জাতীয় জীবনে কিছু কিছু মুহূর্ত চিরস্মরণীয় হয়ে ওঠে। তেমনি এক অমর প্রতিজ্ঞা হল “আর দাবায়া রাখতে পারবা না” – বাঙালি জাতির হৃদয়ে জ্বালানো চিরন্তন চেতনার অঙ্গীকার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ধাপই এ প্রতিজ্ঞাকে আরও গভীর ও মজবুত করেছে। সেই প্রতিজ্ঞা ছিল স্বাধীনতার জন্য, নিজেদের অধিকার ও স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। সময় বদলেছে, তবে এই চেতনা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
আজকের সমাজে যেভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, তাতে “জোর যার মুল্লুক তার” প্রবাদটি অনেক ক্ষেত্রেই সত্য বলে মনে হয়। তবে সত্যি কথা হল, এই ধরনের সাময়িক ক্ষমতার কোনো স্থায়িত্ব নেই। ক্ষমতার অপব্যবহারকারীরা নিজেদের অবস্থানকে চিরস্থায়ী ভাবলেও বাস্তবে তাদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। ইতিহাস দেখিয়েছে, ক্ষমতাসীনরা যখন দায়িত্বের বাইরে গিয়ে তাদের সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করে, তখন জনগণের প্রতিবাদেই তাদের পতন ঘটে।
এই পরিস্থিতিতে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরা যদি নিজেদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধতা মানতে না পারেন, তবে তা শুধু তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং জাতির জন্য একটি বড় বিপদ। দায়িত্বশীল নেতৃত্ব সবসময় মানুষের কল্যাণের দিকে মনোযোগ দেয়, যেখানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা সুবিধা প্রাধান্য পায় না। একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইচ্ছা যেমন গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি তা জাতির স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
বাঙালির এই ঐতিহাসিক চেতনা আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়। “আর দাবায়া রাখতে পারবা না” কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি একটি অঙ্গীকার – যে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার, আর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার।।
মন্তব্য করুন