◼️◼️আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি প্রধান শক্তি। তবে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর দলের ভেতর ও বাইরের চাপের কারণে বর্তমানে তারা একটি কঠিন সময় পার করছে।
আওয়ামী লীগ একসময় তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী ছিল, কিন্তু ফান্ডের অভাবের কারণে ক্ষমতার বাইরে ছিল। ক্ষমতায় আসার পর দলের অধিকাংশ সদস্য সচ্ছল হয়ে ওঠেছে।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকার সময়ে তাদের ভেতর একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং তৃণমূল পর্যায়ে সমর্থন গড়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দলটি প্রশাসনিক সুবিধা থেকে উপকৃত হওয়া এবং ক্ষমতার কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। এর ফলে, আদর্শগত ভিত্তি কিছুটা দুর্বল হতে শুরু করে, আর দলের ভেতরে একধরণের দ্বন্দ্ব এবং অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। যারা দলের মাধ্যমে আর্থিক ও সামাজিক সচ্ছলতা অর্জন করেছিলেন, ক্ষমতা হারানোর পর তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়।
◼️দলটির পতনের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রশাসনিক অপব্যবহার, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বজনপ্রীতি। এই কারণগুলো তাদের সমর্থনের ভিত্তি দুর্বল করেছে। ক্ষমতার বাইরে আসার পর, আওয়ামী লীগ একটি কঠিন সংকটের মুখোমুখি। তাদের অনেক কর্মী এখন ধরপাকড় এবং চাপের মধ্যে আছে, যা দলীয় সংহতি ও মনোবলকে প্রভাবিত করছে।
◼️আওয়ামী লীগ যদি ভবিষ্যতে পুনরায় শক্তিশালী হতে চায়, তবে দলকে নতুন নেতৃত্বের সন্ধান করতে হবে। বর্তমান নেতৃত্বের পাশাপাশি নতুন মুখ আনার মাধ্যমে দলের ভেতরে উদ্যম সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তরুণদেরকে নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্ত করে দলকে নতুনভাবে সংগঠিত করা গেলে, আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
◼️আওয়ামী লীগকে তাদের আদর্শিক ভিত্তিতে ফিরে যেতে হবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জনগণের অধিকার আদায়ের নীতি যদি তারা পুনরুদ্ধার করতে পারে, তবে তারা গণসমর্থন ফেরত পেতে পারে। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।
◼️তৃণমূল পর্যায়ে দলের পুনর্গঠন জরুরি। ক্ষমতায় থাকার সময়ে অনেক নেতাকর্মী সুবিধাভোগী হয়ে ওঠায় দলের আদর্শগত ও নৈতিক ভিত্তি ক্ষীণ হয়েছে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে তৃণমূলের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এছাড়া, দলীয় কর্মীদের সচ্ছলতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা থাকতে হবে যাতে তারা রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে আগ্রহী হয়।
◼️বর্তমান ধরপাকড়ের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে, অনেক কর্মী আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে নিজেদের সংগঠিত করতে পারে। প্রশাসনিক দমন-পীড়নের ফলে হঠাৎ করে দলীয় কর্মীরা একত্রিত হয়ে বড় ধরনের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, রাজনৈতিক চাপ বেশিদিন স্থায়ী হলে তা প্রতিরোধের রূপ নিতে পারে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা যদি ক্রমাগতভাবে নিপীড়নের শিকার হন, তাহলে হঠাৎ কোনো সময় তারা রাজনীতির ময়দানে গর্জে উঠতে পারেন। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
◼️আওয়ামী লীগের উত্থান-পতনের বর্তমান ধারা দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলটি যদি তাদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করতে পারে, তবে তারা আবারো বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। অন্যদিকে ক্রমাগত চাপ ও দমন-পীড়নের মুখে আওয়ামী লীগের কর্মীরা হঠাৎ প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন মোড় আনতে পারে।
মন্তব্য করুন