সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠে আসছে। এর মধ্যে সোনালী ও রূপালী লাইফ ইনসুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ তসরুফের অভিযোগ সবচেয়ে আলোচিত। নানা সূত্র বলছে, কুদ্দুস যেকোনো সময় দেশত্যাগ করতে পারেন, কারণ তার বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
অভিযোগ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কুমিল্লা অঞ্চলের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অবৈধ আয়ের একটি বড় অংশ কুদ্দুস তার পরিচালিত সোনালী ও রূপালী লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন এবং সেই অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তার ড্রাগন সুয়েটার কোম্পানির আড়ালে বিদেশে পাচার করেছেন। এতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, কুদ্দুস তার রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন।
বিশেষ করে, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের স্ত্রীর সোনালী লাইফ ইনসুরেন্সে পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত থাকা এবং কুদ্দুসের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই দুর্নীতির আরও জটিলতা তৈরি করেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মুজিবুল হকের অবৈধ অর্থের একটি বড় অংশও সোনালী লাইফ ইনসুরেন্সে বিনিয়োগ হয়েছে। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপব্যবহার ও জনগণের বিশ্বাসের প্রতি সরাসরি আঘাত।
এই ধরনের অভিযোগ শুধু মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর একটি গুরুতর সংকেত। সুশাসনের অভাব এবং রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহার দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা এই ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত। এভাবে দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে অনৈতিক কাজের মাধ্যমে শুধু অর্থনৈতিক অপচয়ই হয় না, বরং জনগণের উপর আস্থা এবং দেশের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুধু সোনালী লাইফ ইনসুরেন্স থেকেই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ৩৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকারও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় গভীর সংকটের প্রতীক। যদি কুদ্দুস দেশত্যাগ করেন, তাহলে জনগণের সম্পদ ফেরত পাওয়া কি সম্ভব হবে? এ প্রশ্ন এখন সময়ের আলোচিত বিষয়।
দুর্নীতির এই ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের অনিয়ম চলতে থাকবে এবং জনগণের আস্থা ক্রমশই কমে যাবে।
মন্তব্য করুন