২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়, এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার যে স্বপ্ন জাতি লালন করছিল, তা এখন এক প্রকার দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় অদক্ষতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে।
প্রত্যেক সেক্টরে বিশৃঙ্খলা এবং পরিচালনায় দুর্বলতার ফলে মানুষের আয় কমেছে, অথচ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন দরিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। এক সময় সরকারী সহায়তায় নতুন শিল্পাঞ্চল ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটছিল, যা দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এনেছিল। সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার বাড়ছিল এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা বিপরীত চিত্র দেখতে পাচ্ছি। এখন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ধের তালিকা ক্রমাগত বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে? রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্র পরিচালনায় অদক্ষ ও অরাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা এই পতনের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্বের অভাবে দেশের বিভিন্ন খাত এখন অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে শ্রম খাতের সংকট, বিনিয়োগের অভাব, এবং সরকারের কার্যকর নীতি প্রণয়নে ব্যর্থতা মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো, যা অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করত, সেগুলোর অবস্থাও এখন শোচনীয়।
দেশের এই অর্থনৈতিক পতনের পেছনে শুধু অদক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বই নয়, বরং সুশাসনের অভাবও দায়ী। সময় এসেছে যে, নেতৃত্বে দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং দায়িত্বশীলতার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে, দেশ ও জাতির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা, আমাদের উন্নত দেশের স্বপ্ন একটি ব্যর্থ গল্পে পরিণত হতে পারে।
বাংলাদেশ একসময় অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল, বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। শক্তিশালী অর্থনীতির প্রতিশ্রুতি দেয়া বাংলাদেশ এখন ক্রমশ ভঙ্গুরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার, রফতানি বাণিজ্যে ঘাটতি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা উদ্বেগজনক।
মূল সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আইস-শৃঙ্খলার অবনতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং রিজার্ভের সংকট।
তেল, গ্যাস, ও খাদ্যদ্রব্যের মতো আমদানিজাত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, এবং টাকার মানের অবনমন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে।
এছাড়া, সরকারিঅধিকাংশ প্রকল্প বন্ধ কর্মসংস্থানের ঘাটতি এবং উৎপাদন খাতে অসঙ্গতি যোগ করেছে আরও একটি গুরুতর সমস্যা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির লাগাম টানার এখনই সময়। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
তবে বর্তমান সরকার দিয়ে এই সংকট উত্তরণ কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সরকার প্রণীত নীতি ও কর্মসূচিগুলো প্রয়োজনীয় হলেও, তাদের সঠিক বাস্তবায়ন এবং কার্যকারিতা অনিশ্চিত থেকে যাচ্ছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। একদিকে অপর্যাপ্ত বেসরকারি বিনিয়োগ, অন্যদিকে দুর্নীতি, বৈদেশিক ঋণের বোঝা এবং মুদ্রার সংকট দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দেশের সাধারণ জনগণকেও উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই হবে না, তার কার্যকর বাস্তবায়ন ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব হলে সামগ্রিক অর্থনীতির অগ্রগতি থেমে যাবে।
মন্তব্য করুন