উত্তরার স্থানীয় জনগণের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক এমপি হাবিব হাসানের ভাতিজা নাজমুল হাসান। বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, এবং চোরাচালানসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় জমি দখল ও সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন তিনি।
নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে, তার আরেক আত্মীয় আওয়ামীলীগ নেতা উত্তরা আজমপুর ছাত্রদের উপর গুলি চালায় পরবর্তীতে ছাত্রজনতার হাতে আহত হয়ে মারা যান। যা তাদের পরিবারকে জনসাধারণের কাছে আরো বেশি বিতর্কিত করে তুলেছে। ছাত্র আন্দোলনের এই আক্রমণের ঘটনায় তার নামে মামলা হলেও, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় ভূমি দখল এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়। অভিযোগ রয়েছে, উত্তরা রাজউক অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় তিনি সরকারি জমি দখল করে তাতে বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তুলেছেন এবং ভাড়া দিয়ে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। অল্প মূল্যে প্লট দখল করে অথবা জোরপূর্বক জমি দখল করে বর্তমানে কমপক্ষে ১৫টি প্লটের মালিকানা তার রয়েছে।
উত্তরা ও এয়ারপোর্ট এলাকার কিছু অবৈধ ব্যবসায়িক চক্রের সাথে নাজমুল হাসানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাকে এয়ারপোর্ট চোরাচালান সিন্ডিকেটের একজন প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যেখানে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ও অপরাধ চক্রের সমন্বয়ে এয়ারপোর্টে অবৈধ মালামাল আনার কাজেও সম্পৃক্ত ছিলেন। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম তাকে বিপুল সম্পদের মালিক বানিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাজমুল হাসানের অপরাধ কার্যক্রমের পেছনে ডিবি কর্মকর্তা হারুনের সহযোগিতা ও বিশেষ সম্পর্ক একটি বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ডিবি কর্মকর্তার সহযোগিতায় তিনি তার অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে তাকে গ্রেফতার করা কিংবা বিচারিক প্রক্রিয়ায় আনতে প্রশাসন বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে।
গত ৫ আগস্টে একটি বিশেষ পরিস্থিতির পর নাজমুল হাসান উত্তরা এলাকা ত্যাগ করেন বলে শোনা যায়, কিন্তু বর্তমানে তিনি আবারো এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সাধারণ মানুষের ধারণা, তাকে যদি গ্রেফতার করা যায় এবং যথাযথ তদন্ত চালানো হয়, তবে তার নানা অপকর্মের সত্যতা এবং সহযোগী চক্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।
নাজমুল হাসানের মতো প্রভাবশালী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানো ব্যক্তিদের কারণে উত্তরা এলাকায় সাধারণ মানুষ সর্বদাই আতঙ্কে বাস করছে। প্রশাসনের নিকট এসব ভূমি দস্যু এবং চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান স্থানীয়রা।
মন্তব্য করুন