দায়িত্ব পালনে উপস্থিত না থেকেও বিনা হাজিরায় বেতন নেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়নের তারা বাড়িয়া নতুন পাড়া সোনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরী মো. শাহিন।
দপ্তরী শাহিনের হাজিরা খাতা প্রমান করে স্বাক্ষরহীন হাজির খাতা। । সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে দেখা যায় শাহিনের স্থলে তার ছোট ভাই পরিচয় দানকারী মো. শাহাদাৎ হোসেন নামের এক যুবক প্রক্সি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে। আরও জানা যায় দপ্তরী মো. শাহিনের এসব অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষকরাও ভয়ে কথা বলার সাহস পান না।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বেলা ১১টায় তারা বাড়িয়া নতুন পাড়া সোনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হক ও সহকারী শিক্ষক সাকলাইন দায়িত্ব পালন করছেন।
দপ্তরি কোথায় জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হক বলেন, একবার বাজারে গেছে, আবার বলেন, স্কুলের কাজে বাহিরে গেছে।
দপ্তরির হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে, তিনি বলেন খাতা শাহিনের কাছে আছে, কোথায় যে রেখেছে বলে বিভিন্ন অজুহাত দেখান। হাজিরা খাতা কোথায় রেখেছে শাহিন কে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে পরে প্রধান শিক্ষক হাজিরা খাতা বের করেন।
হাজিরা খাতায় দেখা যায়, দপ্তরি শাহিন সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে ৯ দিন স্বাক্ষর করেছেন এবং অক্টোবর মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত হাজিরা খাতায় কোনো স্বাক্ষর করেননি তিনি। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে দায়িত্ব পালন করেছেন মর্মে প্রতিবেদন দিয়ে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতন দিতে সুপারিশ করেছেন প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হক।
এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হক বলেন, স্বাক্ষর দেওয়ার নিয়ম ছিল, কিন্তু সে স্বাক্ষর দেয়নি। তিনি আরো বলেন হাজিরা খাতায় পুরো মাসের স্বাক্ষর এক দিনে করেন। তাকে স্বাক্ষর করতে বললেও প্রতিদিনের সাক্ষর প্রতিদিন করেন না।
স্বাক্ষর ছাড়াই পুরো বেতন দিতে সুপারিশ করার কারণ জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দপ্তরি তো শাহাদাৎ ভাই। তিনিই আমাদের ঘণ্টা বাজান, সব কাজ তিনিই করেন। নাহিদ ইসলাম সহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, শাহিন ভাই দপ্তরী কিন্তু সে আমাদের স্কুলে বেশি আসে না তার ছোট ভাই শাহাদাৎ বেশি আসে এবং স্কুলের ঘন্টা বেল বাজান, দরজা- জানালা সেই বন্ধ করেন।
বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অভিভাবক জানান, আমাদের ছেলে-মেয়ে যখন ভর্তি হইছে, তখন তো দেখছি, সব কাজ শাহাদৎ করেছে। শাহাদৎই তো স্কুলে দায়িত্ব পালন করে। শাহিন তো বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসা বাণিজ্য করে বেড়ায়। স্থানীরা আরে জানান, শাহিন মাঝে মাঝে স্কুলের দ্বায়িত্ব ফেলে বিনা ছুটিতে (মোবাইল ক্যাসিনো)’র কাজে ইন্ডিয়া চলে যান।
এ বিষয়ে শাহিনের ছোট ভাই পরিচয় দানকারী শাহাদাৎ জানান, আমার ভাই স্কুলে না আসলে আমি আসি। শাহিন ভাই অধিকাংশ সময় ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকে। রাতে পাহারার কাজে কে থাকে জানতে চাইলে শাহাদাৎ বলেন রাতে স্কুল পাহারায় আমরা কেউ থাকি না।
দপ্তরী শাহিন কেথায় আছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে শাহিন জানান, আমি জরুরী ব্যবসার কাজে শাহজাদপুর যাচ্ছি। কাজ শেষ হলে বিদ্যালয়ে ফিরে আসব।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২২ আগষ্ট উপজেলার তারা বাড়িয়া গ্রামের মৃত তোরাব আলী প্রামাণিক এর ছেলে মো. শাহিন, তারা বাড়িয়া নতুন পাড়া সোনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর শাহিনের ছোট ভাই শাহাদাৎ হোসেন বদলি (প্রক্সি) দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, শাহিনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ বলে শেষ করা যাবেনা। শাহিন অনেকের কাছে পরিচয় দিতেন সাবেক এমপির মামাতো ভাই, আবার কখনো পরিচয় দিতেন সলপ ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জি: শওকত ওসমানের পিএস হিসেবে। এমন ক্ষমতার দাপটে শাহিন শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচারণ করেন বলে অনেক শিক্ষক আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে। স্কুলে না এসে তার ছোট ভাই কে দিয়ে প্রক্সি দেন। সভাপতি আরো জানান, শাহিনের রয়েছে মোবাইল ক্যাসিনো জুয়া ব্যাবসার এজেন্ট। মোবাইল ক্যাসিনো জুয়ার এজেন্ট হওয়ায় সে ইন্ডিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মোবাইল ক্যাসিনো জুয়ার এজেন্ট পরিচালনা করে থাকেন। তার ভয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন কথা বলতে সাহস পায় না।
স্থানীয়রা জানান, শাহিন পেশায় বিদ্যালয়ের দপ্তরী হয়ে সে অনেক অর্থ- সম্পদের মালিক। সে তার গ্রামের বাড়িতে আলিশান বাড়ি করেছে। অনেক জমি ক্রয় করেছে। প্রতি বছর জমি ক্রয় করে আসছেন। শাহজাদপুর উপজেলা ও তালগাছী বাজারে তার অনেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে রয়েছে সুদের ব্যাবসা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামান্য বেতন ভুক্ত দপ্তরী হয়ে কিভাবে প্রচুর অর্থ সম্পদ করে আমাদের জানা নেই অথচ তার বাবা মৃত্যুর পূর্বেও বিভিন্ন লোকের কাছে ধার দেনা করে চলতেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হেসেন বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সঠিক তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে দপ্তরির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন