বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের উন্নয়নের গতি বাড়ছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু এই উন্নয়নের স্রোতে আমাদের তরুণদের ভূমিকা কতটুকু? একদিকে আমরা উন্নত ও আলোকিত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখি, অন্যদিকে দেশের কোটি কোটি তরুণ হতাশার গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত। এই বাস্তবতা আমাদের জন্য উদ্বেগের এবং সমাজের জন্যও একটি অশনি সংকেত।
তরুণদের হতাশার কারণ👥
তরুণরা একটি জাতির ভিত্তি এবং ভবিষ্যতের কারিগর। কিন্তু হতাশাজনক সত্য হলো, আমাদের দেশের অনেক তরুণ তাদের প্রতিভা ও সামর্থ্যের সঠিক মূল্যায়ন এবং প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছে না।
👉 বেকারত্ব: প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মসংস্থানের জন্য অপেক্ষায় থাকলেও তাদের অধিকাংশই কর্মসংস্থানের সঠিক সুযোগ পাচ্ছেন না। চাকরি খোঁজার প্রতিযোগিতা, যোগ্যতার চেয়েও রাজনৈতিক পরিচিতি, কিংবা সুপারিশ ভিত্তিক নিয়োগ, এই সমস্যাগুলো তরুণদের হতাশার অন্যতম কারণ।
👉 উন্নত শিক্ষার অভাব: অনেক তরুণ সঠিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না, বিশেষ করে গ্রামের এবং প্রান্তিক এলাকার শিক্ষার্থীরা। কর্মজীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের সুযোগ না পেয়ে তারা কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।
👉নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি: তরুণদের সৃজনশীলতা এবং স্বাধীন চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত না করার প্রবণতা আমাদের সমাজে অনেকটাই সাধারণ হয়ে উঠেছে। ফলে তাদের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়।
👉 অর্থনৈতিক সংকট: দেশের অধিকাংশ তরুণ আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবার থেকে আসছে। তারা শিক্ষা ও কর্মজীবনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বাধার মুখোমুখি হচ্ছে, যা তাদের আত্মবিশ্বাসকে হ্রাস করছে।
যদি আমরা সত্যিকার অর্থে একটি আলোকিত ও উন্নত সমাজ গড়তে চাই, তাহলে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান, মানসিক সমর্থন, এবং উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও সৃজনশীলতাকে বিকশিত করার জন্য শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যেন তারা কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে পারে এবং জাতীয় উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রথমত, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যাতে যুগোপযোগী এবং কর্মমুখী হয়, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার সঙ্গে দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণের সংযোগ ঘটাতে হবে।
দ্বিতীয়ত, কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার ও বেসরকারি খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো জরুরি, বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণপ্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত।
তৃতীয়ত, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যেন তারা হতাশা কাটিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের সঠিক প্রয়োগ করতে পারে।
আমাদের তরুণ সমাজ একটি সম্ভাবনাময় শক্তি। তাদের হতাশার অন্ধকারে ফেলে রেখে আমরা যে উন্নয়ন ও আলোকিত সমাজের স্বপ্ন দেখি, তা বাস্তবায়ন অসম্ভব। তাই এখনই সময় তরুণদের যথাযথ গুরুত্ব ও সুযোগ দেওয়ার, যেন তারা তাদের সম্ভাবনা পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারে। একটি আলোকিত, শক্তিশালী, এবং উন্নত জাতি গঠনের স্বার্থেই তরুণদের হতাশা দূরীকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন