সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) সাবেক সাংসদ মুহিবুর রহমানওরমা মানিক হিসাবে পরিচিত। তার সংসদীয় এলাকায় অবৈধ ভাবে বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন,সরকারি খাল দখল, পাহাড় কাটা, আবাদি জমির টপ সয়েল কাটা, চোরাচালন,নৌ-পথে চাদাবাজির সহ নানা অপকর্ম চালিযেছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু গায়ের জোরে এসব অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। সুরমা চেলা,মরা চেলা ও পিয়াইন নদী থেকে বোমা মেশিন দিয়ে রাতে আধারে যত্রতত্র অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ১৫ বছরে অন্তত ছোট-বড় শতাধিক টি পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। বন উজাড় করে সেখানকার গাছ কর্তন করছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ-স্থানীয় সংসদ-সদস্য (এমপি) মুহিবুর রহমান মানিক অনুসারীরাই এসব নৈরাজ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা কখনো সরাসরি সংসদ-সদস্যের নামে, কখনো বা তার নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম চালাচ্ছেন। যে কারণে সাধারণ মানুষ এসবের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করছেন না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আওয়ামীলীগের নেতা ফারুক মিয়া ও উপজেলা যুবলীগের লায়েক খুন হয়েছেণ। দুশতাধিক নিদোষ মানুষ হামলা মামলার ও হয়রানি শিকার হন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিককে (ওরফে বোমা মানিক) গ্রেপ্তার করা করেছে র্যাব ।মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি দল। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সুনামগঞ্জ সদরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে গত ২ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করেন আহত এক শিক্ষার্থীর ভাই হাফিজ আহমদ। এ মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সাবেক তিন এমপিসহ ৯৯ জনকে আসামি করেন।
এ মামলায় মুহিবুর রহমান মানিককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ছাত্র-জনতার আন্দোলন কর্মসূচিতে গিয়ে গত ৪ অগাস্ট গুলিবিদ্ধ হন জহুর আহমদ। এ ঘটনায় পরে মামলা করেন তার ভাই হাফিজ। তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের এরোয়াখাই গ্রামে। গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতায় মুহিবুর রহমান ওরফে বোমা মানিকও গ্রেপ্তার হয়েছে। বোমা মানিক গ্রেপ্তারের ঘটনায় জেলাজুড়েই সমালোচনার জড় বইছে।
অনুসন্ধান এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, উল্লিখিত অপকর্মের নেপথ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ-সদস্যে ও চাচাতো ভাই খুরমা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক বিল্লাল আহমদ,তার ভাতিজা তানভির আহমদ,আজিজুর রহমান,এবং পিএস মুশাহিদ আলী ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান,সাবেক ভাইন্সচেয়ারম্যান আবু সাহাদাত লাহিন,সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিপি বেগম, আওয়ামীলীগ আহবায়ক সৈয়দ আহম্মদ আউয়াল, আফতাব উদ্দিন,ইউপি চেয়ারম্যান ওদুদ আলম,সুন্দর আলী,আওলাদ মাষ্টার, আবু বক্কর,গয়াস আহমদ,আব্দুল খালিক ও আব্দুল হকসহ শতাধিক নেতাকমীরা কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন।
এছাড়া কোটি কোটি টাকার সরকারি বরাদ্দের বিলিবণ্টন, প্রকল্প বাস্তবায়নেও অনিয়ম-দুর্নীতির সীমা নেই। এসব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশ কাটিয়ে,জাপা বিএনপি-জামায়াত কিংবা লোকজনকে নিয়েই সাবেক সংসদ-সদস্য মুহিবুর রহমান কাজ করেন। যে কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগে রয়েছে চরম অসন্তোষ।
১৫ বছরে সংসদ-সদস্যের সঙ্গে মতবিরোধে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীকে হামলা-মামলার শিকার হতে হয়েছে নেতাকমীরা। দুটি উপজেলা আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকমীদের সঙ্গে এসব কারণে তার সৃষ্টি হয়েছে যোজন-যোজন দূরত্ব। তার রয়েছে শত শত একর জমি, জায়গা দখল করে মাছের খামার, পাজারো গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি ও দেশ বিদেশে বিশাল লেক মালেশিয়া,সিঙ্গাপুর,ডুবাই ওমান,লন্ডন বাসা এবং ভারতের রয়েছেন একাধিক বাগান বাড়ি মালিক এমপি মানিক। একসময় যার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা ছিল, তিনি হয়ে ওঠেন রাজকীয় জীবনের অধিকারী। ‘আলাদিনের চেরাগ পাওয়া’ এই ব্যক্তির নাম হচ্ছেন মুহিবুর রহমান মানিক। তিনি সুনামগঞ্জ ৫ আসনে (ছাতক-দোয়ারাবাজার)সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বোমা মানিক পাহাড় সমান সম্পদ ফেলে আত্মগোপনে ছিলেন দীর্ঘদিন। স্থানীয় সাবেক পকিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নাানের ওপর ভর করেই অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে এসব সম্পদ গড়েছেন এমপি মানিক। তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাট, টেন্ডারবাজি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, শতাধিক গায়েবি সড়কের টেন্ডার দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি এবং অর্থের বিনিময়ে বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যদের দলে অনুপ্রবেশ করানোর অভিযোগও রয়েছে। তার এসব অপকর্মের বৈধতা দিতে উপর মহলকে ম্যানেজ এবং রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় সরকারি রাজত্ব ফাকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা মাদক,চিনি ও ইয়ারা ও হুন্তি ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন তার ভাই মিজানুর রহমান হিরা নামে বিদেশে।
জানা যায়, উপজেলার উত্তর খুরমা ইউপির আমেরতল গ্রামের মৃত কদমদর আলীর ছেলে মুহিবুর রহমান মানিক গ্রামের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন মানিক। তিনি ১৯৯০ সালে ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়। ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্রী পার্টি বিলুপ্তির পর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যোগদান করেন। পরে মুজিবুর রহমান তার বড় ভাই ছাতক বাজার ফেরিওয়ালা হিসাবে খোলা কেরাসিন ব্যবসা করতেন। লেখা পড়ার পাশাপাশি থানার দালালি,আদম ব্যবসা করতেন মানিক।১৯৯০ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নিবাচিত হন। সেই সুবাদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন মানিক। এরপর তার পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ভাগ্য বদলে ফেলেন তিনি। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান ও বোমা মানিক থানার দালাল থেকে হয়েছেন একজন রাজনীতিবিদ। মুহিবুর রহমান মানিক প্রথমে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও পরে গণতন্ত্রী পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৯০ সালে ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়। ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্রী পার্টি বিলুপ্তির পর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যোগদান করেন।
তিনি ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন। এর পর ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরপর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঋণগ্রস্ত থাকলেও মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে তিনি হয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। তার বিত্ত-বৈভবের উত্থান দেখে মনে হবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি পেয়ে বসেছিলেন আলাদ্দীনের চেরাগ। রাজনীতিবিদ না হয়েও তিনি রাজনীতির মাঠে হয়ে উঠেন মাফিয়া ডন। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদ কারীদের যেতে হয়েছে কারাগারে। এভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি তার নির্বাচনি এলাকা ছাতক -দোয়ারাবাজার,সিলেট,ঢাকাসহ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন, আবাদী জমি, বিভিন্ন ধরনের বাগান, ফ্ল্যাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আর এসব করে জমিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। তার একাধিক ফ্ল্যাট বিদেশে রয়েছেন তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায়, তিনি ১৯৯০ সালে থানার দালাল থেকে ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আবির্ভূত হোন মুহিবুর রহমান মানিক। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জাতীয় পাটি সংসদ প্রাথী এডভোকেট আব্দুল মজিদ মাষ্টার সঙ্গে লড়াই করে পরাজিত হয়। মানুষের কাছে পরিচিতি পান উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে মুহিবুর রহমান মানিক।
