ফুল-ফল ও ফসলের ঋতু হেমন্তকে বিদায় জানিয়ে কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে প্রকৃতিতে আগমনী বার্তা জানান দিয়েছে রূপবৈচিত্রের ঋতু শীত।
সারদিনের তীব্র গরম শেষে গভীর রাত থেকে শুরু হচ্ছে হালকা হিমেল হাওয়া, সঙ্গে নামছে হালকা কুয়াশা। শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের ওপর ভোরের সূর্যের আলো হালকা লালচে রঙয়ের ঝিলিক দেখা দিচ্ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ঘাসের মাথায় যেন মুক্তোর মতো শিশির কণা জমে আছে। শীতকে ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের পিঠাপুলির দোকানগুলো।
গ্রাম অঞ্চলে একটু একটু করে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে, বইছে হিমেল হাওয়াও। সূর্যটাও দেখা দিচ্ছে খানিকটা দেরিতে।
বাজারে দেখা মিলছে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, মুলা, শীম, বাধাকপি, লাউসহ সুস্বাদু হরেক রকমের সবজি। গাছিরা যত্ন নিতে শুরু করেছে খেজুর গাছের। এ যেন শীতেরই উঁকি।
ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু হেমন্তের পরই আগমন ঘটে চিরন্তর সৌন্দর্য্যের ঋতু শীতের। শীতের সকালের রয়েছে অনন্য সৌন্দর্য ও মাধুর্য। শীতের সকাল মানেই এক অন্যরকম অনূভুতি।
শীত আসলেই ঝরে যায় বৃক্ষের পত্রপল্লব। প্রকৃতিতে নামে শুষ্কতা, রিক্ততা। এজন্যই কবি আহসান হাবীব শীতকে বলেছেন, বৈরাগ্যের ঋতু।
শীতকে মানিয়ে নিতে মানুষ খুঁজে নেয় গরম অনুভূতির নানা উপায়। গায়ে জড়িয়ে নেয় নানা রকম শীতবস্ত্র। শীতের দিনে গ্রামে গ্রামে হয় নানা মেলা। জনজীবনে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। ঘরে ঘরে পিঠা, পায়েস তৈরির ধুম পড়ে। শীতে পাওয়া যায় খেজুরের রস। শীতের সকালে রোদে বসে পিঠাপুলি খাওয়ার মজাই আলাদা। শীতকালে তাপমাত্রা নেমে আসে অন্যান্য ঋতুর চেয়ে একেবারে নিছে। সারাদিন এক ধরণের ঠান্ডা অনুভূত হয়। কোন কোন সময় সূর্যের দেখা মিলে না চার পাঁচদিন ধরে। রাতে শীত ঝেঁকে বসে। পৌষ আর মাঘ মাস নিয়ে শীতকাল হলেও শীত অগ্রাহায়ণ মাস থেকেই পড়তে শুরু করে। ইংরেজি নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে তীব্র হাঁডকাপানো শীত পড়ে আমাদের দেশে। মাঘ মাসের শীতের তীব্রতা বোঝাতে আমাদের দেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে “মাঘের শীতে, বাঘও কাঁপে”।
শীতের আশীর্বাদ হচ্ছে প্রকৃতিতে নানারকম ফসলের আগমন। শীতকালে শীম, কপি,পালংশাক, মূলাশাক, লাউ পাওয়া যায় বেশি পরিমাণে। শীতের শুরুতে বাংলাদেশের খাল বিল, হাওরে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা আসতে শুরু করে। ঝিলের পানিতে তাদের কলকাকলিতে প্রকৃতিতে এক অপরুপ দৃশ্যের দেখা মেলে। তবে শীত মানে যে শুধু আনন্দ আর সৌন্দর্য্যের উপভোগ তা নয়। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জীবনে শীত আসে অভিশাপ হয়ে। উপযুক্ত শীত বস্রের অভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে। তাই মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে আমাদেরকে তাদের কথাও ভাবতে হবে।
মন্তব্য করুন