সোনালী লাইফের ৩৫৩ কোটি তছরুপ, কুদ্দুসের পকেটেই ১৮৪ কোটি টাকা
দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল থেকে ৩৫৩ কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে। কোম্পানিটির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও পেটিক্যাশ থেকে সরানো হয়েছে এসব অর্থ। আবার জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী লাইফের টাকায়ই কোম্পানিটির শেয়ারের মালিক হয়েছেন ১০ পরিচালক।
এমন তথ্য উঠে এসেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরিদর্শন প্রতিবেদনে। অর্থ তছরুপের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ।
এ বিষয়ে নেওয়া ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কেও সংস্থাটিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। বিএফআইইউর যুগ্ম-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি গত ২২ সেপ্টেম্বর আইডিআরএকে পাঠানো হয়।
সোনালী লাইফের ভাউচার, ইআরপি সফটওয়্যারের তথ্য, ব্যাংক, ফাইন্যান্স কোম্পানি, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটিজ হাউজ ও গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান (ব্যাংকের মাধ্যমে) থেকে সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে তহবিল তছরুপ সংক্রান্ত এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, সোনালী লাইফের ৩৫৩ কোটি টাকা তছরুপের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ আট পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও অন্য দুই কর্মকর্তা। এছাড়া কোম্পানিটির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার এক ভাই ও ফুপুর নাম উঠে এসেছে তহবিল তছরুপে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায়।
মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসে পকেটে ১৮৪ কোটি টাকা, সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিয়মবহির্ভূতভাবে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে নিয়েছেন ১৮৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভবন বিক্রির নামে নিয়েছেন ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাকি ৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা তিনি নিয়েছেন নিজের ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে। এই টাকা তিনি নেন ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালে। সোনালী লাইফের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও পেটিক্যাশ থেকে এসব অর্থ নিয়েছেন বলে বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বিএফআইইউর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবন বিক্রির নামে ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা নিলেও এই ভবন কেনার বিষয়ে সোনালী লাইফের বোর্ডসভার কোনো অনুমোদন নেই। অনুমোদন নেই বিমা খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআর এর। এছাড়া ভবনটি ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে যমুনা ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখায় বন্ধক রাখা।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ভবন বিক্রির নামে নেওয়া এই ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা থেকে জনতা ব্যাংকে সিডি অ্যাক্রিলিক বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২৭ কোটি টাকা। ড্রাগন সোয়েটারের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২৩ কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন