আজকের সমাজে হুমকি-সংস্কৃতি যেন একটি দৈনন্দিন বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। মানুষ ভয় পাচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, আর কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তি নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে ত্রাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। সিন্ডিকেট, মাফিয়া, চাঁদাবাজি, কমিশন—এই সবের মধ্যে যে সংস্কৃতি আমরা দেখছি, তা এক গভীর নৈরাজ্যের দিকে সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি যেন আর কেবল কোনো বিশেষ গোষ্ঠী কিংবা পেশার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলছে।
‘তুই চিনস আমারে?’—এই বাক্যটির মধ্যে নিহিত আছে এক তীব্র ভয় ও চাপ প্রয়োগের কৌশল। যেকোনো ক্ষমতাবানের সামনে সাধারণ মানুষ যখন অসহায় হয়ে দাঁড়ায়, তখন তাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। হুমকি ও শাসানির এই সংস্কৃতির মূল লক্ষ্য হলো ভীতি প্রদর্শন, যাতে মানুষ সহজেই নত হতে বাধ্য হয়।
বিচারের প্রহসন, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, আর দুর্নীতির চক্র যখন ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তখন৭ মানুষ অপরাধকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য বলে ভাবতে শুরু করে। রাজনীতি, আমলা, পুলিশ, চিকিৎসক, শিক্ষক থেকে শুরু করে লেখক, সাংবাদিক সকলেই যেন এর শিকার। যাঁরা কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাঁরা ভয়ের মাঝে থেকে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই হুমকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। যে সমাজে প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত উন্নয়ন, সৃজনশীলতা ও কল্যাণমূলক কাজে, সেখানে হুমকির প্রতিযোগিতা চালু থাকলে দেশের ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক হয়ে উঠবে। অপরাধীদের প্রশ্রয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, আর ভীতি প্রদর্শনের এই সংস্কৃতি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে সমাজের মূল্যবোধ, নীতি এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।
মন্তব্য করুন