ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হলেও, এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় চিরকাল বেঁচে থাকবে আমাদের মন ও মানসে।
মন্তব্য করুন