ঠিকাদার রাস্তার কাজ অসমাপ্ত রেখেই পালিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছে শাহজাদপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের হাজারো মানুষ।এ অবস্থা চলছে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর। পৌর কতৃপক্ষ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।অসহায় হয়ে পরেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথর্ী সহ এলাকা ও এর আশপাশের হাজারো মানুষ।
খবর নিয়ে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হওয়া স্বত্তেও পৌরসভার পশ্চিমাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহালদশা। এই ওয়ার্ডের নলুয়া শামসুলের বাড়ী থেকে শাহজাহান মিয়ার বাড়ী পর্যন্ত প্রায় ২কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ না করে ঠিকাদার পালিয়ে যায়। দুগ্ধ সমৃদ্ধ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে রয়েছে বিপুল সংখ্যক গো-খামার। রয়েছে একাধিক দুগ্ধ সমিতি। এ রাস্তাটির পাশেই রয়েছে নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টিতে ৫ শাতাধিক ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করে। রাস্তাটির বেহাল অবস্থা হওয়ায় পায়ে হেটে পথ চলা ছাত্র ছাত্রীদের জন্যই অসুবিধা নয় এলাকার পথচারীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
নলুয়া প্রাথমিক দুগ্ধ সমিতির ম্যানেজার হারুন-অর-রশীদ জানান, তার এলাকায় শতাধিক গো-খামার রয়েছে। এছাড়া এই গো-খামারকে কেন্দ্র করে দুটি দুগ্ধ সমিতিও রয়েছে। এই সমিতির মাধ্যমে মিল্কভিটার দুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। রাস্তাটির বেহালদশা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অনেক কষ্ট করে তাদের মিল্ক ভিটায় দুধ পৌছাতে হচ্ছে। সময়মত মিল্কভিটায় দুধ দিতে না পারলে মিল্কভিটা দুধ নিতেও অনিহা প্রকাশ করে।এদিকে প্রাচীন বিদ্যাপিঠ নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুনন্নাহার জানান, তার স্কুলে যাতায়াতের জন্য একটি মাত্র পথ। রাস্তাটি ইট বিছানো ছিল। ঠিকাদার রাস্তাটি পাকা করতে এসে রাস্তার ইট সরিয়ে ফেলে। তখন থেকেই রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃস্টি হয়। বষার্ এলে গর্তে হাটুপানি জমে যায়। তখন বিদ্যালয়ে শিক্ষাথর্ীদের উপস্থিতি প্রায় অর্ধেক নেমে যায়। এত বষার্কালে তার বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার বিঘ্নঘটে।
শাহজাদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হারুন-অর-রশীদ জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইউজি ওয়ান ওয়ানপি-৩ প্রকল্পের(নগর পরিচালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প) অধীনে প্রায় তিন কোটি দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকায় নলুয়ার ওই রাস্তাটি নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। নাটোর জেলার ঠিকাদার মীর হাবিবুর আলম টেন্ডারের মাধ্যমে রাস্তাটি নির্মাণের জন্য কাজ পায়। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে রাস্তাটির সামান্য মাটির কাজ করে প্রায় ৩০লক্ষ টাকা বিল উত্তোলন করে ঠিকাদার পালিয়ে যায়। তখন থেকেই এরাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরায় এলাকাবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পরেছে।
শাহজাদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরু জানান, গত তিন বছর আগে শাহজাদপুর পৌরসভার নতুন মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদী নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ন এ রাস্তাটি নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা তাকলেও সেটি হয়নি। তিনি আরো বলেন আমি একটি মামলায় জেলে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন আব্দুল রাজ্জাক।এইসময় ঠিকাদার রাস্তার কাজের ৩০লক্ষ টাকা বিল তুলে নিয়ে সটকে পড়ে। তখন থেকই ঠিকাদার মীর হাবিবুর আলমকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাবাসীর অভিযোগ তৎকালিন মেয়র হালিমুল হক মিরুর আপন এক ভাই ঠিকাদারের সাথে রাস্তার ইট,বালি, রডও পাথরসহ নিমার্ণ সামগ্রি সরবরবাহ নিয়ে মতপার্থক্য সৃস্টি হলে কাজ ফেলে ঠিকাদার তার বকেয়া বিল ৩০লক্ষ টাকা তুলে চলে যায়।
এব্যাপারে শাহজাদপুর পৌরসভার দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হারুন-অর-রশীদ আরও জানান, তিনি এই পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে রাস্তাটি নির্মানের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। সিডিউলে কি ছিল তা আমার জানা নেই। তবে আমদানি করা পাথরের আরসিসি ঢালাই করে রাস্তাটি নির্মাণ করার কথা ছিল। তিনি আরও জানান, বর্তমান মেয়রের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। রাস্তাটির সর্বশেষ অবস্থা তিনি ভাল বলতে পারবেন। পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকতার্ উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইউজি ওয়ান ওয়ানপি-৩ প্রকল্পের(নগর পরিচালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প) অধীনে প্রায় তিন কোটি দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয় পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের নলুয়ার এ রাস্তাটি। রাস্তাটির সময়মত শেষ না হওয়ায় এ প্রকল্পের অর্থ ফেরত চলে যাওয়ায় রাস্তার কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। পরবর্তীতে অর্থ বরাদ্দ হলে রাস্তার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন