সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাগরৌহা আবাদী মাঠে জলাবদ্ধতায় এবারে প্রায় ২৫০ বিঘা জমিতে সরিষা ফসলের আবাদ করা যাবে না বলে কৃষকেরা জানান । কৃষকেরা মাঠে গিয়ে জমিতে জমে থাকা পানি দেখছেন। আর ভাবছেন কতদিন নাগাদ জমির পানি শুকাতে পারে তার দিন গুনছেন। কৃষকরা জানান, এবারে তারা জমিতে সরিষা ফসলের আবাদ করতে পারবেন না। পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশন যদি করা যায় তাহলে হয়তো এ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হতে পারে।
উল্লাপাড়া উপজেলার নাগরৌহা , ভদ্রকোল , বাখুয়া , পংরৌহা এবং কয়ড়া ইউনিয়নের চড়ুইমুড়ী ও পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের ভেংড়ী গ্রামের কৃষকরা জানান স্বাভাবিক বর্ষা হলেই মৌজাগুলোর বেশীর ভাগ আবাদী জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি কচুয়া (বিল সূর্য) নদীর শাখা বুড়ির বিল নালা হয়ে মৌজাগুলোয় ঢোকে। সে পানিতে আবাদী জমি কম বেশী ডুবে যায়। তখন কিছু কিছু জমিতে বোনা আমন ধান ছাড়া ফসল থাকে না। প্রায় দুই যুগ আগে স্থানীয় চরপাড়া এলাকায় একজন ইট ভাটা মালিক নিজ উদ্যোগ ও টাকা খরচ করে ভেংড়ী মৌজায় কচুয়া নদী থেকে প্রায় ৫০০ ফুট দীর্ঘ একটি নালা খনন করেন। তিনি নিজ ইট ভাটা ব্যবসার সুবিধায় জমি ভাড়া (লিজ) নিয়ে নালাটি খনন করেন। সে থেকেই ভেংড়ী নালা হয়ে মৌজাগুলোর আবাদী মাঠের জমি থেকে অতি সহজেই পানি নিষ্কাশন হতো। আবার নালা হয়ে বন্যার পানি এলাকায় ঢুকতো। এছাড়া বুড়ির বিল নালা হয়ে বন্যার পানি ঢুকলেও বের হতে পারে না বলে এলাকার লোকজন জানান। প্রায় ৪ বছর আগে ভেংড়ী নালাটি জমির মালিক ভরাট করে ফেলেন। আর এতে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নাগরৌহা ও চরপাড়া এলাকার সুলফিগাড়ী মাঠে প্রায় ২৫০ বিঘা জমিতে বন্যার পানি জমে আছে। জমিগুলো বন্যার পানির জলজ আগাছায় ভরপুর হয়ে আছে। বন্যার পানি এবারে জমি থেকে সহজে শুকাচ্ছে না বলে জানা গেছে। আবাদী মাঠের উপরের জমিগুলোয় সরিষা ফসলের আবাদে আগাছা পরিস্কার করা হচ্ছে। এসব জমিতে সরিষা আবাদ নাবী করে হবে। প্রতিবেদককে কৃষক চান মিয়া , মোকাব্বর আলী , আ. কুদ্দুস , ছাইদুর রহমান ও আরো কয়েকজন জানান সুলফিগাড়ী খাপাল মাঠ বলে পরিচিত জমি থেকে যখন পানি শুকাবে তখন সরিষা ফসলের আবাদের সময় পেরিয়ে যাবে। একেবারে নাবী করে আবাদ করা হলে ফলন তেমন হবে না। আর জমিতে বোরো (ইরি) ধান ফসলের আবাদ পিছিয়ে যাবে। সব মিলিয়ে সরিষা ফসলের আবাদ করা সম্ভব হবে না। আগাম করে বোরো ধান আবাদ করা যাবে বলে জানান।
কৃষকদের অনেকেই বলেন কচুয়া নদী বন্যার পানি হলে বুড়ির বিল নালা হয়ে বন্যার পানি সহজেই নাগরৌহাসহ আরো কয়েকটি মৌজা এলাকায় ঢুকে পড়ে। তবে বুড়ির বিল নালা কয়েক জায়গায় প্রায় ভরাট হওয়ায় মাঠগুলো থেকে পানি আর বের হতে পারে না। নাগরৌহার সুলফিগাড়ী মাঠের জলাবদ্ধতা কাটাতে মাটির নীচে পাইপ বসিয়ে কচুয়া নদীতে পানি নিষ্কাশন করার বিষয়ে কৃষকদের মত মিলেছে। বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের উল্লাপাড়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহী আমিন বলেন, সরেজমিনে নাগরৌহা মাঠে গিয়ে সব দেখে মাঠের পানি সহজেই নিষ্কাশন ব্যবস্থায় দরকারী উদ্যোগ নেবেন। তিনি ভুগর্ভে (মাটির নীচে) পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেবেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী জানান জলাবদ্ধতায় সরিষা ফসলের আবাদ করা না গেলে জমির মালিক কৃষকদের লোকসান হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার বিষয় তিনি শুনেছেন। দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মন্তব্য করুন