মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিজ ফরিদা আখতার বলেছেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মাছকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিএফআরআই-কে রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরো জোরদার করতে হবে ।মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং সেই সাথে মাছের স্বাদ অক্ষুন্ন রেখে মৎস্য গবেষণা আরও বেগবান করতে হবে ।বাংলাদেশে মাছ যেমন সম্পদ তেমনি বিজ্ঞানীরা আমাদের দেশের বড় সম্পদ, মৎস্যজীবীরাও আমাদের সম্পদ।
আজ বিকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ এ সেচ ভবনে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) কর্তৃক আয়োজিত “বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি (২০২৩-২৪) পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন (২০২৪-২৫)” শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেছেন।
দেশের কোথায় কোথায় কোন ধরনের মাছ পাওয়া যায় বিএফআরআই-কে সেবিষয়ে গবেষণার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেছেন গবেষণা ভিত্তিক একটি মানচিত্র তৈরি করতে হবে। বিশেষকরে আগামী প্রজন্মকে মাছ সম্পর্কে জানার জন্য খুবই সহায়ক হবে। উপদেষ্টা আরও বলেছেন, বিএফআরআই তাদের জার্নাল পাঠক পর্যায়ে বোধগম্য করার জন্য ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতে প্রকাশ করতে পারে।
তিনি বলেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উন্নয়ন ও অগ্রগতি বা প্রাতিষ্ঠানিক ডাটা উপস্থাপন করা হয় তাতে আমরা মুগ্ধ নই। আমাদের দেখতে হবে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে চাচ্ছি তা পূরণ করতে পারছি কিনা-তা জানা দরকার। এক্ষেত্রে বিএফআরআই এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোন কাজ কতটুকু ভালোভাবে করতে পারছি-তার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেছেন আমরা মাছ রপ্তানি করতে চাই কিন্তু পরিবেশ বিপন্ন করে মাছ উজাড় করে রপ্তানি সম্ভব নয়।
উপদেষ্টা বলেছেন, বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার বর্জ্য নদ-নদীকে দূষিত করছে এর ফলে মাছে নানা ধরনের রোগ এমনকি মাছ মারা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফলে নোনা পানি মিঠা পানিতে মিশছে, নানা রকমের প্রতিকূল পরিবেশে মাছের কি ধরনের সমস্যা হচ্ছে এবং তা দূরীকরণে বিএফআরআই-কে গবেষণার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এ.টি.এম মোস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট হারিয়ে যাওয়া দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ ফিরিয়ে এনেছে। দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে আরও বেশি মাছ কিভাবে সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছানো যায় তা নিয়ে বিএফআরআই-কে গবেষণা করতে হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তৃতা করেছেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান। মৎস্য গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উক্ত কর্মশালায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের শতাধিক বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, মৎস্যচাষী ও জেলে প্রতিনিধি ও উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন পেশার শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, দিনব্যাপী এ কর্মশালায় চারটি কারিগরি অধিবেশনে মোট ৫১টি গবেষণা ফলাফল ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন, খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা ও ভ্যকসিন উদ্ভাবন, ইলিশ সম্পদসহ অন্যান্য মুক্ত জলাশয়ে মাছের সহনশীলতা ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, মজুদ নির্ধারণ এবং টেকসই আহরণ, সামুদ্রিক শৈবাল ও এর গুনাগুন, বিভিন্ন সামুদ্রিক ও উপকূলীয় মাছের উৎপাদন, আহরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রাপ্ত ফলাফল উক্ত কর্মশালায় উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণের জন্য বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ মতামতের আলোকে ভবিষ্যৎ করণীয় কি তা নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
মন্তব্য করুন