ক্রাইম ওয়াচ নিউজ : অর্থনীতি ডেস্ক :
২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

দেশের উন্নয়নে ব্যাংক খাতের সংস্কার প্রসংগে; -সৈয়দা রাশিদা বারী

ব্যাংক খাত বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত। এটি অর্থলগ্নি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সাম্প্রতিক বিশ্বে চলমান ধারায় ব্যাংক খাতকে নিয়ে রয়েছে নানামুখী আলোচনা, সমালোচনা ও গুজব। এদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারে এই ব্যাংক ব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে, যেটা কিনা সরকার তান্ত্রিক রাজনীতি ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। এর থেকে পরিত্রাণ বা উত্তোরণ পেতে নিমোক্ত ব্যবস্থাপনায় সংশোধন সংস্কার অত্যন্ত জরুরী বলে সুশীল সমাজ মনে করে।

 

 

ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতিমুক্ত ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিক কোনরূপ প্রভাব এখানে তাদের তদবীরের ক্ষমতা খর্ব করতে হবে। রাজনীতিকদের তদবীরের কারণে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা অর্থ লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের দুর্নীতি হয়। অযোগ্য ব্যক্তিকে ভুয়া লোন ধার্য্য করা হয়। এসব ব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। অযোগ্য ব্যক্তিকে তদবীরের মাধ্যমে ব্যাংকারদের প্রমোশন ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে।

সেই আমরা দেখেছি ব্যাংক ঋণ হলমার্ক কেলেংকারী, রেজা গ্রুপের ব্যাংক লুট, এস আলমের দাপুটে ব্যাংক ঋণ, সালমান এফ রহমানের ব্যাংক দখল ইত্যাদি। অচিরেই আইনী আওতায় এসব রাঘব বোয়ালদের বিচার এর কাঠগড়ায় দঁাড় করিয়ে সমুদয় পাচারকারী অর্থ ফিরিয়ে এনে ব্যাংক ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তুলতে হবে।

 

 

সম্প্রতি প্রথম আলোর এক গোল টেবিল বৈঠকে ব্যাংক সংক্রান্ত এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বিশিষ্ঠজনরা নিম্নরূপ মতামত তুলে থরেন:

বাংলাদেশ ব্যাংক এর সুযোগ্য গভর্ণর আহসান এইচ মনসুর এর মতে, ব্যাংক খাত সংস্কার এর আগে ব্যাংক খাত এর জন্য কমিশন গঠন জরুরী বলে মনে করেন। কিন্তু সময় সাপেক্ষ বিধায় তিনি টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা চিন্তা করেন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সংস্কার হবে। সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় নীতি বাদ দেওয়া হবে বলে তিনি মনে করেন। এ প্রেক্ষিতে সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সমস্যা হলে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে ১০-১১ টি ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব ব্যাংকের নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে। তিনি বলেন দেশের যেন শ্রীলংকার মতো অবস্থা না হয় সেদিকে আমরা যথেষ্ঠ সজাগ আছি এবং এভাবেই কাজ করছি।

 

 

এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, সেগুলো ঠিক আছে। তবে মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি শিল্পের সুরক্ষা লাগবে। এমনভাবে মুদ্রানীতি করতে হবে, যাতে শিল্প বঁাচে, ভবিষ্যতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হয়। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করেছেন। এখন ব্যাংকঋণের সুদ সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। সুদের হার আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা কীভাবে ঋণের অর্থ পরিশোধ করবেন, সেটি ভাবা উচিত ছিল। অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার কমানো হয়েছে।

ফলে রপ্তানি মারাত্মকভাবে কমতে পারে। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি ২০০ কোটি ডলার কমেছে। বাংলাদেশের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ৫ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ভারতের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ও ইইউতে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। বৈশ্বিক রপ্তানি কমেছে গড়ে ৫ শতাংশ। তার মানে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ভারতের পঁাচটি রাজ্যে কেউ বিনিয়োগ করলে জমি ক্রয়, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ও শ্রমিকদের বেতনের একটি অংশ সরকার দিচ্ছে। কর অবকাশ সুবিধাও আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ যখন এসব সুবিধা দিচ্ছে, তখন আমাদের দেশে সুদের হার বাড়ছে। ইডিএফ সুবিধা কমানো হচ্ছে। তাহলে আমরা কীভাবে বিনিয়োগ ধরে রাখব?

বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সুরক্ষা লাগবে। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে পোশাক শিল্পের। যেমন: তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হচ্ছে। বিনিময়ে দশমিক ৩ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। তাই এই শিল্প বঁাচাতে বরং ১ শতাংশ উৎসে কর কর্তন বন্ধ করুন। অন্যদিকে ভর্তুকি দেওয়ারও কোনো দরকার নেই। তাহলে অন্তত রপ্তানিকারকেরা স্বস্তি পাবেন। আর ইডিএফ সুবিধা চালু রাখা দরকার। যাতে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে রপ্তানিকারকেরা সমস্যায় না পড়েন। চলতি বছর ২৭০টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রম অসন্তোষ চলছে। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেখেন আরও কত কারখানা বন্ধ হয়, কত শ্রমিক বেকার হয়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিইট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর আধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব এর ভাষ্য মতে, ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই; কোথায় সংস্কার করা প্রয়োজন, তা আমরা সবাই জানি। সবার আগে সুশাসনের বিষয়ে কাজ করতে হবে। যেমন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) কথা বলা যায়। তারা ব্যাংক নাকি ঋণগ্রহীতাদের প্রতিনিধিত্ব করবে, এ বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা বললে পুরো আর্থিক খাতের মানচিত্রকে সামনে রাখতে হবে। শুধু ব্যাংক সংস্কার করতে চাইলে, তা টেকসই হবে না। ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের উৎস কী, তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে নেওয়া নীতিগুলো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যাওয়া উচিত। তবে আমরা দেখেছি, এসব নীতি ব্যাংকের পক্ষে গেছে।

খেলাপি ঋণ বা এনপিএলের বিষয়ে বলব, যেটা শরীরের অঙ্গ, সেটা খারাপ না। পৃথিবীর এমন কোনো ব্যাংক নেই, যেখানে এনপিএল নেই। তবে ইচ্ছাকৃত খেলাপি খারাপ। যারা অনিচ্ছাকৃত খেলাপি, বিপদগুস্থ হয়েছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে। তাদের সহায়তা করা প্রয়োজন আর যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি, তাদের শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। খেলাপি ঋণের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। অথচ এটি চোখের আড়ালে থেকে যায়। কারণ, এ ধরনের বাণিজ্যের সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সংগ্রহ করে না। দেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র (এলসি) বড় অবদান রেখেছে। তবে এটিও ঠিক, আজকের পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যতটা জালিয়াতি হয়, তার ৭০-৮০ শতাংশ হয় ব্যাক-টু- ব্যাক এলসির মাধ্যমে। অর্থ পাচারও হয়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জায়গায় বলব, টেকসই ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) বড় অবদান রয়েছে। এসএমইদের সেবা দেওয়ার জন্য ব্যাংকে পৃথক ডেস্ক তৈরি করেছে; কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সহায়তা করার জন্য তেমন কোনো সুবিধা নেই।

হঁ্যা উপরোক্ত বিষয়গুলোকে পর্যালোচনা ভিত্তিক বিবেচনা করে ব্যাংক ব্যবস্থাকে পুনরায় তরান্বিত করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। সত্যিকার অর্থে গামেন্টস্ শিল্প কারখানাকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যাপক ব্যবস্থাপনা হবে। ব্যাংক কমিশন/টাস্কফোর্স গঠনে ডিজিটাল ভিত্তিক ওয়ার্কওয়ে তৈরি করতে হবে। যাতে করে যেই হোক না, কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংক এর অর্থ লুট করে বিদেশে স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলতে না পারে।

সর্বোপরি সর্বজন স্বীকৃত এসব সংস্কার ও সংশোধন ব্যবস্ খাত বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত। এটি অর্থলগ্নি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সাম্প্রতিক বিশ্বে চলমান ধারায় ব্যাংক খাতকে নিয়ে রয়েছে নানামুখী আলোচনা, সমালোচনা ও গুজব। এদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারে এই ব্যাংক ব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে, যেটা কিনা সরকার তান্ত্রিক রাজনীতি ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। এর থেকে পরিত্রাণ বা উত্তোরণ পেতে নিমোক্ত ব্যবস্থাপনায় সংশোধন সংস্কার অত্যন্ত জরুরী বলে সুশীল সমাজ মনে করে।

ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতিমুক্ত ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিক কোনরূপ প্রভাব এখানে তাদের তদবীরের ক্ষমতা খর্ব করতে হবে। রাজনীতিকদের তদবীরের কারণে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা অর্থ লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের দুর্নীতি হয়। অযোগ্য ব্যক্তিকে ভুয়া লোন ধার্য্য করা হয়। এসব ব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। অযোগ্য ব্যক্তিকে তদবীরের মাধ্যমে ব্যাংকারদের প্রমোশন ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে।

সেই আমরা দেখেছি ব্যাংক ঋণ হলমার্ক কেলেংকারী, রেজা গ্রুপের ব্যাংক লুট, এস আলমের দাপুটে ব্যাংক ঋণ, সালমান এফ রহমানের ব্যাংক দখল ইত্যাদি। অচিরেই আইনী আওতায় এসব রাঘব বোয়ালদের বিচার এর কাঠগড়ায় দঁাড় করিয়ে সমুদয় পাচারকারী অর্থ ফিরিয়ে এনে ব্যাংক ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তুলতে হবে।

সম্প্রতি প্রথম আলোর এক গোল টেবিল বৈঠকে ব্যাংক সংক্রান্ত এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বিশিষ্ঠজনরা নিম্নরূপ মতামত তুলে থরেন:

বাংলাদেশ ব্যাংক এর সুযোগ্য গভর্ণর আহসান এইচ মনসুর এর মতে, ব্যাংক খাত সংস্কার এর আগে ব্যাংক খাত এর জন্য কমিশন গঠন জরুরী বলে মনে করেন। কিন্তু সময় সাপেক্ষ বিধায় তিনি টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা চিন্তা করেন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সংস্কার হবে। সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় নীতি বাদ দেওয়া হবে বলে তিনি মনে করেন। এ প্রেক্ষিতে সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সমস্যা হলে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে ১০-১১ টি ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব ব্যাংকের নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে। তিনি বলেন দেশের যেন শ্রীলংকার মতো অবস্থা না হয় সেদিকে আমরা যথেষ্ঠ সজাগ আছি এবং এভাবেই কাজ করছি।

এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, সেগুলো ঠিক আছে। তবে মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি শিল্পের সুরক্ষা লাগবে। এমনভাবে মুদ্রানীতি করতে হবে, যাতে শিল্প বঁাচে, ভবিষ্যতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হয়। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করেছেন। এখন ব্যাংকঋণের সুদ সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। সুদের হার আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা কীভাবে ঋণের অর্থ পরিশোধ করবেন, সেটি ভাবা উচিত ছিল। অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার কমানো হয়েছে।

ফলে রপ্তানি মারাত্মকভাবে কমতে পারে। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি ২০০ কোটি ডলার কমেছে। বাংলাদেশের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ৫ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ভারতের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ও ইইউতে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। বৈশ্বিক রপ্তানি কমেছে গড়ে ৫ শতাংশ। তার মানে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ভারতের পঁাচটি রাজ্যে কেউ বিনিয়োগ করলে জমি ক্রয়, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ও শ্রমিকদের বেতনের একটি অংশ সরকার দিচ্ছে। কর অবকাশ সুবিধাও আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ যখন এসব সুবিধা দিচ্ছে, তখন আমাদের দেশে সুদের হার বাড়ছে। ইডিএফ সুবিধা কমানো হচ্ছে। তাহলে আমরা কীভাবে বিনিয়োগ ধরে রাখব?

বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সুরক্ষা লাগবে। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে পোশাক শিল্পের। যেমন: তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হচ্ছে। বিনিময়ে দশমিক ৩ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। তাই এই শিল্প বঁাচাতে বরং ১ শতাংশ উৎসে কর কর্তন বন্ধ করুন। অন্যদিকে ভর্তুকি দেওয়ারও কোনো দরকার নেই। তাহলে অন্তত রপ্তানিকারকেরা স্বস্তি পাবেন। আর ইডিএফ সুবিধা চালু রাখা দরকার। যাতে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে রপ্তানিকারকেরা সমস্যায় না পড়েন। চলতি বছর ২৭০টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রম অসন্তোষ চলছে। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেখেন আরও কত কারখানা বন্ধ হয়, কত শ্রমিক বেকার হয়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিইট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর আধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব এর ভাষ্য মতে, ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই; কোথায় সংস্কার করা প্রয়োজন, তা আমরা সবাই জানি। সবার আগে সুশাসনের বিষয়ে কাজ করতে হবে। যেমন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) কথা বলা যায়। তারা ব্যাংক নাকি ঋণগ্রহীতাদের প্রতিনিধিত্ব করবে, এ বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা বললে পুরো আর্থিক খাতের মানচিত্রকে সামনে রাখতে হবে। শুধু ব্যাংক সংস্কার করতে চাইলে, তা টেকসই হবে না। ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের উৎস কী, তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে নেওয়া নীতিগুলো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যাওয়া উচিত। তবে আমরা দেখেছি, এসব নীতি ব্যাংকের পক্ষে গেছে।

 

 

খেলাপি ঋণ বা এনপিএলের বিষয়ে বলব, যেটা শরীরের অঙ্গ, সেটা খারাপ না। পৃথিবীর এমন কোনো ব্যাংক নেই, যেখানে এনপিএল নেই। তবে ইচ্ছাকৃত খেলাপি খারাপ। যারা অনিচ্ছাকৃত খেলাপি, বিপদগুস্থ হয়েছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে। তাদের সহায়তা করা প্রয়োজন আর যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি, তাদের শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। খেলাপি ঋণের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। অথচ এটি চোখের আড়ালে থেকে যায়। কারণ, এ ধরনের বাণিজ্যের সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সংগ্রহ করে না। দেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র (এলসি) বড় অবদান রেখেছে। তবে এটিও ঠিক, আজকের পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যতটা জালিয়াতি হয়, তার ৭০-৮০ শতাংশ হয় ব্যাক-টু- ব্যাক এলসির মাধ্যমে। অর্থ পাচারও হয়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জায়গায় বলব, টেকসই ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) বড় অবদান রয়েছে। এসএমইদের সেবা দেওয়ার জন্য ব্যাংকে পৃথক ডেস্ক তৈরি করেছে; কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সহায়তা করার জন্য তেমন কোনো সুবিধা নেই।

হঁ্যা উপরোক্ত বিষয়গুলোকে পর্যালোচনা ভিত্তিক বিবেচনা করে ব্যাংক ব্যবস্থাকে পুনরায় তরান্বিত করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। সত্যিকার অর্থে গামেন্টস্ শিল্প কারখানাকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যাপক ব্যবস্থাপনা হবে। ব্যাংক কমিশন/টাস্কফোর্স গঠনে ডিজিটাল ভিত্তিক ওয়ার্কওয়ে তৈরি করতে হবে। যাতে করে যেই হোক না, কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংক এর অর্থ লুট করে বিদেশে স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলতে না পারে।

সর্বোপরি সর্বজন স্বীকৃত এসব সংস্কার ও সংশোধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।

-সৈয়দা রাশিদা বারী
লেখক বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাইবান্ধায় ভুয়া প্রেসক্লাব খুলে কথিত সাংবাদিকরা হেনাস্তা করছে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ও ব্যবসায়ীদের

“আর দাবায়া রাখতে পারবা না” বাঙালির স্বাধীনতার চেতনার প্রতিফলন

শাহজাদপুরের মশীপুর তালগাছী মহাসড়কের বেহাল দশা, এ যেনো মরণ ফাদ

রুপালী ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে দুর্নীতির প্রতিযোগিতা: মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের প্রভাব

দেশের উন্নয়নে ব্যাংক খাতের সংস্কার প্রসংগে; -সৈয়দা রাশিদা বারী

রিসেট বাটনের চাপে বাংলাদেশ ওলটপালট ও ইতিহাসের দায়!

দশটি খাতে ইন্টেলিজেন্ট সল্যুশন ও ফ্ল্যাগশিপ পণ্য উন্মোচন করলো হুয়াওয়ে

সোনালী লাইফ ইনসুরেন্স থেকে অর্থ তসরুফে অভিযুক্ত মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের দেশত্যাগের চেষ্টা

আমরা কুঁড়ির বিশ্ব শিশু দিবস পালিত

শাহজাদপুরে মাদকদ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

১০

উল্লাপাড়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

১১

সোনালী লাইফের ৩৫৩ কোটি তছরুপ, কুদ্দুসের পকেটেই ১৮৪ কোটি টাকা

১২

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বন্ধ হইতে যাচ্ছে ইটখোলা: বেকার হযবে শতাধিক পরিবার “সরকার হারাবে রাজস্ব”

১৩

বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির লাগাম টানার এখনই সময়

১৪

নাশকতার মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দু নেতা গ্রেপ্তার

১৫

দুটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান সব সরকারের সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী ~মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস

১৬

শমসের মবিন চৌধুরী আটক

১৭

উল্লাপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

১৮

জৈষ্ঠ্য শিক্ষককে পাশ কাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিলেন কনিষ্ঠ শিক্ষক

১৯

আওয়ামী লীগের আর কোন ভবিষ্যত নেই ..অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন

২০