এর পর ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্রী পার্টি বিলুপ্তির পর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যোগদান করেন ।সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি। বালু পাথর ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা করেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আয় বাড়ায় সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া মুহিবুর রহমান মানিকের। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ২ লাখ ৪১ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে ৬ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বার্ষিক আয় করতেন তিনি। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী বার্ষিক আয় ৫২ লাখ ৭০ হাজার ৮৬৬ টাকা। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে আয় বেড়েছে ২১ গুণেরও বেশি। এবার কৃষি খাত থেকে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা ও প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৮৩ টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া ৫ লক্ষ ১৩ হাজার ও প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয় ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫০ টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৬৭০ টাকা ও প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৪ হাজার ৮৬৮ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৮ টাকা, চাকরি, সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক ২৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৭ টাকা আয় উল্লেখ করেছেন। অনুরূপভাবে বেড়েছে অস্থাবর সম্পদও। ১৫ বছরে বেড়েছে ১৪ গুণেরও বেশি। শুধুমাত্র স্ত্রীর বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি। ২০০৮ সালে ১৮ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল এমপি মানিকের। এর মধ্যে নিজ নামে নগদ ১ লাখ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ২৫ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ২০ হাজার টাকা, নির্ভরশীলদের নামে পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২ লাখ টাকা, ১টি জিপ গাড়ি মূল্য ৭ লাখ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ৫০ তোলা স্বর্ণ ৪ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ৭৯ হাজার টাকা ও উপহার হিসেবে পাওয়া ১টি বন্দুক ও ১টি রিভলভার। ২০২৩ সালে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৯ টাকায়। এর মধ্যে আছে নিজ নামে নগদ ৫ লাখ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪৯২.৫৮ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ৩ লাখ ৬০ হাজার ১৭২.৪২ টাকা, পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের পরিমাণ ১ কোটি টাকা, জিপ গাড়ি একটি ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৯০ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে মোটর গাড়ি ১টি ৪০ লাখ ২৫ হাজার ৭৭৪ টাকা, ৫০ তোলা স্বর্ণ ৪ লাখ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর নামে ১৫ তোলা স্বর্ণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৫ লাখ ৬২ হাজার ২০০ টাকা, আসবাবপত্র ৭ লক্ষ টাকা। এছাড়াও বেড়েছে স্থাবর সম্পদের পরিমাণও। এবার দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিজ নামে কৃষি জমি ২.৫৫১৩ একর ১৪ লাখ ৯১ হাজার ১৯৭ টাকা ও ২.৪০ শতক উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। প্লট ৫ কাঠা জমি ১.২৪ শতক ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫১০ টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা ১টি ২৮ লাখ ২০ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়াও উত্তরাধিকার সূত্রে যৌথ মালিকানায় ১টি মন্ডলীভোগ ১টি আমেরতলে দালান বাসা।
এদিকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী স্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে ৮ কেদার কৃষি জমি, অকৃষি জমি ১৩ শতক, ১ লাখ ৬৫ হাজার, যৌথ মালিকানায় গৃহ, নিজ নামে ঢাকায় ৩ কাঠা জমি ২ কিস্তি বাবদ পরিশোধ ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, সম্পদশালী না হলেও গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি অবৈধ পন্থায় হয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে গড়েছেন বাড়ি, গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ ব্যাপক সম্পদ। তার উত্থান দেখে মানুষের ধারণা তিনি যেন পেয়েছিলেন আলাদ্দীনের চেরাগ। মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে তার নির্বাচনি এলাকা নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার হাতিয়ে নিয়েছে।নিয়োগের নামে ঘুস বাণিজ্য : উপজেলার সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের করে কয়েক কোটি টাকা নেন। অনুসন্ধানে জানা যায়,গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ শিক্ষক নিয়োগ,অবৈধ অধ্যক্ষ দিয়ে কোটি কোটি টাকা গাছ-গাছালি বিত্রিæ করে টাকা গুলো লুটপাটের ঘটনায় সুনামগঞ্জ আদালতে একাধিক মামলা ও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বালু মহাল,জলমহাল,হাওর,বিল,সুরমা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কোটি কোটি টাকা বালু ও পাথর লুটপাট করেছেন এমপির দলীয় নেতাকমীরা। লুটপাটকারীদের হাত থেকে বাদ যায়নি,ইস্কুল, ছাতক সরকারি, জাউয়াবাজার কলেজ গোবিন্দগঞ্জ কলেজ দাখিল মাদ্রাসা,লাকেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়সহ দেড় শতাধিক প্রতিষ্টানে এমপিও ভুক্ত নামে সিন্ডিকেট করে তিন শতাধিক শিক্ষক কর্মচারি,দপ্তরি ও আয়াসহ জনবল নিয়োগে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
উপজেলার যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষা কর্মকতা পুলিন চন্দ্র রামের মাধ্যমে এসব অনিয়ম করেন। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মনগড়া রেজাল্ট প্রকাশ করে পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দেন তিনি। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। ওই সময় প্রায় ২৫০ জন চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে জনপ্রতি ১৫-২০ লাখ টাকা উৎকোচ নেন। তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি সব টেন্ডার বাণিজ্য তার পক্ষে সামাল দিতেন ইউপি চেয়ারম্যান ও তার স্বজনরা। এতে নাম মাত্র টেন্ডার দেখিয়ে কাজ নিতেন দুনীতি শংকর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে। আর প্রকল্পের কাজ অর্ধেক সম্পন্ন করে, কখনো কাজ না করে, আবার কখনো বিনা টেন্ডারে কাজ করে টাকা উত্তোলন করতেন।
এছাড়া একই কাজের দুটি টেন্ডার দেখিয়েও ভুয়া বিলের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে নিতেন। থানার দালালি থেকে শুরু করে নিয়োগ ও টেন্ডার-বাণিজ্য, সরকারি বরাদ্দ লুট, জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে তিনি এসব সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ করেন দুই উপজেলাবাসীর। ১৫ বছরে ব্যবধানে শূন্য থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদে পাহাড় গড়েছেন। গত ২০১৯ সালে তার দুনীতি লুটপাটের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে অনুসন্ধান শুরু করলে ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তদন্তের আলো মুখ দেখেনি। তার বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখা, বিশেষ প্রকল্প,নামে বেনামে ভুয়া বিল জমা দিয়ে এলজিএসপি ইত্যাদি প্রকল্পের কাগজপত্র যাচাই-বাচাই পর সত্যতা রেরিয়ে আসলে ও এসব তদন্ত এখনো আলো মুখ দেখেনি। টিআর, কাবিখা, এলজিএসপি ইত্যাদি প্রকল্পের সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এমপি মানিক। তার বিরুদ্ধে বেশী দলীয় নেতাকমীরা ভাগ ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি কোটি টাকার অর্থ লুটপাট করেছেন। তার ভুয়া প্রকল্প হচ্ছে ধারণ বাজার থেকে আমেরতল রাস্তায় প্রতি বছর একাধিক প্রজেক্ট, মানিকগঞ্জ থেকে ফুরকাননগর, ছাতক-জাউয়াবাজার রাস্তা থেকে ডুবির ভাঙা, বৈঠাখালী, পলিরটুক রাস্তার ও এমপির বিশেষ বরাদ্দের চাল, গম উত্তোলন করে নামে-বেনামে লাখ লাখ টাকার প্রকল্প কাগজে আছে বাস্তবে নেই এসব প্রকল্পের হদিস রয়েছে।
এ ছাড়া ২০১১ ও ১২ সালে অর্থবছর ও ২০১৯ ও ২০ সালে অর্থ বছরে এমপির বিশেষ বরাদ্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফাইল আছে, কাজ না করে বরাদ্দের এসব টাকা এমপির নিদেশে উত্তোলন করে টাকা হজম করার অভিযোগ রয়েছে তার নেতাকমীদের বিরুদ্ধে।
মন্তব্য করুন