সম্প্রতি বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের নাম ব্যবহার করে জঙ্গিবাদের উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের ব্যানারে মিছিল ও বিক্ষোভে আইএস-এর আদল স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই ধরনের কার্যকলাপ শুধুমাত্র ইসলামের মূল শিক্ষার বিরোধিতা করে না, বরং সমাজে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে। ইসলামের শান্তির বার্তা ভুলে, কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী সহিংসতা ও মৌলবাদকে উস্কে দিচ্ছে।
ইসলামী মৌলবাদের উত্থান বাংলাদেশে এক উদ্বেগজনক ইঙ্গিত। শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় চর্চার আড়ালে চরমপন্থা এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন নিজেদের স্বার্থে ধর্মের অপব্যবহার করছে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ ধরনের কার্যকলাপ দেশের উন্নয়ন এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং সঠিক ইসলামের বার্তা প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এবং নাগরিক সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যেন এ ধরনের চরমপন্থার প্রসার রোধ করা যায়। শান্তি, সহনশীলতা এবং সহাবস্থানের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিয়ে মৌলবাদ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
👇💢💢💢💢💢💢💢👇
এই ঐক্য কি সত্যিই জাতীয় ঐক্যমতের নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত:-
জাতীয় ঐক্যমত বলতে আমরা সাধারণত দেশের স্বার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে গঠিত একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্মকে বুঝি। জাতীয় ঐক্যের মূল লক্ষ্য থাকে দেশের বৃহত্তর কল্যাণ এবং জাতির স্বার্থ রক্ষা করা, যেখানে বিভিন্ন মতাদর্শ ও রাজনৈতিক ভিন্নমত সত্ত্বেও সবাই একটি সাধারণ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ঘিরে যে আলোচনা চলছে, যেখানে তিনি কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করছেন, সেটি জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন ওঠে—যে প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রধান দলগুলোকে বাদ দিয়ে সংলাপ চালানো হচ্ছে, সেটি কি আসলেই জাতীয় ঐক্য বলা যায়?
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান দল। তাদের দেশের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে একদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক, অন্যদিকে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দলকে বাইরে রেখে কোনও জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টা কীভাবে সফল হতে পারে? তাদের বাদ দিলে তা কোনও নিরপেক্ষ বা জাতীয় স্বার্থসিদ্ধি নয়, বরং একপাক্ষিক উদ্যোগ বলে মনে হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় নেমেছেন, সেগুলো যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করে কিংবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোকে বাদ দিয়ে ঐক্যের কথা বলে, তাহলে তা আদতে জাতীয় ঐক্যের ধারণাকে ভ্রান্তভাবে উপস্থাপন করছে। জাতীয় ঐক্য মানে পুরো জাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টা, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা মতবাদকে বাদ দিয়ে নয়।
আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করার অর্থ কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে একটি অবস্থান গ্রহণ? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ দেশের ভিত্তি। তাই, এমন কোনও প্রচেষ্টা যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোকে বাদ দেয়, তা দেশের স্বাধীনতার ভিত্তির প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা বলে বিবেচিত হতে পারে।
আসলে জাতীয় ঐক্যমতের আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সমগ্র জাতিকে একত্রিত করা, যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর উপস্থিতি ছাড়া অসম্পূর্ণ। একটি সত্যিকারের জাতীয় ঐক্য গঠন করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং তার চেতনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তাই, এ ধরনের সংলাপের প্রকৃত অর্থ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে—এই ঐক্য কি সত্যিই জাতীয়, ঐক্যমতের নাকি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা।
মন্তব্য করুন